মহানবী সা:-এর বহু বিয়ের কারণ

মহানবী সা:-এর বহু বিয়ের কারণ - ছবি সংগৃহীত
মহানবী সা:-এর প্রথম স্ত্রী হলেন হজরত খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রা:। ২৫ বছরের টগবগে যুবক বিয়ে করেন ৪০ বছরের মহিলাকে। হজরত খাদিজা রা: নবুয়তের দশম বছর তথা হিজরতের তিন বছর আগে ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি মহানবী সা:-এর সাথে ২৫ বছর ঘরসংসার করেন। রাসূূলুল্লাহ সা: স্বীয় যৌবনকাল তার সাথেই অতিবাহিত করেন। তার ৫০ থেকে ৬৩ বছর তথা ১৩ বছর বয়সে আরো ১০টি বিয়ে করেন। একজন পরিণত বয়সের মহিলাকে নিয়ে যৌবনের সোনালি সময় অতিবাহিত করার পর শেষ বয়সে কী কারণে এতগুলো বিয়ে করলেন তা অবশ্যই জানা প্রয়োজন।
বহু বিয়ের কারণ : বিশ্বনবী সা: অনেকগুলো বিধবা নারীকে বিয়ে করার কারণ হলো-
১. আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন : মহানবী সা:-এর বহু বিয়ের প্রধান কারণ হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এ সুবাদে দ্বীন প্রচারের সুযোগ লাভ হয়। তিনি হজরত আয়শা ও হজরত হাফসাকে বিয়ে করে হজরত আবু বকর রা: ও হজরত ওমর রা:-এর দুই কন্যাকে বিয়ে করেন। এরপর হজরত আলী রা:-এর কাছে নিজ কন্যা হজরত ফাতেমা রা:কে বিয়ে দিয়ে নতুন আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করেন। হজরত ওসমান রা:-এর কাছে তিনি দুই কন্যাকে বিয়ে দেন, একজনের মৃত্যুর পর আরেকজনকে। তখন আরবের নিয়ম ছিল যে, তারা আত্মীয়তার সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিত। শ্বশুর-জামাইয়ের সম্পর্ক আরবদের দৃষ্টিতে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
শত্রুতা দূর করা : মহানবী সা: শত্রুতা দূর এবং বন্ধুত্ব স্থাপনের উদ্দেশ্যে অনেকগুলো বিয়ে করেন। হজরত উম্মে সালমা ছিলেন বনু মাখজুম গোত্রের অধিবাসী। এ গোত্রের লোক ছিল আবু জাহেল ও খালিদ ইবন ওলিদ। এ গোত্রের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে খালিদ ইবন ওলিদের শত্রুতা হ্রাস পায়। এমনকি কিছুকাল পর তিনি স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেন। অনুরূপ আবু সুফিয়ানের কন্যা উম্মে হাবিবাকে বিয়ে করার পর তার শত্রুতা ছিল অপ্রকাশ্যে। হজরত জুয়াইরিয়া ও হজরত সুফিয়াকে বিয়ে করার পর বনু মুস্তালিক ও বনু নাজির গোত্র ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছেড়ে দেয়। মহানবী সা: হজরত জুয়াইরিয়াকে বিয়ে করার পর সাহাবায়ে কেরাম ওই গোত্রের ১০০ যুদ্ধবন্দী পরিবারকে বিনাশর্তে মুক্তি দেন। কেননা, তারা হয়ে গেছে রাসূল সা:-এর শ্বশুরপক্ষের লোক।
দ্বীনের প্রচার-প্রসার সম্প্রসারিত করা : মহানবী সা:কে আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রসার করার জন্য। এ কাজের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তিনি তা করেছেন। দ্বীন প্রচারের কৌশল হিসেবে বহু বিয়েও একটি অন্যতম কৌশল। পুরুষদের মধ্যে যেমন দ্বীন প্রচার করা আবশ্যক তদ্রƒপ নারীদের মধ্যেও দ্বীন প্রচার করা আবশ্যক। আর তা আপনজনের দ্বারা যতটুকু সম্ভব অন্যের দ্বারা ততটুকু সম্ভব নয়। মহানবী সা:-এর স্ত্রীগণ স্বীয় গোত্রে দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা গ্রাম ও শহরের যুবতী বৃদ্ধা নির্বিশেষে সব নারীকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন এবং শরিয়তের বিধিবিধান শিক্ষা দিয়েছেন। ফলে নারীদের মধ্যে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে পূর্ণতা লাভ করেছে। পারিবারিক জীবনের রীতিনীতি শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে উম্মুল মুমিনিনরা বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছিলেন তারা এ দায়িত্ব পালন করেছেন সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে হজরত আয়শা রা: ছিলেন অন্যতম।
জাহেলি যুগের প্রথা বিলোপ : জাহেলি যুগ থেকে আরব সমাজে এ কুসংস্কার চালু ছিল যে, পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করলে সে আপন পুত্রের মর্যাদা লাভ করবে। মহানবী সা: পালকপুত্র জায়েদের স্ত্রীকে বিয়ে করে সব কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিলোপ সাধন করেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা আহজাবের ৩৭ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন।
আশ্রয়হীনাদের আশ্রয় দান : অনেক নারীর স্বামী যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। যেমন হজরত সাউদা রা:, হজরত হাফসা রা:, হজরত জয়নব বিনতে খোজাইমা রা: অথবা স্বামীর সাথে কুফুতে গরমিল হওয়া ইত্যাদি কারণে মহানবী সা: তাদেরকে বিয়ে করে আশ্রয়দান করেন এবং তাদের কষ্ট লাঘব করেন।
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী