ভারতীয় সেনাপ্রধান কেন যাচ্ছেন নেপাল?
ভারতীয় সেনাপ্রধান কেন যাচ্ছেন নেপাল? - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ দনারাভানের তিন দিনের নেপাল সফর শুরু হচ্ছে বুধবার। গত মে মাসে নেপাল সংশোধিত মানচিত্র আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার পর নারাভানের সফরই হচ্ছে দেশটিতে ভারতের উচ্চপদস্থ কারো প্রথম সফর। ২০১৯ সালে ভারতের নতুন মানচিত্র প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় নেপাল বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলো তার নিজের দাবি করে ওই মানচিত্র প্রকাশ করে। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, তিক্ত সীমান্ত বিরোধের জের ধরে টানাপোড়েনের মুখে থাকা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আবার স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই নারাভানের সফরের অন্যতম লক্ষ্য।
নয়া দিল্লি ও কাঠমান্ডু রাজনীতি, কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, সামরিক সহযোগিতা, সংস্কৃতি, জনগণ পর্যায়ে সম্পর্কের দিক থেকে ঘনিষ্ঠ বিনিময় বজায় রেখেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেকে ‘বড় ভাই’ মনে করা ভারত আশপাশের দেশগুলোর ওপর খবরদারি করতে অভ্যস্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকশিত করার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়িয়েছে। কিছু কিছু ইস্যুতে দেশটি ভারতকে প্রতিরোধ করতে শুরু করেছে। অধিকন্তু, সাম্প্রতিক সীমান্ত বিতর্ক ভারতের বিরুদ্ধে নেপালি জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ উস্কে দিয়েছে। নেপালি সরকার সুরক্ষিত সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর জোর দিচ্ছে। এসব বিষয় দুই দেশর মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে চীন-ভারতের সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমিত হয়ীন। পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত বিরোধের কারণেও ভারত বেশ নিরাপত্তা চাপের মুখে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নয়া দিল্লি সচেতন রয়েছে যে ভবিষ্যতে তাদেরকে দুই ফ্রন্টে চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে হবে। নেপালের সাথে সীমান্ত বিরোধ সাবলীলভাবে সামাল দিতে না পারলে ভারতের সীমান্তগত অবস্থা আরো জটিল হয়ে পড়বে। এ কারণে কাঠমান্ডুর সাথে সম্পর্ক ঝালাই করতে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে নয়া দিল্লি।
নারাভানের সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে। এর কারণ হলো, ভারতীয় সৈন্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে নেপালি সামরিক বাহিনী। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সংলাপ তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নির্ধারণে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে।
তাছাড়া নারাভানের সফরের খবর প্রকাশের সময় কোনো কোনো ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট চীনা প্রভাবের কথাও এনেছে। উদাহরণ হিসেবে ইন্ডিয়া টুডের কথা বলা যেতে পারে। এতে বলা হয়, গালওয়ান ভ্যালিতে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নেপালে প্রভাব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চীন। পত্রিকাটিতে নেপালি ভূখণ্ড চীনের দখলের কথাও উল্লেখ করে।
পিটিআই জানায়, এই অঞ্চলে প্রভাব সম্প্রসারণ করার চীনের বৃহ্ত্তর প্রয়াসের প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর বৃহত্তর প্রয়াসের অংশ হিসেবে নেপালে সেনাবাহিনী প্রধানকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়া দিল্লি। ভারতের এখন সীমান্ত বিরোধ রয়েছে পাকিস্তান ও নেপালের সাথে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশের সাথেও তার সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের তথাকথিথ ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কথা বলে চীন ও নেপালের মধ্যে বাধার সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভারত। এর মূল কারণ চীনকে ভয় পায় ভারত। বিশেষ করে চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ফলে ভারতের আঙিনায় চীনের প্রভাব বাড়বে বলে নয়া দিল্লি আশঙ্কা করছে।
চীন যখন নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করছে, তখন ভারতের মধ্যে এই বিশ্বাস চেপে বসেছে যে ভারতের প্রভাববলয় দুর্বল করে তুলছে চীন। ভারত মনে করে, এর মাধ্যমে তাকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে ঘিরে ফেলছে চীন। আর এ কারণে চীনের বিআরআই ও সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপগুলোকে চরম সতর্কতার সাথে বিবেচনা করছে ভারত।
লেখক : পরিচালক, গবেষণা বিভাগ, ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউট, সিঙহুয়া ইউনিভার্সিটি
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস