জাহান্নাম থেকে মুক্তি : সহজ ১০ আমল
জাহান্নাম থেকে মুক্তি : সহজ ১০ আমল - ছবি সংগৃহীত
সৃষ্টিকুলের সেরা জীব হিসেবে মানুষের রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। কিন্তু মানুষ অন্যায়, অনাচার-পাপাচার দ্বারা নিজের সাদা জীবনটাকে কয়লার মতো কালো বানিয়ে ফেলেছে। পাপের পথে দিবানিশি চলতে চলতে জাহান্নামের পথে এক পা অগ্রিম বরাদ্দ রেখে দিয়েছে। শ্রেষ্ঠ জীব থেকে অতি নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়েছে সে।
এতদ্বসত্ত্বেও মহান আল্লাহ মানুষকে সুযোগ দিলেন কয়লা ধুয়ে পরিষ্কার করার, জাহান্নামে বরাদ্দ রাখা আসন বাতিল করার। পাঠিয়েছেন তিনি নবী-রাসূল। মনোনীত ধর্ম হিসেবে নির্বাচন করেছেন ইসলামকে। ইসলাম সর্বদা মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ দেখায়। আর ইসলামে রয়েছে এমন কিছু আমল, যা মানুষকে খুব সহজে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়।
১. গীবতমুক্ত জীবনযাপন করা : প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করে, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন (তিরমিজি : ১৯৩১)।
২. দৈনিক ৩৬০ বার তাসবিহ-তাহলিল, তাকবির আদায় করা : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক আদম সন্তানকেই ৩৬০টি গ্রন্থির ওপর সৃষ্টি করেছেন (আর প্রতিটি গ্রন্থির কিছু সাদকা রয়েছে)। সুতরাং যে ব্যক্তি ওই সংখ্যা পরিমাণ ‘আল্লহু আকবার’ বলল, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষের চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা অথবা একটি হাড় সরাল, ভালো কাজের আদেশ করল কিংবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল (এবং সব মিলে ৩৬০ সখ্যক পুণ্যময় কাজ করল), সে ওই দিন এমতাবস্থায় সন্ধ্যা যাপন করল, সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে দূরে করে নিলো (সহিহ মুসলিম : ২২২০)।
৩. চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার সাথে সালাত আদায় করা : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) সাথে জামাতে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে দুটি জিনিস থেকে মুক্তি দিবেন। ১. জাহান্নাম হতে মুক্তি ২. মুনাফিকি হতে মুক্তি। (তিরমিজি : ২৪১)।
৪. বেশি বেশি দান করা : আদি ইবনে হাতেম রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারিম সা:কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো যদিও এক টুকরো খেজুর সাদকা করে হয়’ (সহিহ বুখারি : ১৪১৭)।
৫. জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করা : আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহ তায়ালার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জাহান্নাম হতে মুক্তি চায়, জাহান্নাম তখন আল্লাহ তায়ালার কাছে বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন (তিরমিজি : ২৫৭২)
৬. জোহরের ফরজ নামাজের পূর্বে চার এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা : রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সালাত পড়বে , মহান আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। (ইবনে মাজাহ : ১১৬০)
৭. মানুষের সাথে মধুময় আচরণ : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো না কোনো ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোনো ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়) সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী। (তিরমিজি : ২৪৮৮)
৮. চোখকে গুনাহ থেকে হেফাজত করা : ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। ১. আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে। ২. আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে রাত পার করে (তিরমিজি : ১৬৩৯)।
৯. ফরজ রোজার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল রোজা রাখা : প্রিয় নবী সা: বলেন, ‘রোজা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ’ (সহিহ বুখারি : ১৮৯৪)।
রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা ওই এক দিনের বিনিময়ে তার থেকে জাহান্নামকে ৭০ বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন (বুখারি : ২৮৪০)।
১০. কন্যাসন্তানদের ভালোভাবে লালন-পালন করা : হজরত আয়শা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দুটি কন্যা সঙ্গে করে আমার কাছে এসে কিছু ভিক্ষা চাইল। আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিয়ে দিলাম। খেজুরটি সে দুই ভাগ করে কন্যা দুটিকে দিয়ে দিলো। তা থেকে সে নিজে কিছুই খেল না। এরপর সে উঠে বের হয়ে গেল। তারপর নবীজী আমাদের কাছে এলে তাঁর কাছে ওই ঘটনা শোনালাম। ঘটনা শুনে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি একাধিক কন্যা নিয়ে সঙ্কটাপন্ন হবে এবং সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। সে কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল (পর্দা) হবে (সহিহ বুখারি : ১৪১৮)।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা