সালামের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

এ বি এম ওসমান গণি | Nov 03, 2020 05:37 pm
সালামের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

সালামের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য - ছবি সংগৃহীত

 

মানুষ সামাজিক জীব। আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করি। আমাদের চারপাশে নানা রকম, নানা শ্রেণীর, নানা বর্ণের ও নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করে। ঘর থেকে বের হলেই বিভিন্ন মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয় এবং কুশলাদি বিনিময় হয়। মুসলমানদের প্রতিটি কর্মই হতে পারে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, যদি তা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সা:-এর নির্দেশিত পথে হয়ে থাকে। মুসলমানদের কুশল বিনিময় হবে কুরআন ও সুন্নাহ সমর্থিত সালাম আদান-প্রদানের মাধ্যমে।

১. সালামের প্রচলন : মানবজাতির পিতা হজরত আদম আ: থেকে প্রচলিত একটি দোয়া ও নিরাপত্তা প্রদানের সম্মতিসূচক একটি বাণী হলো সালাম। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আ:কে তার যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তার উচ্চতা বা দৈর্ঘ্য ছিল ৬০ হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেন, ‘তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগসহকারে শুনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়। কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, তারা জবাবে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তারা ওয়া রহমাতুল্লাহ বাক্যটি বৃদ্ধি করলেন।’ (সহিহ বুখারি ৬২২৭)

২. সর্বোত্তম আমল : পৃথিবীতে মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যা কিছু করে সবই আমল বা কাজ। এই আমলকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১. নেক আমল বা সৎ কাজ এবং ২. বদ আমল বা খারাপ কাজ। নেক আমলের মধ্যে আবার কিছু আমল রয়েছে, যাকে সর্বোত্তম আমল বা কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। সালাম দেয়াটা সর্বোত্তম আমলের মধ্যে অন্যতম। এ প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত, এক লোক নবী সা:কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেন, ‘তুমি ক্ষুধার্তকে অন্ন দেবে, আর সালাম দেবে যাকে তুমি চেন আর যাকে চেন না।’ (সহিহ বুখারি ৬২৩৬)

৩. সর্বোত্তম ব্যক্তি : বিবদমান দুই ভাইয়ের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি বলা হয়েছে তাকে যে আগে সালাম দেয়। হজরত আবু আইউব রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: বলেছেন, কোনো মুসলিমের পক্ষে তার কোনো ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে, তাদের দু’জনের দেখা সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে, আরেকজন অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম ওই ব্যক্তি যে প্রথম সালাম করবে’ (সহিহ বুখারি, ৬২৩৭)।

৪. সালাম দেয়ার নিয়ম : প্রত্যেকটি কাজের কিছু নিয়ম থাকে। একইভাবে সালাম দেয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: বলেছেন, ছোটরা বড়দেরকে, পথচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দেবে’ (সহিহ বুখারি ৬২৩১)।

৫. মুসলমানের হক : মুসলমানরা পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এক মুসলমানের সাথে অপর মুসলমানের সাক্ষাৎ হলে সর্বপ্রথম হক হলো সালাম দেয়া। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। প্রশ্ন করা হলো- সেগুলো কী, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, (সেগুলো হলো)- ১. কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে; ২. তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে; ৩. সে তোমার কাছে ভালো উপদেশ চাইলে তুমি তাকে ভালো
উপদেশ দেবে; ৪. সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে, তার জন্য তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) রহমতের দোয়া করবে; ৫. সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রƒষা করবে এবং ৬. সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাজার) সাথে যাবে (সহিহ মুসলিম ৫৫৪৪)।

৬. অপরের ঘরে প্রবেশের আগে সালামের মাধ্যমে অনুমতি : এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। এক মুসলমানের দ্বারা যাতে অপর মুসলমানের কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য অন্য কোনো মুসলমানের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তাই তার বাড়িতে প্রবেশের আগে সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদের সালাম দেয়া ছাড়া। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ করো’ (সূরা আন নূর ২৭)।

৭. সালামের মাধ্যমে সওয়াব অর্জিত হয় : সালাম এমন এক সম্ভাষণ, যার মাধ্যমে সওয়াব অর্জিত হয়। সালামের ফজিলত সম্পর্কে হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম। নবী সা: বললেন, ‘১০ (নেকি), তারপর অন্য এক লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। নবী সা: বললেন, ২০, অতঃপর আরেক লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। নবী সা: বললেন, ৩০ (নেকি) (তিরমিজি ২৬৮৯)।

৮. সালামের প্রসার ঘটানো : সালামের প্রসারের দ্বারা পরস্পরে মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হয়। ভালোবাসার দ্বারা ঈমানদার হওয়া যায়। ঈমানদার হলেই জান্নাত লাভ করা যায়। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তোমরা পরস্পরকে মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিসের প্রতি পথনির্দেশ দেবো না যা করলে তোমরা পরস্পরকে মহব্বত করবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও’ (ইবনে মাজাহ ৩৬৯২)।

৯. কবরে সালামের ব্যবহার : দুনিয়ায় সালামের ব্যবহারের পাশাপাশি কবরেও সালামের ব্যবহার রয়েছে। আমরা যখন কবর জিয়ারত করার জন্য কবরস্থানে যাই, তখন সর্বপ্রথম কবরবাসীকে উদ্দেশ করে সালাম দিয়ে থাকি। যা প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা: শিখিয়ে দিয়েছেন। হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: মদিনার গোরস্তানের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কবরবাসীদের দিকে মুখ করে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার।’ অর্থাৎ, হে কবরের বাসিন্দা! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাদেরকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তোমরা আমাদের অগ্রগামী আর আমরা তোমাদের অনুগামী’ (তিরমিজি ১০৫৩)।

১০. জান্নাতে সালামের ব্যবহার : সালাম শুধু দুনিয়া ও কবরে ব্যবহার হয় না, জান্নাতেও সালামের ব্যবহার হবে বলে কুরআন ও হাদিসে প্রমাণ রয়েছে। জান্নাতে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদেরকে সালাম দেবেন। হজরত জাবের রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘বেহেশতিরা যখন তাদের আনন্দ উপভোগে লিপ্ত থাকবে, তখন হঠাৎ তাদের ওপর আলো চমকে উঠবে। তখন তারা মাথা তুলে সে দিকে দেখবে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি তাকিয়ে আছেন। ওই সময় আল্লাহ বলবেন, হে জান্নাতিরা! আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহর কালামে ‘সালামুন কাওলাম মির রাব্বির রাহিম।’ (সূরা ইয়াসিন ৫৮) এ দ্বারা এ সময়ের এবং অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আল্লাহ বেহেশতিদের দিকে, বেহেশতিরা আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবে। ফলে তারা আল্লাহর দিদার হতে চক্ষু ফিরিয়ে অন্য কোনো নিয়ামতের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না এবং আল্লাহ আড়াল হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এক দৃষ্টিতে শুধু সে দিকে অপলকভাবে চেয়ে থাকবে। অবশেষে শুধু তাঁর নূরই বাকি থাকবে’ (মিশকাত ৫০২ পৃষ্ঠা)।

লেখক : খতিব, ইসলামিয়া হাট জামে মসজিদ, উত্তর পতেঙ্গা, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, সিইপিজেড, চট্টগ্রাম।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us