আমার ভাবনা থেকে

রহমান মৃধা | Feb 12, 2023 03:35 pm
আমার ভাবনা থেকে

আমার ভাবনা থেকে - ছবি : সংগ্রহ

 

আমি দেশের বাইরে থাকি, দেশের অনেক কিছু সম্পর্কে আমার সচেতনতা নেই। তাছাড়া সুইডেনে যেমন সবাই সরকারকে ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্সের একটি অংশ, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা কাজে ওই অর্থ ব্যয় করা হয়। স্কুল এবং কলেজশিক্ষার্থীরা যেমন বিনা খরচে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। আরো অনেক কাজে এই অর্থ ব্যয় করা হয়। এসব কিছু সম্ভব কারণ সবাই ট্যাক্স প্রদান করে। সুইডেনে যেমন যানবাহনের জন্য সকল স্কুল এবং কলেজশিক্ষার্থীদের মাসিক টিকিট স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে দেয়া হয়, যাতে তারা সময়মতো স্কুলে আসতে পারে, তবে শনি ও রোববারে এ সুযোগটা কিন্তু নেই। তখন তারা তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে চলাফেরা করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়গুলো কিছুটা অন্যরকম হয়েছে- দেশটা আজ অনেকাংশেই মগের মুল্লুক হয়ে গেছে, এ কথাটি সত্য। তবে সব বাধাবিঘ্নের মধ্যেও যে সরকার কর্তৃপক্ষ চমৎকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
তবে আমি কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই সেগুলো হলো-

১) বেশির ভাগ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী জনগণের ট্যাক্সের টাকার গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন কাজে। মূলত এসব গাড়ি শুধুমাত্র সরকারি কাজে ব্যবহৃত হবার কথা। কিন্তু, সেটা কি দেশে হচ্ছে? ভাবুন প্রতিদিন এসব কর্মচারী তাদের শপিং থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজে যে সংখ্যক সরকারি গাড়ি ব্যাবহার করেন এবং যে পরিমাণ সরকারের তেল এবং গাড়ির অপচয় করেন সেটা কি কখনো ভেবে দেখা হয়েছে?

সুইডেনে সংসদ সদস্যদের বা জনগণের প্রতিনিধিদের মূলত কোনো সরকারি গাড়ি দেয়া হয় না (ব্যতিক্রম প্রধানমন্ত্রী)। আমরা যারা সরকারি বা বেসরকারি কাজে গাড়ি পাই সেটা শুধুমাত্র কাজের জন্যই ব্যবহার করে থাকি। ছুটিতে বা উইকেন্ডে কখনো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি না, তখন আমরা আমাদের নিজ নিজ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে দেশের জনগণের অর্থের অপচয় করার কোনো সুযোগ থাকে না।

এখন ভাবুন দেশের অর্থ কী পরিমাণ দেশে কর্মরত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ব্যয় করছেন? যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারাই কিন্তু সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। কেউ কিন্তু এ বিষয়টি তুলে ধরছে না বা এটা নিয়ে কথা উঠছে না। কারণ কী?

একটি গরিব দেশে যখন তেল আনতে নুনের খবর থাকে না, সেখানে এ ধরনের বিলাসিতা তাও গরিবদের ঠকিয়ে? একটি সৃজনশীল শিক্ষিত সমাজে এটা করা কি ঠিক?

তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা যে বিবেকের কথা বলি বা শিক্ষার কথা বলি সেগুলোর সাথে সত্যিকারের সঠিক এবং সুশিক্ষার কোনো মিল নেই। যার ফলে দেশভরা অরাজকতার ঢেউ, সে ঢেউ এত ভয়ঙ্কর যে সাধারণ জনগণ কিছু বললে দিনে দুপুরে গুম হয়ে যাবে বিধায় চুপচাপ রয়েছে।

২) অন্যদিকে সমাজে যাদেরকে বেশি চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বা হচ্ছে শেষে তারাই সমাজ, দেশ, এমনকি গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সবাইকে অবাক বা হতভম্ভ করার উদ্দেশ্যে কি এমন একটি বিবৃতি দিয়ে লিখাটি শুরু করা? না, তবে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা মূলত লক্ষ্য। বর্তমানে বিশ্বে জনসংখ্যা ৮০০ কোটিরও বেশি। এর মধ্যে ইহুদির সংখ্যা কত হবে গোটা বিশ্বে? সব মিলে দুই কোটি, এর মধ্যে ৭০-৮০ লাখ মতো ইসরাইলে অবশিষ্ট প্রায় এক কোটি ইহুদি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। ইহুদিদের এই সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২ ভাগ, অর্থাৎ পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রতি ৫০০ জনে একজন ইহুদি। এই ০.২ ভাগ মানুষ বলতে গেলে সারা বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতিসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এটা কী করে সম্ভব? এটা যেমন একটি প্রশ্ন ঠিক বাংলাদেশের ১৭-১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১.৫- ২ কোটি মানুষ হিন্দু। সেই অনুপাতে খোঁজ নিয়ে দেখুন দেশের মোট কর্মসংস্থানের কত অংশ হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণে, তারপর দেখুন পুরো দেশের বড় বড় ক্ষমতার কত অংশ হিন্দুদের দখলে!

একইভাবে ভারতে যে সংখ্যক মুসলমান বাস করে তাদের সংখ্যাই বা কত? অথচ দায়িত্ব বা কর্তব্যের বড় বড় শীর্ষে দেখা যাচ্ছে অনেক প্রভাবশালী মুসলমান। আমার লিখা এখানেই শেষ করতে পারতাম। কিন্তু না , যে উদ্দেশ্যে ঘটনাটি তুলে ধরেছি, আমি সেটার ওপর আলোকপাত করব এখন। চাপ এবং তাপ দুটি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। আমরা অনেক সময় পরিবারের মধ্যেই দেখা যায়, যার লেখাপড়া কম তাকে চাপিয়ে রাখি, যদিও তার ক্ষেত্র বিশেষ অনেক গুণাগুণ রয়েছে। পরে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে সেই অবহেলিত, নির্যাতিত ভালেবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষটি অন্য সবার তুলনায় বেশি প্রতিষ্ঠিত ‘নট নেসেসারি’ যে শুধু আর্থিক দিক দিয়ে, অন্য বিষয়ের ওপর হতে পারে। মানুষ হয়ে মানুষকে ছোট করে দেখা বা এক ধর্মে বিশ্বাসী বিধায় অন্যের ধর্মের ওপর শ্রদ্ধা না দেখানো বা ঘৃণাত্মক মন মানুষিকতা বা চাপ সৃষ্টি করার কারণে এসব সংখ্যা লঘু গোষ্ঠী আজ পৃথিবীর নেতৃত্বে এতটুকু বলতে পারি। সমাজে যারা যত অহংকারী বা যারা দেমাক বেশি দেখায়, পতন কিন্তু তাদেরই ঘটে।

আমি বাংলাদেশে যে বিষয়টি লক্ষ্য করছি সেটা হলো দেশের ইউএনও, পুলিশের এএসপিসহ আরো না কর্মে যথেষ্ট কর্মী রয়েছে যারা সংখ্যালঘু জনসংখ্যার দিক দিয়ে যদি বিবেচনা করি, অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি, সেটা হলো তারা ছোটবেলা থেকেই সমাজের চাপে বড় হয়েছে। তাদের মনের ভেতর মোকাবিলা করার মতো শক্তি গড়ে উঠেছে। যার ফলে তারা সমাজের পরিকাঠামোর দায়ভার নিতে শুরু করেছে যেমনটি ইহুদিরা নিয়েছে। এটা যেমন একটি দিক আরেকটি দিক সেটা হলো জনগণের বাক-স্বাধীনতা বা অধিকার হরণ করার প্রচেষ্ট। পৃথিবীর অনেক দেশেই এযুগে জনগণের ক্ষমতাকে বরবাদ করে বা জুলুম করে তাদেরকে শাসন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা অস্ত্রধারী প্রশাসনকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। যার ফলে মানুষ দেশ প্রেমিক না হয়ে দেশদ্রোহী হচ্ছে, অনেকে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রিত হচ্ছে যা উদাহরণ সহ বলার দরকার আছে বলে আমি মনে করিনা।

৩) আমি অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে যে জিনিসটা বেশি লক্ষ্য করছি সেটা হলো, কোটি কোটি টাকার মালিক থাকলেও কেউ দারিদ্রতা মোচনে তেমন আগ্রহী নন, তবে আর্জেটিনার টিম আসবে বাংলাদেশে তার জন্য কোটি কোটি টাকা ঢালতে বা ঢোল ডাগর পেটাতে উদগ্রীব। এদিকে দেখা যাচ্ছে, একজন মেধাবী শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে পড়তে পারছে না বা একজন মুমূর্ষ রোগীর হার্ট ফুটোর চিকিৎসার অভাবে হয়ত দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কেউ তেমন কিছু করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যদি একটু সহানুভূতি বা মহানুভবতা না দেখায় তাহলে অনেক ফুল যে ঝরে পড়তে পারে সে খেয়াল নেই! বিষয়টি একজন বন্ধুর সাথে আলোচনা করতেই সে একটি যুক্তি দিয়ে আমাকে নিস্তব্ধ করে দিলো। বন্ধুর যুক্তিটা হলো, যারা দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করে তারা জানে ভালো কাজে সে অর্থ ব্যয় করলে নেকি হবে না, কারণ তাদের অর্থ হালাল না। তবে খারাপ কাজ বা যে কাজ সত্যি হাস্যকর যেমন আর্জেন্টিনার টিম বাংলাদেশে আসবে সেখানে টাকা ঢালা কোনো ব্যাপার না। আমার বলার কিছু ছিল না, তবে ভেবেছিলাম এ টাকাগুলো দিয়ে নিজের দেশে একটি ফুটবল টিম তৈরি করতে পারতাম।

শেষে এতটুকু বলতে চাই, সংখ্যায় কম হলেও কোনো সম্প্রদায় যদি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মিডিয়া, সামরিক প্রযুক্তি ইত্যাদিতে শীর্ষে থাকে তাহলে তাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ দোষের কিছু নয়, যদি নিয়ন্ত্রণ অনৈতিক, অবিচার, অমানবিক, ষড়যন্ত্রমূলক এবং বল প্রয়োগে না হয়। আগেই বলেছি যে এখনকার ইহুদিরা শিক্ষা-দীক্ষায়, গবেষণায়, প্রযুক্তি আবিষ্কার, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আছে। যাইহোক আমি কেন যেন নিজেই দিন দিন দুর্বল হয়ে সংখ্যালঘুদের দলেই চলে যেতে শুরু করছি, তবে পার্থক্য হলো আমি ইহুদি বা সংখ্যালঘুদের মতো ক্ষমতা বা প্রভাবশালী হতে পারছি না!
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার। বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার। হায়দার হোসেনের এ গানটি বাংলাদেশের সবার মনের কথা হওয়া উচিত।

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us