রাসূল সা:-এর জন্মদিন-সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
মদিনা শরিফ - ছবি সংগৃহীত
রাসূল সা:-এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। এ দেশে কিছু আলেম আবার দিনটিকে ঈদে আযম হিসেবে পালন করে। পাকিস্তান আমলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক দিনটিকে ‘সিরাতুন্নবী’ হিসেবে পালন করা হতো। বাংলাদেশ আমলে রাসূলের সা:-এর শুভজন্মদিনটিকে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদ ও মুসলিম পণ্ডিতগণের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নবী সা:-এর শুভ জন্মদিনের সঠিক তারিখটিকে নির্ধারণ করা হয়নি। সাহাবিগণ, তাবেয়িগণ, তাবে-তাবেয়িগণের কেউ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেছেন- এমনটি জানা যায়নি।
যে দিন থেকে তিনি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা: হয়েছেন, সে দিন থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্তকেই বলা হয় ‘সিরাতুন্নবী’। অন্য দিকে ঈদে মিলাদুন্নবীর সম্পর্ক মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ হতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ পর্যন্ত। সিরাতুন্নবীর সা: আলোচনা যেকোনো সময় যেকোনো তারিখে ও স্থানে হতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর আলোচনাকে চিরজাগরুক করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, আমি তোমার (নবীর) আলোচনাকে চিরজাগরুক করেছি। (সূরা আল-এনশেরাহ : ৪) প্রত্যেহ আজানে, ইকামতে, নামাজে পঠিত দুরুদে ও সিরাতের আলোচনায় নবী সা:-কে স্মরণ করার ব্যবস্থা স্বয়ং আল্লাহ নিজেই করে দিয়েছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী বা ঈদে আজম হচ্ছে মানুষের প্রণীত এবং আল্লাহ তায়ালার ব্যবস্থাপনার অতিরিক্ত। দ্বীন ইসলামে এই অতিরিক্ত সংযোজনই বিদআত (সহিহ বুখারি হাদিস নং-১৭১৮, সুনানু আবু দাউদ হাদিস নং-৪৬০৬, সুনানু ইসনে মাযাহ হাদিস নং-১৪) একদল বলবে শুভ জন্মদিন, নবীদিবস, আরেক দল বলবে সিরাতুন্নবী সা: দিবস, আরেক দল বলবে ঈদে মিলাদুন্নবী ঈদে আজম দিবস। এসবই নবী সা:-এর শানে চরম বেয়াদবি। তা ছাড়া যেখানে আল্লাহ স্বয়ং ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তার ওপর মানুষের হস্তক্ষেপ করা গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয় (সূরা আহজাব : ৩৬)। মহান আল্লাহ বলেন, হে রাসূল আপনি বলে দিন আমি কি তোমাদের কে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে খরব দেবো। দুনিয়ার জীবনে যাদের আমল বরবাদ হয়েছে। অথচ তারা ভাবে তারা সুন্দর সুন্দর আমল করে যাচ্ছে। (সূরা-কাহফ : ১০৩-১০৪) ইমাম কুরতুবি রহ: বলেন, এ অবস্থা দু’টি কারণে সৃষ্টি হয়। ১. ভ্রান্ত আকিদা, ২. লোকদেখানো মনোবৃত্তি। (সূত্র : তাফসিরে মারেফুল কুরআন পৃ : ৮২৮) বিষয়টি সবার বিবেচনার জন্য নবী সা:-এর জন্ম সাল ও জন্ম তারিখের একটি সচিত্র বিবরণী নিম্নে পেশ করা হলো।
রাসূল সা:-এর জন্মসন ও জন্মতারিখ প্রসঙ্গে :
জন্মসন ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের পক্ষে
১. মুফতি মহাম্মদ শফী রহ:, সিরাতে খাতিমুল আম্বিয়া, ৩য় পৃষ্ঠা।
২. ইসলামী বিশ্ব কোষ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৬।
৩. সিরাতুননবী, আল্লামা শিবলী নোমানী, ১ম খণ্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা।
৪. রহমাতুল্লিল আলামিন, কাজী মুহাম্মদ সোলায়মান (দিল্লি), পৃষ্ঠা-৪০।
৫. রাবেতা আলমে আল ইসলাম কৃর্তক পুরস্কারপ্রাপ্ত, ছফিউর রহমান আল মোবারকপুরী লিখিত গ্রন্থ আর রাহীকুল মাখতুমের ৫৪ পৃষ্ঠা।
জন্মসন ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের পক্ষে :
১. শেষনবী, খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ, পৃষ্ঠা-২০।
২. নবীসম্রাট, মাওলানা মোবারক করিম জওহর, পৃষ্ঠা-৪৩।
৩. সৈয়দ আমির আলীর মতে ২০ আগস্ট ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ।
৪. স্যার জাফরুল্লাহ খানের মতে ২০ এপ্রিল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ।
৫. মাওলানা মুহাম্মদ আবুল খয়ের সিদ্দিকীর মতে ৮ জুন ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ।
জন্মতারিখ সম্পর্কে
১. ইবনে খালদুন ও কামেল প্রমুখ ১২ রবিউল আউয়াল বলেছেন।
২. হজরতের জন্মতারিখ ২ ও ১৩ রবিউল আউয়াল (সিরাতে সাইয়িদুল আম্বিয়া ১১৭ পৃষ্ঠা)।
৩. ১৮ রবিউল আউয়াল (আলবিদা ওয়ান নাহিয়া ২য় খণ্ড ২৪২ পৃষ্ঠা)
৪. ড: মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে ৮ রবিউল আউয়াল।
৫. ১ রবিউল আউয়াল (আল ইস্তাব-১৩ পৃষ্ঠা)।
৬. ৯ রবিউল আউয়াল, ২০ এপ্রিল, সোমবার হজরত সা:- জন্মগ্রহণ করিয়াছেন (মোস্তফা চরিত)।
৭. ১২ রবিউল আউয়াল (সিরাতে ইবনু হিশাম, ৩৬ পৃষ্ঠা)।
৮. আবুল ফিদার মতে ১০ রবিউল আউয়াল।
৯. ৯ রবিউল আউয়াল, সোমবার রাসূলুল্লাহর জন্মদিন (কাসাসুল কুরআন ৪র্থ খণ্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা)।
১০. মিসরের জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশার মতে ৯ রবিউল ছাড়া সোমবার হয় না।
১১. আবু মা’শার নাজীহ মাদানীর মতে ২ রবিউল আউয়াল (তাবাকাতে ইবনু সা’দ ১ম খণ্ড ৮০ পৃষ্ঠা)।
১২. আল্লামা কাসতালী ও যারকানী ৮ রবিউল আউয়ালকে গ্রহণ করেছেন।
১৩. ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ওমর আল ওয়াকেদী ১০ রবিউল আউয়ালকে গ্রহণ করেছেন।
১৪. ইবনে সা’দ তার বিখ্যাত আততাবাকাতুল কুবরায় ২ ও ১০ রবিউল আউয়াল উল্লেখ করেছেন।
১৫. ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক ১২ রবিউল আউয়াল গ্রহণ করেছেন।
১৬. হজরত সা:-এর ১৭ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন (প্রাগুক্ত-পৃষ্ঠা-২৫০)।
আল্লাহ বলেন : ‘ওয়া রাফা আনা লাকা যিকরাক’ অর্থ আমরা আপনার স্মরণকে (নবীর স্মরণকে) চির জাগরুক করেছি (সূরা আল ইনশিরাহ : ৪)। কলেমায়ে, আজানে, ইকামতে, দরুদে, তাশাহুদে, সালাতে, দু’আতে প্রতিদিনের জন্য হজরত সা:-কে স্মরণ করার কি সুন্দর ব্যবস্থাই না করেছেন স্বয়ং আল্লাহ নিজেই।
অতএব ১২ রবিউল আউয়ালের ‘ঈদে মিলাদুন্নবী পালন’ আল্লাহর দেয়া ব্যবস্থার অতিরিক্ত নয় কি? তা ছাড়া ১২ রবিউল আউয়াল তারিখটি কি সংশয়মুক্ত? আল্লাহ বিষয়টিতে সবাইকে সহিহ বুঝই দান করুন। আমিন।