নাগার্নো-কারাবাগ যুদ্ধ : আজারবাইজানকে সমর্থন আফগানিস্তানের
নাগার্নো-কারাবাগ যুদ্ধ : আজারবাইজানকে সমর্থন আফগানিস্তানের - ছবি : সংগৃহীত
নাগার্নো-কারাবাগ নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ আবারো আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধে রূপ নেয়ার প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভঅবে ঘোষণা করেছে যে তারা আজারবাইজানকে সমর্থন করছে। নিজেই কয়েক দশক ধরে চলা অব্যাহত যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির কোনো যুদ্ধে অন্য দেশকে সমর্থন করা আফগান নাগরিকদের কাছে অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর মনে হয়েছে।
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সশস্ত্র সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়ে ২৭ সেপ্টেম্বর। অঞ্চলটি সরকারিভাবে মুসলিম আজারবাইজানের অংশ হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা এবং প্রতিবেশী খ্রিস্টান আর্মেনিয়া তাদের সমর্থন করে।
সঙ্ঘাত শুরুর এক দিন পর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সরকারি প্রেস রিলিজে জানায়, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটি যে আজারবাইজানের, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও এতে আজারবাইজানের প্রতি সমর্থন দিয়ে আর্মেনিয়ার দখলদারিত্বের অবসানের আহ্বান জানানো হয়।
এই ঘোষণায় আজারবাইজানের সাথে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা নতুন করে সামনে এসেছে।
সোভিয়েত-পরবর্তী আফগানিস্তানে ১৯৯০-এর দশকে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লেও ১৯৯৩ সালে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য কয়েক শ’ ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়েছিল আফগানিস্তান। ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের মিত্র ইরান-সমর্থিত ওয়াদাত পার্টি থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার সদস্য আজারবাইজানে মোতায়েন করা হয়েছিল।
আজারবাইজানি সরকার এই খবর অস্বীকার করলেও ক্রিস্টিয়ান মনিটরের প্রমাণে যুদ্ধে আফগান ভাড়াটে সৈন্যদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এই মোতায়েনের ফলে যুদ্ধটির আন্তর্জাতিকীকরণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, এই যুদ্ধ খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যকার ধর্মযুদ্ধের মাত্রা পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। যুদ্ধে আফগান যোদ্ধাদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় আর্মেনিয়া।
আর্মেনিয়া আবারো সঙ্ঘাতে আফগানিস্তানের অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছে। আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক বিবৃতির জবাবে আর্মেনিয়ার জাতীয় পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে কালেকটিভ সিকিউরিটি অর্গ্যানাইজেশন থেকে আফগানিস্তানের সদস্যপদ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তান-আজারবাইজান অর্থনৈতিক সম্পর্ক
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয় দেশের সৈন্যই আছে আফগানিস্তানে। উভয় দেশই আফগানিস্তানে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ অভিযানে অংশ নেয়। অবশ্য, মনে হচ্ছে যে আজারবাইজানই আস্থা অর্জন করেছে। এই আস্থার বড় অংশজুড়ে আছে বিচক্ষণতা। আফগানিস্তান তার বাণিজ্য রুটগুলোতে বৈচিত্র্য আনতে চাচ্ছে, পাকিস্তানের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকতে চাচ্ছে না।
মধ্য এশিয়ার এই দুই দেশের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ককে অর্থনৈতিক চশমা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির পররাষ্ট্রনীতির অনেকটা অংশজুড়েই থাকে অর্থনীতি। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে নজর দিয়ে থঅকেন। আজারবাইজানকে আফগানিস্তান মনে করে তার মধ্য এশিয়া ও ইউরোপিয়ান বাজারের প্রবেশদ্বার।
উভয় দেশ তাদের পণ্যসম্ভাব অপর দেশে পাঠিয়ে থাকে। মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশে যাওয়ার জন্য আফগানিস্তানের স্থল রুটগুলো ব্যবহার করে আজারবাইজান। আর তুরস্ক ও ইউরোপের বাজারগুলোতে যাওয়ার জন্য আজারবাইজানের ট্রানজিট অবস্থানকে কাজে লাগায় আফগানিস্তান। ২০১৮ সালে আফগানিস্তান ও আজারবাইজানের মধ্যকার বাণিজ্য ৩৭ ভঅগ এবং ২০১৯ সালের প্রথম কোয়ার্টারে ৪৬ ভাগ বেড়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ল্যাপিজ-ল্যাজুলি রুট। আফগানিস্তান থেকে শুরু হওয়া এই বাণিজ্য রুটটি তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান, জর্জিয়া ও তুরস্ক দিয়ে ইউরোপিয়ান বাণিজ্য রুটগুলেঅর সাথে যুক্ত হয়েছে।
আর্মেনিয়ার সাথে যুদ্ধে আজারবাইজানকে আফগানিস্তানের সমর্থনের ঘোষণায় দেশটির বিশ্ববাজারে তার ক্রমবর্ধমান অবস্থান সৃষ্টিতে সহায়তাকারী দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করার আকাঙ্ক্ষাই প্রতিফলিত হয়েছে।আফগানিস্তান তার কৌশলে আজারবাইজানকে একটি হাতিয়ার মনে করে। এ কারণেই নাগার্নো-কারাবাগ নিয়ে যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানকে সমর্থন করেছে আফগানিস্তান।
সূত্র : ডিফেন্স পোস্ট