হবু মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এ সব মনে রাখতেই হবে

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় | Nov 02, 2020 03:49 pm
হবু মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এ সব মনে রাখতেই হবে

হবু মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এ সব মনে রাখতেই হবে - ছবি সংগৃহীত

 

মা হওয়া মুখের কথা নয়। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হবু মায়েদের ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ১০ জনের রক্তচাপ বেড়ে যায়।চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক না রাখলে হবু মা ও গর্ভস্থ সন্তানের নানান রকম বিপদের ঝুঁকি থাকে। সন্তান গর্ভে আসার ২০ সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে রক্তচাপের হেরফের হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি, জানালেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।

গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে গেলে অনেক সময় হবু মায়েদের প্রস্রাব দিয়ে প্রোটিন বেরিয়ে যায়। প্রেশার বাড়লে ইউরিন টেস্ট করে এটা দেখে নেয়া হয়।এই দুই সমস্যাকে একসঙ্গে বলে প্রিএক্লাম্পশিয়া।এই অবস্থা মা ও সন্তান দুজনের জন্যেই ঝুঁকিপূর্ণ।তাই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হয়।

এই সময় প্রয়োজন হলে হবু মাকে ভর্তি রেখে নিয়মিত মনিটরিং করার দরকার হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধের সাহায্যে রক্তচাপ ঠিক রাখা যায়। গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বাড়ার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, জানান অভিনিবেশ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ধারণা, সন্তান গর্ভে এলে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন এবং অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার জন্য শরীরে স্ট্রেস হয় বলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদের হাই ব্লাড প্রেশারের ঝুঁকি বেশি।তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রসবের দু-তিন মাসের মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়।কিন্তু এদের মধ্যে কিছু সদ্য মায়ের প্রেশার আর স্বাভাবিক হয় না।

এ ক্ষেত্রে তাকে নিয়মিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাবার সঙ্গে সঙ্গে ওজন স্বাভাবিক রাখা, সঠিক খাবার খাওয়া ও লবণ কম খাবার মতো কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে বলে পরামর্শ অভিনিবেশের।গর্ভাবস্থায় রক্তের চাপ অনিয়ন্ত্রিত হলে বা বেশি থাকলে প্রিএক্লাম্পশিয়ার মতো সমস্যার ঝুঁকি খুব বেশি।

যে সব মেয়ের উচ্চ রক্তচাপ ছিল, সেই অবস্থাতেই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন তাদের রক্তচাপ আরো বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রিএক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। ১৮ বছরের কম বয়সে মা হতে গেলেও এই জটিল সমস্যার ঝুঁকি থাকে।আবার যাদের প্রথম সন্তানের জন্মের সময় রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে।ডায়াবিটিস থাকলেও গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।এ ছাড়া বেশি বয়সে প্রথমবার মা হতে গেলে প্রিএক্লামশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

হবু মা কিন্তু চট করে বুঝতে পারবেন না যে তার রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের সে রকম নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ নেই।কিন্তু রক্তচাপ বাড়তে শুরু করলে মাথা ঘোরা, মাথার যন্ত্রণা, হাঁপিয়ে ওঠা, কাজে অনীহা, দুর্বল বোধ করা এবং পা ফোলার মতো কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়। তাই গর্ভে সন্তান এলেই হবু মায়ের রক্তচাপ নিয়মিত চেক করা জরুরি। কোনো উপসর্গ দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা চলবে না।রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার একমাত্র উপায় নির্দিষ্ট মাত্রার ওষুধ খাওয়া।সন্তান গর্ভে এলে ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।কিন্তু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ না খেলে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে।অনেক নিরাপদ ওষুধ আছে যা মা ও শিশুর জন্যে উপযুক্ত।গর্ভস্থ ভ্রূণ ও মায়ের সুস্থতার জন্যে ওষুধ খাওয়া জরুরি।অভিনিবেশ জানান, এ দেশে প্রসূতিদের মৃত্যুর একটা বড় কারণ উচ্চ রক্তচাপ।

রক্তচাপ বেশি থাকলে ভ্রূণের শরীরে ঠিক মতো রক্ত চলাচল করতে পারে না বলে ভ্রূণ ঠিক মতো বেড়ে উঠতে পারে না। এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে।এ ছাড়া হবু মায়ের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।কিডনি ফেলিওর ও খিঁচুনির আশঙ্কা থাকে।

অভিনিবেশ জানান, রয়্যাল কলেজ অফ অবস্ট্রেটিশিয়ান ও গায়নোকলজিস্ট-এর গাইড লাইন অনুযায়ী প্রতি ২০০ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে একজনের মারাত্মক (সিভিয়র) ধরনের প্রিএক্লাম্পশিয়া হয়। উপসর্গ হিসেবে ভয়ানক মাথার যন্ত্রণা করে ব্যথার ওষুধ খেয়েও কোনো কাজ হয় না, চোখের সামনে বিদ্যুৎ চমকের মতো আলোর ঝলকানি দেখা যেতে পারে, পাঁজরের নিয়ে ব্যথা করে, হার্ট বার্ন অর্থাৎ গলা বুক জ্বালা করে যা অ্যান্টাসিড খেয়েও কমে না, নাগাড়ে ঘাম হয় এবং শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ বোধ হয়।এ রকম হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

প্রয়োজন হলে রক্তচাপ কমানোর ওষুধ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা বুঝে গর্ভস্থ শিশুকে নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীর আলো দেখানো হয়।আশার কথা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা চলে যায়।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us