ফল রাজ্যে সমৃদ্ধির হাতছানি
ফল রাজ্যে সমৃদ্ধির হাতছানি - ছবি সংগৃহীত
নাটোর জেলার তরুণ ফল উদ্যোক্তা শহরেই গড়ে তুলেছেন ফল রাজ্য। বাগানের কমলা, মাল্টা আর ড্রাগনের ভারে নুব্জ গাছগুলো দেখলে মনে হবে ছবির মতো সুন্দর। বাগানের ওয়াচ টাওয়ারে উঠলে চারদিকের সবুজের সমারোহে হারিয়ে যায় মন। নতুন সেচ পদ্ধতি আকৃষ্ট করছে অন্য উদ্যোক্তাদের। সব মিলিয়ে এ ফল রাজ্যে এখন সমৃদ্ধির হাতছানি।
নাটোরের তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ জুলহাস নবী প্রদীপের যেন পথ চলাতেই আনন্দ। শহরের আলাইপুর এলাকায় বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ‘জুলেখা কমপ্লেক্স’ তৈরী করেছেন। আর ওই ভবনেই গড়ে তুলেছেন আধুনিক সুবিধা সম্বলিত জেলা শহরের একমাত্র জিম। এ ভবনের পেছনে দৃষ্টি নন্দন বাসভবন। আর বাসভবন অতিক্রম করলেই ৩০ বিঘার ফল রাজ্য ‘খান গ্রীন পার্ক’। সব মিলিয়ে যেন প্রদীপ রাজ্য!
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অভিষেক হয় ‘খান গ্রীন পার্ক’-এর। ৩০ বিঘার মধ্যে অধিকাংশ এলাকা জুড়ে মাল্টা আর কমলা। মাল্টা আছে বারি-১, মিসরীয় আর কাশ্মিরি জাতের। কমলা দার্জিলিং জাতের। বাগান জুড়ে দুই হাজার পিলার ধরে দাঁড়িয়ে আছে আট হাজার ড্রাগন গাছ।
গত বছর থেকে শুরু হয়েছে উৎপাদিত ফলের বিপণন। খান গ্রীন পার্কের ফল চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে। জানা গেল, ক্রেতারা আগাম ফলের চাহিদা জানিয়ে ফল কিনে নেন। গত বছর সীমিত পরিসরের প্রথম উৎপাদনে বিক্রি হয়েছিল ১০ লাখ টাকার ফল। প্রতি বছর পর্যায়ক্রমে গাছগুলোর উৎপাদন বাড়াত থাকবে।
ড্রাগনের বিপণন মৌসুম মে থেকে অক্টোবর। মাল্টার সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর। আর কমলার ডিসেম্বর। অর্থাৎ যে সময়ে দেশীয় ফলের উৎপাদন না থাকায় ফলের বাজার প্রায় শূণ্য। সবাই সারা বছর ধরে ফল খাবে-মূলত এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রদীপের এ আয়োজন, গড়ে তোলা ফল রাজ্য।
পার্কেই গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি জলাধার। ১০ বিঘার এসব জলাধারে চলছে দেশীয় প্রজাতির সব মাছের উৎপাদন। শুধু মাছ উৎপাদনেই নয়, পার্কের ফলের গাছের গোড়ার মাটিকে আর্দ্র রাখতে ভূমিকা রাখছে এসব জলাধার। গাছে প্রচলিত সেচ প্রদান পদ্ধতির অনুসরণ না করে এ বাগানে অভিষেক হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ভাবিত সর্জন সেচ পদ্ধতির। সারি করে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর উভয় পাশে খানিকটা ড্রেনের মত তুলনামূলক মাটির নীচু অবস্থানে পাম্প মেশিনে প্রয়োজনের সময় দেয়া হচ্ছে পানির প্রবাহ। এতে আর্দ্র থাকছে গাছের গোড়া, শুষ্ক হলে আবার দেয়া হচ্ছে পানির প্রবাহ। দেশে এ পদ্ধতির সংযোজন অন্য কোন ফল বাগানে আছে বলে জানা নেই। পার্কের এ কর্মযজ্ঞে প্রতিদিন কর্মে নিয়োজিত আছেন ১০ ব্যক্তি, সময়ে সময়ে কাজ করেন মৌসুমী শ্রমিক।
খান গ্রীন পার্কে ফল গাছের চারাও তৈরী করা হচ্ছে। বর্তমানে বিক্রির অপেক্ষায় আছে ২০ হাজার ড্রাগন আর ১০ হাজার মাল্টার চারা। মাত্র ৩০ টাকায় ড্রাগন আর ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মাল্টার চারা। অনেক উদ্যোক্তা এবং সৌখিন ব্যক্তিরা নিয়মিত পরিদর্শনে আসছেন এবং কিনছেন তাদের পছন্দের ফল কিংবা গাছের চারা। পাশাপাশি তাঁরা ধারণা নিচ্ছেন চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে। সাশ্রয়ী দামে গুণগত মানের চারা উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে জুলহাস নবী প্রদীপ বলেন, আমি চারা সংগ্রহ করতে যেয়ে অনেকবার প্রতারিত হয়েছি। গলাকাটে দামে নতুন জাতের চারা সংগ্রহ করে নিষ্ফল অনেক গাছও কাটতে হয়েছে। তাই ফল গাছের চারা সংগ্রহে নতুন উদ্যোক্তসহ সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন এ উদ্যোক্তা। পাশাপাশি এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের নজরদারীও দাবি করেন এ উদ্যোক্তা।
তরুণ উদ্যোক্তা প্রদীপকে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে কৃষি বিভাগ। নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার শুরু থেকে বিভিন্ন ফলের প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও প্রযুক্তি সরবরাহ করে যাচ্ছে। নতুন উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায় জুলহাস নবী প্রদীপ সফল হবেন এবং দেশের ফল ভান্ডার খ্যাত নাটোরে রকমারী ফলের উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম।
জুলহাস নবী প্রদীপ বাসস’কে বলেন, খান গ্রীন পার্ককে একটি আদর্শ ফলের বাগান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। উৎপাদনের পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অবদান রাখতে চাই। এ লক্ষ্যে নতুন নতুন পরিকল্পনা আর এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্কটিকে আরো সমৃদ্ধ করা হবে ভবিষ্যতে।
সূত্র : বাসস