মালদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনায় মূল্য দিতে হবে ভারতকে!

তারা কারথা | Nov 02, 2020 05:35 pm
মালদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনায় মূল্য দিতে হবে ভারতকে!

মালদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনায় মূল্য দিতে হবে ভারতকে! - ছবি সংগৃহীত

 

নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ২+২ বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ভারতকে যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, চীনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতে ভারতের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, সেই একই ধরণের কথা তিনি মালদ্বীপ আর শ্রীলংকাতেও বলেছেন পম্পেও, বেইজিং যেটা নিয়ে খুবই বিরক্ত। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহের সাথে বৈঠকে পম্পেও বলেছেন যে, চীন মালদ্বীপে অরাজকতা নিয়ে এসেছে, যদিও প্রেসিডেন্ট সোলিহ নিজে একবারও বেইজিংয়ের নাম নেননি, যদিও চীনের কাছে মালদ্বীপের এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ৫৪ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের পর মালদ্বীপে মার্কিন দূতাবাস চালুর ঘোষণা দিয়েছেন পম্পেও। চীনকে এটা মাথায় রাখতে হবে। এদিকে, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের নীতিও ২০১৩ সালের তুলনায় দারুণভাবে পাল্টে গেলো। সে সময় নয়াদিল্লী এ অঞ্চলে যেকোনো মার্কিন অবস্থানের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল। তাহলে কি এমন বদলে গেলো?

ভারত খুব সতর্কতার সাথে এই তথ্য ফাঁস করেছে যে, মালেতে নয়াদিল্লির কর্মকর্তাদের কাছেই প্রথম ‘ফ্রেমওয়ার্ক ফর অ্য ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি রিলেশানশিপ’ চুক্তিটি দেখানো হয়। এটা কৌতুহল-উদ্দীপক কারণ চুক্তিটা স্বাক্ষরিত হয় খুবই গোপনে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিয়া দিদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি অবশ্য।

পরিবর্তিত ভারতীয় মানসিকতা

তাহলে পার্থক্যটা এখন কোথায়? এটা শুধু চীনা বিনিয়োগকে খাটো করার বিষয় নয়। ২০১২ সালে মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়নে একটি চীনা ফার্মের সপক্ষে ভারতীয় অবকাঠামো কোম্পানি জিএমআর গ্রুপকে সরে যেতে বলা হয়েছিল। সেই কারণেই নতুন সরকারের পেছনে ভারত বিনিয়োগ করছে, নতুন অনুদান আর ঋণ সুবিধা দিচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্ট সোলিহের অধীনস্থ মালদ্বীপের সরকার বিশ্বস্ত হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লা শাহিদ চীনের ব্যাপারে ইতিবাচক কথা বলেছেন এবং পর্যটন খাতে চীনের অবদানের কথা বলেছেন। ভারত যে দিন পর্যটন খাতের একক বৃহত্তম প্রকল্প গ্রেটার মালে কানেকটিভিটি প্রজেক্টের ঘোষণা দিলো, তার কয়েকদিন পরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেন। এর পরপরই বিরোধী জোটের নেতৃত্বে বিশাল ভারতবিরোধী বিক্ষোভ হয় এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতীয় কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর সুরক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে, চীন বা তার সমর্থকরা ভারতের প্রভাবকে সহ্য করবে না।

তৃতীয়ত, প্রেসিডেন্ট সোলিহ যদিও ‘জয়েন্ট ওশান অবজার্ভেশান সেন্টার’ গঠনের জন্য চীনা প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন, কিন্তু দুজন মাত্র অ্যাডভান্সড লাইন হেলিকপ্টারের পাইলট আর অনিয়মিত সেনা মেডিকেল টিম পাঠিয়ে ভারত তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে না। তাছাড়া একটা সার্বভৌম দেশে চীনের যুদ্ধজাহাজ প্রবেশও ঠেকাতে পারবে না ভারত, যেটা ২০১৭ সালে মালেতে ঘটেছিল। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ স্থায়ীভাবে অবস্থান করলে হয়তো সেটা ঠেকানো যাবে, কিন্তু সেটাই হলো সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন অবস্থান এখানে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চীনা অবস্থানের চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে। সে কারণে মালদ্বীপ থেকে চীনকে দূরে রাখার জন্য মনে হচ্ছে ভারতকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে।

একটি পক্ষ গড়ে উঠছে

এই মুহূর্তে অবশ্য যে কোন মূল্যকে মেনে নেয়া হবে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে ভারতের জিডিপি ৯.৬ শতাংশ কমতে চলেছে। সরকারী ঋণ আর জিডিপির অনুমাত ৯০ শতাংশে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাদাখে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যায় বাড়ানোর বিষয়টি বাদ দিলেও এই অর্থনৈতিক অবস্থাটা ভয়াবহ। প্রতিরক্ষা বাজেট এখনও জিডিপির ২.১ শতাংশ। সঙ্কটের সময় চীনের বিরুদ্ধে যে নৌ পদক্ষেপকে যৌক্তিক মনে হয়, সেটা হলো ভারত মহাসাগরে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নৌবাহিনীকে ডেকে আনা। ২+২ সম্মেলনের সাথে মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় মালেতে ‘জলদস্যু-মোকাবেলার’ নামে মার্কিন নৌ জাহাজ মোতায়েন করা হবে। মালেতে একজন মার্কিন দূতাবাস অবস্থান নিবেন, যে জন্য দূতাবাস খোলা হয়েছে।

ভারতের সাথে যে চারটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের, সেগুলো অনুযায়ী ‘ইস্যু ভিত্তিক’ ভূ-স্থানিক তথ্য পাবে ভারত। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ঠিক করবে কোন তথ্যটা তাদের বিনিময় করা উচিত। পাকিস্তানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যের চিত্র দারুণভাবে বদলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। চীনের ব্যাপারেও বাছাইকৃত তথ্যই দেয়া হবে। তবে সুবিধা যেটা হবে, সেটা হলো সঙ্কটের সময় ভারত একটা শক্তি অনুভব করবে।

সূত্র : দ্য প্রিন্ট

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us