ব্যক্তিগত জীবনে এত ট্র্যাজেডি বাইডেনের
ব্যক্তিগত জীবনে এত ট্র্যাজেডি বাইডেনের - ছবি : সংগৃহীত
ডিসেম্বর ১৮, ১৯৭২ - জো বাইডেন ছিলেন ওয়াশিংটনে। টেলিফোন বাজল, তার ভাই জিমি বাইডেন ডেলাওয়ার থেকে ফোন করেছেন। বোন ভ্যালেরির সাথে কথা বলতে চাইলেন।
বোন বললেন, "একটা ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই।"
সেদিনই আরো পরের দিকে বাইডেন জেনেছিলেন ওই দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী নেইলিয়া এবং শিশুসন্তান নেওমি মারা গেছেন। তার স্ত্রী গাড়ি চালাচ্ছিলেন। একটা লরি গাড়িতে ধাক্কা মারে। গাড়িতে থাকা তার দুই ছেলে বোও আর হান্টারও গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।
তারা ক্রিসমাস উৎসবের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়েছিলেন। বাইডেন তখন সবে সেনেটার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার কংগ্রেস অফিসের কর্মী নিয়োগের জন্য সেদিন ইন্টারভিউ নিতে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়াও পরিবারের থাকার জন্য একটা বাসা কেনার বিষয়টি সেদিন তিনি চূড়ান্ত করতে গিয়েছিলেন।
ওই ঘটনায় তিনি একেবারেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।
"আমি কথা বলতে পারতাম না, বুকের ভেতরে একটা বিশাল শূন্যতা অনুভব করতাম, মনে হতো একটা কালো গহ্বর আমাকে ভেতরে টেনে নিচ্ছে," তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন বাইডেন।
তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন, ঠিক করেছিলেন যাজক হবেন, দুই ছেলেকে মানুষ করবেন। তিনি লিখেছেন, যেসব এলাকায় খুব গুণ্ডামি হতো, সেসব এলাকায় তিনি সন্ধ্যেবেলা ঘুরে বেড়াতেন। মারপিট করতে তার ইচ্ছা হতো।
"আমার ভেতরে একটা বিরাট ক্রোধ তৈরি হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আমার সাথে একটা নিষ্ঠুর খেলা খেলছেন। আমার রাগ হতো।"
কৈশোর ও যৌবন
জো বাইডেনের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। বাইডেনের জন্মের আগে তিনি ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছিলেন। কিন্তু জো-র জন্মের পর তার ব্যবসা পড়ে যায়। জো বাইডেনের কৈশোর কেটেছে পারিবারিক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে।
পেনসিলভেনিয়ায় খুবই সাদামাটা এক বাসায় যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। তার পরিবার ছিল খুব ধার্মিক। ক্যাথলিক মূল্যবোধ ও তার ধর্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল পারিবারিক ধর্মচর্চ্চার সুবাদে।
ছেলেবেলায় তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তোতলামি কাটিয়ে ওঠা। স্কুলের উঁচু ক্লাস পর্যন্ত এই সমস্যা তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
পড়তে গিয়ে তার তোতলামির জন্য সহপাঠীরা তো বটেই, এমনকী শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে ঠাট্টা মস্করা করতেন।
"এখনও আমার মনে আছে সেই যন্ত্রণার কথা, লজ্জা রাগ আর অপমানের দিনগুলোর কথা," বাইডেন লিখেছেন তার স্মৃতিকথায়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শান্তভাবে কবিতা আবৃত্তি ও সংযতভাবে কথা বলা আয়ত্ত করতে করতে, হাই স্কুল পার হবার পর তোতলামো কাটিয়ে ওঠেন তিনি।
হাই স্কুল শেষ করে তিনি পড়তে যান ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে।
জাতীয় রাজনীতিতে
তার স্ত্রী ও শিশু কন্যার মৃত্যুর পর বাইডেন তার জীবনে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করেন। তার দুই ছেলেকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ঘরে অনেক সময় দেন। প্রথম ১৪ বছর তিনি ডেলাওয়্যার থেকে ওয়াশিংটন দৈনন্দিন যাতায়াত করতেন।
পরে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন জিল জেকবস নামে এক স্কুল শিক্ষয়িত্রীকে। তাদের একটি ছেলে হয়- অ্যাশলি। বাইডেন সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন।
প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবার জন্য তার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পেছনে ওই লেখাচুরির কলঙ্ক তাকে অনেকদিন তাড়া করে বেড়িয়েছে।
তবে ১৯৮৮ সালের ওই নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবার ঘটনা অনেকে বলেন তার জন্য শাপে বর হয়েছিল।
লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক মাসের মাথায় নিউ ইয়র্কে এক হোটেল ঘরে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন জো বাইডেন। মস্তিষ্কের রক্তনালী ফুলে ওঠার এক সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অসুখে তিনি আক্রান্ত হন। এর পরের ছয় মাস তাকে বহুবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি