ইহুদি কারা, কেন তারা অভিশপ্ত?
ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু - ছবি সংগৃহীত
ইহুদিরা হজরত ইয়াকুব আ:-এর বংশধর। ইহুদি শব্দটি এসেছে ইয়াহুদা থেকে, যিনি ছিলেন হজরত ইয়াকুব আ:-এর জ্যেষ্ঠপুত্র। মূলত শব্দটি ছিল ইয়াহুজা। জালকে দাল দিয়ে পরিবর্তন করে আরবি করা হয়েছে। ইয়াহুদা শব্দের অর্থ তাওবাকারী। গো বৎসপূজা থেকে তাওবা করার কারণে তার নাম হয়েছে ইয়াহুজা। অর্থাৎ তাওবাকারী। (কুরতুবি প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা-৩৩৮) ইহুদিরা হজরত মুসা আ:কে নবী মানলেও তাঁর কোনো আদর্শ তাদের মধ্যে নেই। এমনটি তারা তাওরাত কিতাব কে বিকৃত করেছে এবং হজরত উজাইর আ:কে আল্লাহর পুত্র বলে মনে করে।
ইহুদিরা অভিশপ্ত হওয়ার কারণ
ইহুদিরা একটি অভিশপ্ত জাতি। কুরআন মজিদের বহু জায়গায় তাদের অপকর্মের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর ইহুদিরা বলে আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। এ কথা বলার জন্য তাদের প্রতি অভিসম্পাত।’ (সূরা আল মায়েদা-৬৪) আরো ইরশাদ করেন- ‘বনি ইসরাইলের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে দাউদ ও মরিয়ম তনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এটা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমালঙ্ঘন করত।’ (সূরা আল মায়েদা-৭৮)
১. নবীদের হত্যা
ইহুদিরা যুগে যুগে সব নবী-রাসূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে এবং হত্যাপ্রচেষ্টা করেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে- ইহুদিরা একদিনে ৩০০ জন নবীকে হত্যা করেছে (ইবনে কাসির প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০৯) আল্লাহর নবী-রাসূলদেরকে ইহুদি জাতি ছাড়া অন্য কোনো জাতি হত্যা করেনি। তারা হজরত জাকারিয়া ও তদীয়পুত্র হজরত ইয়াহিয়া আ:কে হত্যা করেছে এবং হজরত ইলিয়াস আ:কে হত্যার চেষ্টা করে। ইহুদিরা হজরত মরিয়ম আ:কে ব্যভিচারের অভিযোগ দিয়েছে এবং হজরত ইসা আ:কে হত্যা করার জন্য ‘তায়তালানুস’ নামক এক পাপিষ্ঠকে পাটিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেন। (মাজহারি) ইহুদিরা মহানবী সা:কে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে। মাহানবী সা:-এর সময় মদিনায় বহু ইহুদি গোত্র ছিল। যেমন- বনু নাজির বনু কাইনুকা, বনি আউফ, খুজা, আউজ, খাজরাজ ইত্যাদি। তিনবার তারা মহানবী সা:কে হত্যার চেষ্টা করে। শুধু নবী-রাসূল নয়, অসংখ্য নবী-রাসূলের অনুসারীকে তারা হত্যা করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে অস্বীকার করে এবং পয়গম্বরদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয়।’ (সূরা আল ইমরান-২১) আরো ইরশাদ করেন- ‘যখনই তাদের কাছে কোনো পয়গম্বর এমন নির্দেশ নিয়ে আসত যা তাদের মনে চাইত না, তখন তাদের অনেকের প্রতি তারা মিথ্যা আরোপ করত এবং অনেককে হত্যা করে ফেলত। (সূরা আল মায়েদা-৭১)
আরো ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ প্রদত্ত ও মানব প্রদত্ত মাধ্যম ব্যতীত তারা যেখানে যাবে সেখানেই তাদের (ইহুদিদের) জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকবে। আর তারা উপার্জন করেছে আল্লাহর গজব। তাদের ওপর চাপানো হয়েছে গলগ্রহতা। তা এ জন্য যে, তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অনবরত অস্বীকার করেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। তার কারণ, তারা নাফরমানি করেছে এবং সীমালঙ্ঘন করেছে।’ (সূরা আল ইমরান-১১২) আরো ইরশাদ করেন- ‘আর তাদের (ইহুদিদের) ওপর আরোপ করা হয়েছে লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি-বিধান মানত না এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান-সীমালঙ্ঘনকারী।’ (সূরা আল-বাকারা-৬১)
২. আল্লাহর নিদর্শনাবলি অস্বীকার
ইহুদিরা তাওরাত ছাড়া অন্যান্য আসমানি গ্রন্থকে অস্বীকার করে এবং হজরত ইয়াহিয়া, জাকারিয়া, ইসা আ:, হজরত মুহাম্মদ সা: প্রমুখের মুজিজাকে অস্বীকার করে। অথচ ঈমানের দাবি হলো- সমস্ত আসমানি কিতাব ও সব নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করা এবং তাদের মুজিজাকে স্বীকার করা।
৩. অঙ্গীকার ভঙ্গ
ইহুদিদের অভিশপ্ত হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো- তাদের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করা। তারা আল্লাহর সাথে এবং নিজের নবীর সাথে কৃত সব অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। কোনো অঙ্গীকার ঠিক রাখেনি। আল্লাহর বাণী- ‘আর আল্লাহ বনি ইসরাইলদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্যে থেকে ১২ জন সর্দার নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ বলে দিলেন- আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, জাকাত দিতে থাকো, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখো, তাদের সাহায্য করো এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋণ দিতে থাকো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গুনাহ দূর করে দেবো এবং অবশ্যই তোমাদের উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করাব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এর পরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতই সব পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি।’
(সূরা আল-মায়েদা ১২-১৩)
৪. নিয়ামতে নাশুকরি
আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। যেমন- সমগ্র বিশ্বের কর্তৃত্ব নেতৃত্ব দান। অল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে বনি ইসরাইল! তোমাদের প্রতি প্রদত্ত আমার নিয়ামতের কথা স্মরণ করো। আর আমি তোমাদেরকে সমস্ত জগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সূরা বাকারা-৪৭) ফিরাউনের জুলুম থেকে তাদেরকে রক্ষা করেছেন। আসমানি কিতাব দিয়েছেন। সিনাই বা তিহ ময়দানে প্রচণ্ড উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য ছায়া দান করেছেন। মান্না ও সালওয়া নামক আসমানি খাদ্য দান করেছেন। পাথর থেকে ঝর্ণার সৃষ্টি করেছেন। ফিরাউনের কবল থেকে বাঁচার জন্য লুহিত সাগরে ১২টি রাস্তা করে দিয়েছেন ইত্যাদি। কিন্তু তারা এ সব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেনি।
৫. আসমানি কিতাব বিকৃতি
ইহুদিরা তাদের কাছে প্রেরিত আসমানি কিতাবকে বিকৃত করেছে। আল্লøাহর কালামে নিজেদের মনগড়াভাবে পরিবর্তন সাধন করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয়।’ (সূরা আল মায়েদা-১৩) আরো ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা কি আশা করো যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত, অতঃপর বুঝেশুনে তা পরিবর্তন করে দিতো এবং তারা তা অবগত ছিল।’ (সূরা আল বাকারা-৭৫)
মোদ্দাকথা, ইহুদিরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও অভিশপ্ত জাতি। আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী তারা দু’অবস্থা ব্যতীত সর্বত্রও সদা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে- ১. আল্লাহ প্রদত্ত ও অনুমোদিত আশ্রয়ের মাধ্যমে ও ২. শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। এ দু’পন্থায় তারা নিজেদেরকে এ অবমাননা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত রাখতে পারবে। বিভিন্ন সময়ে তারা চরম মার খেয়েছে। হিটলার, সালাহউদ্দিন আইয়ুবি, মুসলিনি, বখতে নাসসার প্রমুখ লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে দেশ ছাড়া করেছে। বর্তমানে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং কতিপয় ইউরোপীয় দেশ তাদের ঘাঁটি হিসেবে ইসরাইল নামক একটি ইহুদি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠা করেছে। ফিলিস্তিনিরা উদ্বাস্তু হিসেবে তাদেরকে বসবাসের জন্য জায়গা দিয়েছে। এখন তারা স্বয়ং ফিলিস্তিনিদেরকে দেশ ছাড়া করছে। আর তাদেরকে আমেরিকার নির্দেশে সহযোগিতা করছে আরবের রাষ্ট্রসমূহ। একদিন যে ইহুদিরা তাদেরকেও দেশছাড়া করতে পারে এ বুঝ তাদের নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমাদের প্রধান ও বড় শত্রু ইহুদিদেরকে শত্রু হিসেবে জানা ও বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী