শিশুর মাথাব্যথার কারণ ও প্রতিকার
শিশুর মাথাব্যথার কারণ ও প্রতিকার - ছবি সংগৃহীত
১০ বছরের ছেলে পার্থ। এতদিন পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করত। বেশ কিছু দিন ধরে সে বাবা-মাকে মাথাব্যথার কথা বললেও বাবা-মাব্যথার ওষুধ দিয়ে বাসায় চিকিৎসা করলেন। পরীক্ষায় পার্থ এবার খুব খারাপ ফলাফল করল। এ রকম অবস্থাতে বাবা-মা আমাদের কাছে পার্থকে নিয়ে এলেন। মাথাব্যথা শিশুদের একটি কমন সমস্যা যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রাথমিকভাবে গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না।
মাথাব্যথা বা হেডেক শুধু বড়দের নয়, শিশুদের জন্যও বড় মাথাব্যথার কারণ। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে মনে করেন- শিশুদের মাথাব্যথা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় অথবা খুব কম শিশুই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। এক সমীক্ষায় দেখা যায় যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো ধরনের মাথাব্যথায় ভোগে। কারণ যাই হোক না কেন, শিশুর মাথাব্যথাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বয়স ভেদে মাথাব্যথা
বয়সের সাথে সাথে শিশুদের মাথাব্যথার প্রবণতাও বাড়তে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় প্রাথমিক স্কুলে যায় এমন শিশুদের মধ্যে ৩৭-৫১ জনই কোনো না কোনো ধরনের মাথাব্যথাতে ভোগে, আবার হাইস্কুলে যায় এমন শিশুদের মধ্যে মাথাব্যথার প্রবণতা ৫৭-৮২%। বয়োসন্ধির আগে ছেলেদের এবং বয়োসন্ধির পরে মেয়েদের মাথাব্যথার প্রবণতা বেশি।
শিশুদের মাথাব্যথার কারণ
ষ মাইগ্রেন
ষ টেনশন হেডেক
ষ চোখের সমস্যা
ষ নাকের প্রদাহ, কান, গলা, ঘাড়ের সমস্যা
ষ মাথায় কোনো ধরনের টিউমার
ষ মাথায় আঘাত
ষ উচ্চ রক্তচাপ
ষ মস্তিষ্কে প্রদাহ/ইনফেকশন
ষ মানসিক রোগ
ষ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ/স্ট্রোক
মাথাব্যথার অনুষঙ্গ
ষ বমি বমিভাব
ষ ঘন ঘন বমি হওয়া
ষ চোখে ঝাপসা দেখা
ষ ঘুম না হওয়া
ষ পড়াশোনায় অমনযোগী হওয়া, ভুলে যাওয়া
ষ আলো বা শব্দ অসহ্য বোধ হওয়া
শিশুদের মাইগ্রেন
মাইগ্রেন শুধু বড়দের নয়, ছোটদেরও মাথাব্যথার একটি অন্যতম কারণ। কিছু লক্ষণ দেখে মাইগ্রেন শনাক্ত করা হয়। যেমন-
ষ দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা
ষ মাথাব্যথার ধরন-দপদপ করে মাথাব্যথা
ষ আধকপালি মাথাব্যথা
ষ বমি ভাব
ষ মাথাব্যথার আগে বুঝতে পারা
ষ শব্দ/আলো অসহ্য বোধ
ষ ঘুমালে মাথাব্যথা চলে যাওয়া
ষ পেটে কিছু দিন পরপর ব্যথা হওয়া
ষ পরিবারের অন্য কারো বিশেষত মায়ের মাথাব্যথার সমস্যা থাকা।
মাথাব্যথা, জরুরি অবস্থায় সতর্কতা
কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুদের মাথাব্যথা হলে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ষ হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা
ষ মাথাবাথার সাথে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরে দানা ওঠা
ষ চোখে কম দেখা, অস্বাভাবিক আচরণ
ষ শরীরের কোনো অংশ নাড়তে না পারা
ষ কথা বলতে বা হাঁটতে সমস্যা হওয়া
ষ সকালের দিকে মাথাব্যথার সাথে বমি হওয়া এবং বমির সাথে সাথে মাথাব্যথা বেড়ে যাওয়া।
ষ স্কুলে ক্রমাগত খারাপ ফলাফল করা
ষ মাথাব্যথার সাথে খিঁচুনি।
মাথাব্যাথা-করণীয়
কোনো অবস্থাতেই শিশুদের দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি মাথাব্যথাকে ছোট করে দেখলে চলবে না। প্রাথমিকভাবে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে প্রয়োজনবোধে শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথাব্যথার বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ওষুধ দেয়া হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে যেসব পরীক্ষা করা হয়ে থাকেÑ
ষ চোখ পরীক্ষা
ষ মাথার এক্সরে
ষ সিটি স্ক্যান
ষ এমআরআই
শিশুদের মাথাব্যথা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত ওষুধে সেরে যায়। তবে অবশ্যই প্রাথমিকভাবে এর কারণ এবং প্রকৃতি সম্পর্কে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিশ্চিত হতে হবে। শিশুকে সময়মতো চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা করে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, শিশু নিউরোলজি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা