ফ্রান্সের সাথে ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার কারণ
ফ্রান্সের সাথে ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার কারণ - ছবি : সংগৃহীত
ভারত বুধবার আরো তিনটি ফরাসি জঙ্গিবিমান পেয়েছে। আর দুই দেশের মধ্যে সাবমেরিন চুক্তি হওয়ায় খুব বেশি দেরি হবে না বলে মনে হচ্ছে।
ফরাসি জাহাজ নির্মাতা নেভাল গ্রুপের সাথে সাবমেরিন চুক্তিটি হতে পারে। ভারতীয় নৌবাহিনীর পি৭৫১ শ্রেণির আওতায় ভারত সাবমেরিন কেনার কথা ভাবছে।
গত সেপ্টেম্বরে ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলে ও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মধ্যে বৈঠকে ইন্দো-ফরাসি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ক্রয়চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। তাদের আলোচনায় পি৭৫১ সাবমেরিন দরপত্রও স্থান পায়।
দরপত্রে ছয়টি স্টিলথ সাবমেরিন নির্মাণের কথা বলা হয়। ভারত যেসব সাবমেরিন কেনার কথা ভাবছে সেগুলোতে এয়ার-ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রপালসন প্রযুক্তি ও বর্তমানে ভারতের হাতে থাকা সাবমেরিনগুলোর চেয়ে বেশি ডোবার ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।
আগামী বছরের কোনো এক সময় সাবমেরিন চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর দাম হতে পারে ৪২০ বিলিয়ন রুপি (৫.৬ বিলিয়ন ডলার)। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রগ্রামের প্রধান হর্ষ ভি পান্ত এই তথ্য জানিয়েছেন।
নেভাল গ্রুপ বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মারাগন ডক শিপবিল্ডার্সের সাথে কাজ করছে। তারা ছয়টি কালভরি সাবমেরিন নির্মাণের জন্য কাজ করছে। এগুলোর মোট মূল্য ২৩০ বিলিয়ন রুপি (৩.১৩ বিলিয়ন ডলার)। এগুলোর দুটি ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে, দুটি সাগরে পরীক্ষাধীন রয়েছে, দুটি রয়েছে নির্মাণাধীন।
প্রকল্পের আওতায় ফরাসি কোম্পানির প্রযুক্তি ভারতীয় অংশীদারদের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
গত ৫ বছর ধরে ভারতের সাথে আরো বেশি প্রতিরক্ষা ব্যবসা করছে ফ্রান্স। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ফ্রান্স ছিল ভারতের অষ্টম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। চুক্তির মূল্য ছিল ১৯৯ মিলিয়ন ডলার।কিন্তু গত ৫ বছরে ফ্রান্স ৩ নম্বর স্থানে ওঠে এসেছে। এখন তাদের চুক্তির পরিমাণ ১.৬ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া ও ইসরাইল রয়েছে যথাক্রমে ১ ও ২ নম্বর স্থানে।
পান্ত বলেন, ভারতের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়ে গেছে ফ্রান্স।সাবমেরিন নির্মাণে ভারতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে দেশটি।
ভারতের সামরিক বাজেট বরাদ্দ প্রমাণ করছে, কিভাবে ফরাসি অস্ত্র উৎপাদনকারীরা তাদের অবস্থান জোরদার করছে। ভারতের মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ৪০ ভাগ বরাদ্দ তার বিমান বাহিনীর জন্য। এর ফলেই ভারত ৩৬টি রাফাল জঙ্গি বিমান কিনতে পারছে ফ্রান্সের কাছ থেকে। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম ৫টি জঙ্গিবিমান ভারতে চলে আসে। বাজেটে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর জন্য বরাদ্দ যথাক্রমে ২০ ও ৩০ ভাগ। তবে সামমেরিন বানানো অব্যাহত থাকলে নৌবাহিনীর জন্য বাজেট বাড়াতে হবে।
অবশ্য কেবল প্রতিরক্ষা খাতেই দুই দেশের সম্পর্ক সীমিত নয়। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য ভারতকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ফ্রান্স।
ফ্রান্সে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত মোহন কুমার বলেন, ফ্রান্সই সম্ভবত অন্যতম পরাশক্তি, যাদের সাথে ভারতের তেমন কোনো মারাত্মক বিরোধ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রয়েছে বাণিজ্য বিরোধ, জার্মানি জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নয়, ভারত ও পাকিস্তানের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলে যুক্তরাজ্য।
কুমার বলেন, কিন্তু ফ্রান্স সবসময় ভারতের পাশে থাকে। ১৯৯৮ সালে পরমাণু পরীক্ষা সময় পুরো বিশ্ব ভারতের বিপক্ষে থাকলেও ফ্রান্স ছিল ভারতের পাশে।
ভারত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে থাকা জিবুতিতে ফ্রান্সের নৌঘাঁটি আছে। এছাড়া রিইউনিয়ন আইল্যান্ডেও আছে ঘাঁটি। নয়া দিল্লি মনে করে, সাগরে চীনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে ভারতের ভালো কৌশলগত অংশীদার হতে পারে ফ্রান্স।
সূত্র : নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ