যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেন - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোট গণনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোনো সময়ে ঘোষণা হতে পারে নতুন প্রেসিডেন্টের নাম। ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে যেতে পারেন, আবার জো বাইডেনেও হতে পারেন প্রেসিডেন্ট। এখন দেখা যাক, তিনি যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, সেগুলো।
হোয়াইট হাউস
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। ৫৫ হাজার বর্গফুটের উপর নির্মিত ছ'তলা এই ভবনে ১৩২টি ঘর, ৩৫টি শৌচালয় এবং ২৮টি ফায়ারপ্লেস রয়েছে। এ ছাড়া বোলিং অ্যালি, সিনেমা হল, জগিং ট্র্যাক, সুইমিং পুল। ব্যক্তিগত সহায়কও প্রচুর।
ব্লেয়ার হাউস
প্রেসিডেন্টের সরকারি গেস্ট হাউস হোয়াউট হাউসের চেয়েও বড়। এর আয়তন ৭০ হাজার বর্গফুট।
ক্যাম্প ডেভিড
এটি হলো পার্বত্য আবাস। মেরিল্যান্ডের পর্বতে ১২৮ একর জায়গার উপর নির্মিত এই ভবন। রুজভেল্ট থেকে শুরু করে প্রায় সব প্রেসিডেন্টই এখানে কখনো না কখনো থেকেছেন।
এয়ার ফোর্স ওয়ান
মার্কিন প্রেসিডেন্টের যাতায়াতের স্বার্থে ব্যবহৃত এই ব্যক্তিগত এয়ারক্রাফ্টে যে ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে। তা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পাল্স থেকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। কোনো ধরনের আক্রমণের হাত থেকে নিরাপদ রাখতেও বিশেষ ভাবে তৈরি হয়েছে এই যান। মাঝ-আকাশে জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে ফের তা ভরে নেয়া যায়।
মেরিন ওয়ান
সরকারি চপার এরই রকম চারটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে ওড়ে। ইঞ্জিন বিকল হলেও ঘণ্টা ১৫০ মাইল গতিতে ওড়ার ক্ষমতা রাখে এই হেলিকপ্টার। আক্রমণ প্রতিহত করার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে এতে।
দ্য বিস্ট
যে লিমুজিনটি চড়ে প্রেসিডেন্ট ঘুরে বেড়ান, সেটিকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ গাড়ি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গোলাগুলি তো বটেই, রাসায়নিক আক্রমণ ঠেকাতেও সক্ষম এই গাড়ি। পাঁচ স্তরীয় কাচ ও পলিকার্বোনেটের জানলা। অক্সিজেনের জোগান, অগ্নি মোকাবিলার ব্যবস্থা ছাড়াও এই গাড়িতে রয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্ক।
সিক্রেট সার্ভিস
২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা বাহিনী প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সিক্রেট সার্ভিসের মতো দেশের প্রাচীনতম ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে।
বেতন
চার লাখ মার্কিন ডলার তার বেতন। এর উপর অবশ্য কর চাপে। এর পাশাপাশি বিনোদন ভাতা হিসেবে ১৯ হাজার ডলার, অন্যান্য খরচ বাবদ বার্ষিক ৫০ হাজার ডলার এবং ১ লাখ ডলারের ভ্রমণ ভাতা বরাদ্দ, যার উপরে কোনো কর দিতে হয় না। অবসরের পরও দুই লাখ মার্কিন ডলার বার্ষিক পেনশন পান সাবেক প্রেসিডেন্ট। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী বিধবা ভাতা হিসেবে পান বার্ষিক এক লাখ ডলার।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অনেক ক্ষমতাবান মনে হলেও আসলে কিন্তু তার ক্ষমতা সীমিত। ছবিঘরে জেনে নিন কি কি ক্ষমতা রয়েছে তাদের।
মার্কিন সংবিধান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর। কোন প্রেসিডেন্ট দুইবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারেন না। প্রেসিডেন্ট সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং ফেডারেল প্রশাসন নিয়োগ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করার পর সেই আইন প্রয়োগের দায়িত্বও প্রেসিডেন্টের।
সরকারের প্রধান তিন শাখা
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে: বিচারবিভাগ, আইনপ্রনয়ন বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ। প্রেসিডেন্ট কোন অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন এবং ফেডারেল বিচারক মনোনীত করতে পারেন, কিন্তু তা সেনেট থেকে অনুমোদিত হতে হয়। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ও রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ দিতে পারেন, কিন্তু এসব নিয়োগেও সেনেটের অনুমোদন লাগে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আইনপ্রণয়ন বিভাগ প্রশাসনিক বিভাগের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
স্টেট অফ ইউনিয়নের ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টকে কিছুদিন পরপর কংগ্রেসের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে অবহিত করতে হয়। প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে ‘স্টেট অফ ইউনিয়ন’ বলা হয়।
‘না’ বলতে মানা
প্রেসিডেন্ট কোন আইনে ভিটো দিতে পারেন, বা 'না' বলতে পারেন। কিন্তু যদি কংগ্রেসের দুই কক্ষ, সেনেট ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের দুই-তৃতীয়াংশ কোন আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেয় তাহলে প্রেসিডেন্টের ভিটো সত্ত্বেও আইন কার্যকর হতে পারে।
পকেট ভিটো
কিন্তু মাঝেমাঝে প্রেসিডেন্ট কোন আইন প্রণয়নকে একটি কৌশলে আটকে রাখতে পারেন। এই কৌশলকে বলা হয় ‘পকেট ভিটো’। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কোন আইন নিজের কাছে আটকে রাখতে পারেন। এর ফলে কংগ্রেসে অনুমোদিত হলেও প্রেসিডেন্টের কাছে আটকে থাকার কারণে আইনটি কার্যকর হতে পারে না। এই আইনের মত অনেক বিষয়ে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে স্পষ্ট করে নির্ধারিত করেনি।
নির্বাহী ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টের আরেকটি বিখ্যাত ক্ষমতার নাম হচ্ছে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ বা নির্বাহী ক্ষমতা। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সরকারি কর্মকর্তাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় প্রেসিডেন্ট যা খুশি তাই নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত ইচ্ছে করলে এই নির্দেশ বাতিল করতে পারে অথবা কংগ্রেস এই নির্দেশের বিপরীতে আরেকটি আইন প্রণয়ন করতে পারে।
চুক্তির ক্ষমতা
প্রেসিডেন্ট প্রয়োজন মনে করলে আরেকটি দেশের সাথে চুক্তি বাতিল করতে পারেন, কিন্তু সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে।
সামরিক বাহিনীর প্রধান
প্রেসিডেন্ট কমান্ডার ইন চিফ বা সামরিক বাহিনীর প্রধান, কিন্তু যেকোনো যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে কংগ্রেস। তবে এই নিয়মটি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। কারণ, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াও কিছু সময় প্রেসিডেন্ট সামরিক সংঘর্ষে সৈন্যদের অংশ নেবার অনুমোদন দিতে পারেন।
অভিশংসন
প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বা কোনো অপরাধ করেন, তবে হাউজ অভ রিপ্রেজেন্টিটিভ তাকে সরানোর জন্য ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন শুরু করতে পারেন।
সূত্র : এই সময় ও ডয়চে ভেলে