সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি দিল্লির, বিপাকে ভারতের করোনা রোগীরা
সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি দিল্লির, বিপাকে ভারতের করোনা রোগীরা - ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল ভারতে। এর ফলে লকডাউনের পর পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল দিল্লির আবহাওয়া। কল-কারখানা বন্ধ। যানবাহন চলছিল না। প্রতিবেশী রাজ্যে খড় পোড়ানো হচ্ছিল না। তাই পরিবেশ পরিচ্ছন্ন হয়েছিল। যমুনায় ফিরে এসেছিল নীল পানি। আবার তাতে মাছের দেখা মিলেছিল।
কিন্তু দিল্লিবাসীর কপালে এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। এখন আনলক পর্ব চলছে। স্কুল, কলেজ ছাড়া প্রায় সবকিছুই খুলে গেছে। তাই দিল্লি আবার ফিরে পেয়েছে ভয়ঙ্কর দূষণ। রোদের তেজ নেই। ধোঁয়ার স্তর গ্রাস করেছে দিল্লিকে। কারণ, প্রতিবেশী হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে আবার বিপুল পরিমাণ খড় পোড়াচ্ছেন কৃষকরা। পাঞ্জাবে সরকারি হিসাব, এখনো পর্যন্ত ৩৫ হাজার ১৬৫টি খড় পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। হরিয়ানায় হয়েছে ছয় হাজার ৩৪টি। পাঞ্জাবে গত বছর মোট খড় পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল ২১ হাজার ১৪টি। তার মানে পাঞ্জাবে এ বার ইতিমধ্যেই দেড় গুণ বেশি খড় পোড়ানো হয়েছে। তারপরে কি আর দিল্লির পরিবেশ ঠিক থাকে?
মঙ্গলবার দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকটাই লাগামছাড়া ছিল। অধিকাংশ এলাকায় বাতাস ছিল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। কয়েকটি জায়গায় ভয়ঙ্কর। আর দিল্লির বায়ুদূষণের ৪০ শতাংশ অবদান পাঞ্জাব ও হরিয়ানার খড় পোড়ানোর।
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের পঞ্জাব শাখার সাধারণ সম্পাদক জগমোহন সিং নিউজ ১৮কে বলেছেন. ৬৮ শতাংশ কৃষক ৭ একর বা তার কম জমির মালিক। তাঁরা মেশিন ভাড়া করে খড় নষ্ট করার অবস্থায় নেই। তার উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন নিয়েও তারা বেজায় ক্ষুব্ধ। তাই অনেকে বেশি করে খড় পোড়াচ্ছেন। কিন্তু খড় নষ্ট করার জন্য কৃষকদের সাহায্য করার কথা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের। তারা কি সেই কাজ করছে? সরকারি স্তরে কোনো নজরদারি নেই, নেই খড় পোড়ানো বন্ধের উদ্যোগ।
কারণ যাই হোক, খড় পোড়ানোর ঘটনা বেড়েছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে দিল্লিবাসীকে। সুপ্রিম কোর্ট এর আগে দিল্লির দূষণ নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছিল। সাবেক বিচারপতি মদন লোকুরকে নিয়ে এক সদস্যের নজরদারি কমিটি গঠন করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। তিনি পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশে ঘুরে খড় পোড়ানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে রিপোর্ট দেবেন। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তারপরেও খড় পোড়ানোর ঘটনা কমা দূরে থাক, বরং বেড়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কীভাবে থামানো যাবে এই দূষণ?
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাবেক প্রধান বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এককথায় বলতে গেলে আদালত অবমাননা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট একাধিক রায় দিয়েছে, খড় পোড়ানো ও বাজি পোড়ানো নিয়ে। কোর্টের নির্দেশ রূপায়ণের দায়িত্ব সরকারের। তারা সেটা করলে দিল্লিতে এই বার এরকম অবস্থা হওয়ার কথা ছিল না।''
তাঁর মতে, ''সরকার ব্যবস্থা নেয় না। কারণ, রাজনীতিবিদরা এর প্রয়োজনীয়তাই উপলব্ধি করতে পারেন না। তার ফল হচ্ছে এই দূষণ। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অদূর ভবিয্যতে আরো ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। এভাবে আদালত অবহমাননা করা যায় না। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এর সমাধান করা দরকার।''
কেন্দ্রে ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যে যে দল শাসনে আছে এবং যারা বিরোধী কেউই খড় পোড়ানো বন্ধ করে কৃষককে চটাতে চায় না। তার ফলে প্রতিবছরই দিল্লি ও তার আশপাশ ঢেকে যায় দূষিত বাতাসের ঘেরাটোপে। এ বার করোনার প্রকোপ চলছে। চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছেন, বাতাস যত দূষিত হবে, ততই করোনা রোগীদের কষ্ট বাড়বে।
বছরের পর বছর একই ছবি। আর প্রতি বছর দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। সময়সীমা বাড়ছে। আগে দেওয়ালির কয়েকটা দিন খারাপ অবস্থা হতো। এখন অনেকটা সময় ধরে দূষণের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় দিল্লিবাসীকে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে