রাশিয়া-পাকিস্তান সম্পর্কে কাঁটা ভারত!
রাশিয়া-পাকিস্তান সম্পর্কে কাঁটা ভারত! - ছবি : সংগৃহীত
রাশিয়া-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে আদিলা জাওয়াদের পাঠানো বেশ কিছু প্রশ্নের যে জবাব অ্যান্ড্রু করিবকো দিয়েছেন, এখানে তা প্রকাশ করা হলো।
প্রশ্ন : বর্তমান কৌশলগত পরিবেশে রুশ-পাকিস্তানি সম্পর্কের গুরুত্ব কতটা বলে আপনি মনে করেন?
জবাব : উভয় দেশই একক মেরু থেকে বহু মেরুর দিকে বৈশ্বিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুই দেশেরই চীনের সাথে সম্পর্ক রয়েছে, এবং আন্তঃমহাদেশীয় কানেকটিভিটি জোরদার করার ব্যাপারেও উভয়ের আগ্রহ রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী উদ্বেগের উৎস হলো আফগানিস্তানে আইএসআইএসের উপস্থিতি। আর এ থেকেই তারা আরো ঘনিষ্ঠভাবে একসাথে কাজ করার তাগিদ অনুভব করছে।
প্রশ্ন : আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পারব যে পাকিস্তান ও রাশিয়ার স্বার্থের মধ্যে অনেক মিল ও অমিল রয়েছে। গত কয়েক বছরে অমিল থেকে মিলে আসতে পাকিস্তান-রাশিয়া কী করেছে বলে আপনি মনে করেন?
জবাব : দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সর্বোত্তম পর্যায়ে রয়েছে। তবে সত্যিকারের কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাদেরকে আরো অনেক কাজ করতে হবে।তবে ভারতের স্পর্শকাতরতার কারণে রাশিয়া সম্ভবত এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করছে। রুশ-পাকিস্তানি সম্পর্কের লক্ষ্য কোনো তৃতীয় পক্ষ না হলেও ভারতের ভ্রমগ্রস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা প্রবলভাবে তাদের সদ্যলব্ধ আমেরিকান মিত্রের জিরো-সাম চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে ভিন্ন কিছু ভাবছে।
রুশ-পাকিস্তানি সম্পর্ক আরো গভীর করা হবে কিনা তা নিয়ে রাশিয়াকে তাদের চাপ প্রতিরোধ করতে হবে, স্বাধীনভাবে তার জাতীয় স্বার্থের উদ্দেশ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত বেশ কিছু উৎসাহব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অবশ্য তারা এখনো তাদের সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পর্যাপ্ত কাজ করেনি।
প্রশ্ন : এই সম্পর্ক জোরদার করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী কী? কিংবা আপনি বলতে পারেন, তাদের সম্পর্ক পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে কোন কোন বিষয় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারে?
জবাব : রাশিয়া ট্রান্স-কন্টিনেন্টাল বাণিজ্য করিডোরের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে পারে। এই করিডোরকে আমি সিপিইসিকে যথাক্রমে উত্তর ও পশ্চিম দিকে এন-সিপিইসি+ ও ডব্লিউ-সিপিইসি+ হিসেবে অভিহিত করেছিলাম। এন-সিপিইসিকে বলা যেতে পারে রুপাক করিডোর। এটি যুদ্ধ-পরবর্তী আফগানিস্তানর মাধ্যমে বাণিজ্য করিডোরে পরিণত হতে পারে। আর ডব্লিউ-সিপিইসি স্থবির হয়ে থাকা নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (এনএসটিসি)-এর সমান্তরালভাবে চলতে পারে ইরান ও আজারবাইজানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে। এতে মস্কোর ব্যাপক স্বার্থ রয়েছে। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউরেশিয়ান কানেকটিভিটি সম্প্রসারণ করেছিলেন। তবে এখানেও ভারতীয় চাপ প্রতিরোধ করতে হবে রাশিয়াকে।
প্রশ্ন : এখানে চ্যালেঞ্জের চেয়ে সুযোগ কতটা বেশি আছে?
জবাব : এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে মাত্র একটি। তা হলো সম্পর্ক ভণ্ডুল করে দিতে ভারতের চেষ্টা। এছাড়া আর কোনো সমস্যাই নেই।
প্রশ্ন : আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সঙ্ঘাত, আফগান সমন্বয় প্রক্রিয়া ও ভারতীয় স্বার্থের ব্যাপারে আঞ্চলিক রাজনীতি কতটা প্রভাব বিস্তার করছে বলে আপনি মনে করেন?
জবাব : একে অন্যকে সমান অংশীদার মনে করে, এমন দুই দেশ কখনো অপর দেশকে তার নীতি বদল করতে বলে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের ভিন্নতা তাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের চারটি প্রস্তাবে আজারবাইজানি ভূখণ্ড হিসেবে সার্বজনীন স্বীকৃত এলাকা থেকে আর্মেনিয়াকে সরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। এই সঙ্ঘাতে পাকিস্তান পূর্ণভাবে আজারবাইজানকে সমর্থন করছে। আর রাশিয়অ বলছে, প্রত্যাহার হতে পারে রাজনৈতিকভাবে।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে রাশিয়া ও পাকিস্তান উভয়েই শান্তিপ্রক্রিয়াকে সমর্থন করে, এমনকি এ ব্যাপারে একে অপরকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতাও করছে।
অবশ্য ভারতের ব্যাপারে স্বার্থ ভিন্ন। জম্মু ও কাশ্মিরকে দ্বিখণ্ডিত করা ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার ভারতীয় সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে রাশিয়া। আর পাকিস্তান এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। তা সত্ত্বেও এই ঘটনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পথে বাধা নয়। বুঝতে হবে যে পাকিস্তানর সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি কৌশলগত না করার জন্য রাশিয়ার ওপর প্রবল চাপ দিয়ে যাচ্ছে ভারত। এতে বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানের সাথে মস্কোর সম্পর্ক ভারসাম্যহীন। কারণ আমেরিকার সাথে সম্পর্ক না প্রতিষ্ঠার জন্য কিন্তু ভারতের ওপর একই ধরনের চাপ দিচ্ছে না রাশিয়া। অথচ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক রাশিয়ার ইউরেশিয়ান ভূরাজনীতির প্রতি খুবই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী শক্তি।
সূত্র : গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস