করোনার পর অন্য রোগের ঝুঁকি কতটা?

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় | Nov 01, 2020 08:18 pm
করোনার পর অন্য রোগের ঝুঁকি কতটা?

করোনার পর অন্য রোগের ঝুঁকি কতটা? - ছবি : সংগৃহীত

 

করোনাভাইরাস এর মধ্যেই বেশিরভাগ বাড়িতেই হানা দিয়েছে। চেনাশোনা আত্মীয়-স্বজন পাশের বাড়ি, নিজের বাড়িতেও করোনাভাইরাসের প্রবেশ আটকানোর যাচ্ছে না। কোভিড সংক্রমণ সেরে যাওয়ার পরও দুর্বলতা কাটছে না। কারো শুকনো কাশি, কারো বুকে ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্ট।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক মাসের মধ্যে বেশ কিছু কোভিড থেকে সেরে ওঠা মানুষ আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। ব্যাপারটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করেন চেস্ট মেডিসিনের চিকিৎসক অশোক সেনগুপ্ত।

অনেকেই সাধারণ ভাইরাল ফিভারের সঙ্গে কোভিডকে তুলনা করছেন। তাই কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরে পরেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আসলে অতিমারি সৃষ্টিকারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর কোন মানুষের ঠিক কী ধরনের সমস্যা হতে পারে সে বিষয়টা এখনও পরিষ্কার নয়। সাধারণ জ্বর সর্দির তুলনায় কোভিডের ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং অন্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

সংক্রামক রোগ চিকিৎসক দেবকিশোর গুপ্ত বলেন, কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর রোগীকে অত্যন্ত সাবধানে থাকতে হয়। সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেয়া ছাড়াও সেকেন্ডারি ইনফেকশনের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। সেরে ওঠা মানুষদের মধ্যে পোস্ট কোভিড ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া এমনকি ছত্রাকের সংক্রমণের ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।

দেবকিশোর জানান, যে সব করোনা আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের বেশিরভাগকে স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হয় বলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রায় তলানিতে এসে দাঁড়ায়। তাই বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি পুনরায় অন্যান্য সংক্রমণ এড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত এবং বেপরোয়া ভাব ত্যাগ করে আরও বেশি সাবধানে থাকা উচিত পরামর্শ দেবকিশোরের।

অশোক সেনগুপ্তর মত, কোভিড-১৯ ভাইরাস আমাদের শরীরের প্রধান অঙ্গগুলিকে অকেজো করে দিতে পারে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ফুসফুসের। এই অঙ্গে সংক্রমণজনিত নানা রকম প্যাচ তৈরি হয়, যা ওষুধ দিয়ে এবং স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় নিয়মে শুকিয়ে ওঠে। এগুলো পরবর্তী পর্যায়ে ফাইব্রোসিসে পরিণত হতে পারে।

কোন কোভিড আক্রান্তের কত ফাইব্রোসিস হবে তা আগে থেকে বোঝা যায় না। এ ছাড়া করোনারি আর্টারি অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনিতেও কোভিড সংক্রমণের প্রভাব পড়তে পারে। সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর আক্রান্তদের অনেকেরই খুসখুসে হয়, অত্যন্ত দুর্বল বোধ করেন, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠেন, হাঁটাচলা করতে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কারও বুকে চাপ ধরা ভাব থাকতে পারে।

লাংস ফাইব্রোসিস হয়েছে কি না বোঝার জন্যে সিটি স্ক্যান করা দরকার। অনেকেই নিজের ইচ্ছে মতো সিটি স্ক্যান করান। উপসর্গ থাকলে চিকিৎসক রোগীকে দেখে বুঝলে তবেই সিটি স্ক্যান করাতে হবে। সকলেরই সিটি স্ক্যান করার দরকার নেই। কাশি চলতে থাকলে চিকিৎসক মনে করলে স্ক্যান ও লাং ফাংশন টেস্ট ও সিক্স মিনিট ওয়াক টেস্ট করাতে হতে পারে বলে পরামর্শ অশোক সেনগুপ্তর। কোভিড নেগেটিভ হওয়ার ২-৩ সপ্তাহ পর ফলো-আপ চিকিৎসায় এই বিষয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট করানো উচিত।

নামী বেসরকারি হাসপাতালে ‘পোস্ট কোভিড কম্প্রিহেন্সিভ অ্যাসেসমেন্ট’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত সেরে ওঠার পর কোনও সমস্যা হলে ফলো-আপ করা হয়। কোনো রকম জটিলতা সৃষ্টির আগেই সঠিক চিকিৎসা করে রোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়।

অশোক বলেন, কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে এই পরিষেবা চালু হওয়া দরকার। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক ফলো-আপ করালে পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন জনিত মৃত্যু অনেকাংশে আটকে দেয়া যাবে।

ফিজিক্যাল অ্যাণ্ড রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ক্ষেত্রমাধব দাশ জানান, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর ব্যায়াম বা খেলাধুলো শুরু করার জন্যে তাড়াহুড়ো করলে আচমকা বিপদ, এমনকি মৃত্যুরও ঝুঁকি থাকে। তাই কিছু দিন বিশ্রাম নেয়ার পর চিকিৎসকের অনুমতি নিয়েই ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে শরীরচর্চা শুরু করতে পারেন।

আর পাঁচটা সাধারণ ভাইরাল ফিভারের তুলনায় কোভিডের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও মাংসপেশীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। উপসর্গহীন রোগীদেরও ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। মৃদু-উপসর্গযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে, পুরোপুরি উপসর্গমুক্ত হওয়ার দু সপ্তাহ বাদে হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকলে তবেই চিকিৎসকের নজরে থেকে পর্যায়ক্রমিক শরীর চর্চা শুরু করা উচিত, পরামর্শ ক্ষেত্রর।

তীব্র-উপসর্গযুক্ত এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি সাবধানতার প্রয়োজন। সবাইকেই মায়োকার্ডাইটিসের রোগী ধরে নিয়ে অন্তত তিন থেকে ছ মাস বিশ্রাম নিতে বলা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ধাপে ধাপে পরীক্ষা ও পর্যায়ক্রমে হালকা থেকে ভারী ব্যায়ামের অনুমতি দেয়া হয়।

চিকিৎসকরাই একটা ব্যাপারে একমত যে কোভিড আক্রান্তদের অসুখ সেরে ওঠার পর বেপরোয়া মনোভাব পোষণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো শারীরিক সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কোভিড থেকে সেরে উঠলেও সাবধানে থাকুন, ভালো থাকুন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us