রাশিয়া-চীন সামরিক জোট হচ্ছে না!
রাশিয়া-চীন সামরিক জোট হচ্ছে না! - ছবি : সংগৃহীত
শীর্ষ রুশ পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলগতবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন যে মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্ভাবনাময় সামরিক জোট ভারত রাশিয়ার মধ্যকার ঐতিহ্যবাহী অংশীদারিত্বের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কাজেই এ ধরনের জোট অবাস্তব।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি আভাস দিয়েছিলেন যে মস্কো ও চীনের মধ্যে একট সামরিক জোট হতে পারে, তবে সাধারণভাবে এর প্রয়োজন নেই।
কার্নেগি মস্কো সেন্টারের পরিচালক দিমিত্রি ত্রেনিন বলেন, চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট রাশিয়ার জন্য হবে অবাস্তব। এটি রাশিয়ার হাত বেঁধে ফেলবে এবং ভারতসহ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী অংশীদারদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় যেতে বাধ্য করবে।
ইন্টার তাসে দিমিত্রি বরেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের দরকার নেই রাশিয়ার। এ ধরনের ইউনিয়ন উভয়পক্ষের হাত বেঁধে ফেলবে, প্রতিবেশীদেরকে, বিশেষ করে ভারতকে, সন্ত্রস্ত্র করে রাশিয়অর সাথে অংশীদারিত্ব ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করবে।
অধিকন্তু, আনুষ্ঠানিক জোট মিত্র কাঠামোতে ক্রমপরম্পরার প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। দিমিত্রির মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি একইসাথে রাশিয়া ও চীন উভয়ের ওপর হামলা চালায়, তবেই কেবল মস্কো ও বেইজিংয়েরমধ্যে সামরিজ জোট গড়ে ওঠতে পারে।
তিনি বলেন, এমন অনুমান করা সম্ভব যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসন চালালে রাশিয়াকে চীন রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করলেও যুদ্ধে অংশ নিতে বিরত থাকবে চীন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সামরিক সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রেও সম্ভবত আমাদের প্রতিক্রিয়াও এমন হবে।
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কয়েক দশক ধরে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই সম্পর্ক কেবল ক্রেতা-বিক্রেতার নয়, বরং অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মস যৌথভাবে উৎপাদনেও রয়েছে। তাছাড়া পরমাণু সাবমেরিন সরবরাহ ও জঙ্গিবিমান উৎপাদনের লাইসেন্সও ভারতকে দিয়েছে রাশিয়া।রাশিয়া বর্তমানে ভারতের প্রতিরক্ষা চাহিদর ৬০-৭০ ভাগ পূরণ করে থাকে।
সূত্র : ইকোনমিক টাইমস
মার্কিন হস্তক্ষেপেই আফগান ইরাক লিবিয়া ও সিরিয়ার এই দশা
গ্লোবাল টাইমস
আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় আমেরিকার হস্তক্ষেপের কারণে এসব দেশ চরম দুর্দশার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে বলে মন্তব্য করেছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লি জিয়ান গত রোববার এক টুইটার বার্তায় এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকার প্রধান কারণ আমেরিকার হস্তক্ষেপ ও সঙ্কট সৃষ্টির প্রচেষ্টা। আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রিপোর্টের বরাত দিয়ে ঝাও আরো লিখেছেন, ‘বাস্তব পরিস্থিতি এ কথা প্রমাণ করছে যে, বিশ্বের রাজনৈতিক নিরাপত্তা আমেরিকার কারণে বারবার বিপন্ন হয়েছে।’
সম্প্রতি ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকা বিশ্বের ৮০টি দেশে যুদ্ধ চালাতে ৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ করেছে। এসব যুদ্ধ ও যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সহিংসতায় আট লাখ আদম সন্তান প্রাণ হারিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ সম্পর্কে আরো বলেন, আমেরিকা তার নিজস্ব চিন্তাচেতনা ও আকাক্সক্ষাগুলো অন্যান্য দেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে এবং বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে হিমালয় থেকে দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত অঞ্চলে চীনকে রুখতে মিত্রদের সাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের রাশ টেনে ধরতে দেশটি আগের থেকে বেশি গুরুত্বের সাথে সমমনাদের নিয়ে কাজ করতে চায় বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।
মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত (কোয়াড) একে অন্যকে যেকোনো বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য একত্রিত হচ্ছে। যদি অন্য কোনো দেশও এই আলোচনায় বা এসব কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে চায় তাহলে তাদের জন্য দরজা সবসময়ই খোলা। এর আগে অক্টোবরের ৬ তারিখে টোকিওতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে দ্বিতীয়বারের মতো কোয়াডের বৈঠকে মিলিত হন।
মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মুক্ত ও উন্মুক্ত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল হিসেবে দেখতে চাওয়ার অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করবে এ অঞ্চলের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশগুলো। অবশ্য মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্যে জানানো হয়, কোয়াড কোনো জোট নয় এবং জড়িত দেশগুলোর পরস্পরের প্রতি কোনো আলাদা দায়বদ্ধতা এখানে নেই। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, কোয়াডকে কোনো জোট বলা উচিত নয়। এটি একটি জোট- এ ধরনের আলোচনাকে যুক্তরাষ্ট্র সরিয়ে রাখতে চায়। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিতও হয়নি। এতে যেমন কোনো দায়বদ্ধতা নেই এবং এর পাশাপাশি এতে কোনো দেশের সদস্যপদ পাওয়ার মতো ব্যাপারও নেই।