কাশ্মিরে মুসলিম কমছে, বাড়ছে হিন্দু
কাশ্মিরে মুসলিম কমছে, বাড়ছে হিন্দু - ছবি : সংগৃহীত
সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মির এলাকার ভূমি আইনে যে সংস্কার এনেছে, সেটা ওই এলাকার ‘স্থায়ী বাসিন্দাদের’ আগের অধিকারকে বাতিল করে দিয়েছে। এই সংস্কারের ফলে এলাকার বাইরের অধিবাসীরা সেখানে অ-কৃষি জমি কিনতে পারবে।
এই সিদ্ধান্তকে উদযাপন করেছে বিজেপির নেতা এবং মুখপাত্ররা। ফলে কাশ্মীর এলাকার রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ দিন ধরে যে আশঙ্কা জানিয়ে আসছিল যে ওই এলাকার জনমিতিক চেহারা স্থায়ীভাবে বদলে ফেলা হবে, সেই আশঙ্কাই এখন আরো জোরালো হলো। মঙ্গলবার ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আব্দুল্লাহ টুইটারে বলেছেন যে, কেন্দ্র এখন ‘টোকেন ব্যবস্থাটাকেও’ তুলে দিয়েছে এবং ‘জম্মু ও কাশ্মিরকে এখন বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে’।
২০১১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যাচ্ছে যে, জম্মু ও কাশ্মিরের ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার চেহারাটা বিগত অর্ধ শতাব্দি ধরে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালের ৫ আগস্টে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়, এবং এই রাজ্যকে দুটো ইউনিয়ন অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
১৯৪১ সালের স্বাধীনতা পূর্ব আদমশুমারিতে এ অঞ্চলের মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৭২.৪১%, আর হিন্দু ছিল ২৫.০১%। এরপর থেকে রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
স্বাধীন ভারতের প্রথম আদমশুমারিতে জম্মু ও কাশ্মীরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ১৯৬১ সালের শুমারিতে দেখা গেছে মুসলিম জনসংখ্যা হলো ২৪.৩২ লাখ, যেটা রাজ্যের জনসংখ্যার ৬৮.৩১%। যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল তখন ১০.১৩ লাখ, অর্থাৎ জনসংখ্যার ২৮.৪৫%।
এর ৫০ বছর পরে এসে এই অনুপাতটা প্রায় একই রকম আছে। ২০১১ সালের শুমারিতে দেখা গেছে মুসলিম জনসংখ্যা হলো ৮৫.৬৭ লাখ, যেটা জনসংখ্যার ৬৮.৩১%, আর হিন্দু জনসংখ্যা হলো ৩৫.৬৬ লাখ, যেটা মোট জনসংখ্যার ২৮.৪৩%।
মুসলিমদের জনসংখ্যা ১৯৬১ সালের শুমারির পর কমতে শুরু করে, যখন তাদের অনুপাত ছিল ৬৮.৩ শতাংশ। ১৯৭১ সালে এই অনুপাত ছিল ৬৫.৮৩ শতাংশ এবং ১৯৮১ সালের শুমারি অনুযায়ী এটা ছিল ৬৪.১৯ শতাংশ।
জঙ্গিবাদের কারণে ১৯৯১ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে কোন শুমারি করা যায়নি। তবে ২০০১ সালের শুমারিতে দেখা গেছে সেখানকার মুসলিম জনসংখ্যা ৬৬.৯৭ শতাংশ স্পর্শ করেছে, যেটা ১৯৭১ সালের চেয়ে বেশি ছিল। আর ২০১১ সালে, এটা আরও বেড়ে ৬৮.৩১ শতাংশে উন্নীত হয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের শুরুতে ১৪টি জেলা ছিল। কাশ্মীরে ছয়টি, জম্মুতে ছয়টি এবং লাদাখে দুইটি জেলা ছিল। এগুলোর মধ্যে ১০টি ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কাশ্মীরের ছয়টি জেলার সবগুলো, জম্মুর তিনটি, এবং লাদাখের একটিতে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।
জম্মুর বাকি তিনটি জেলায় হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। আর লাদাকের বাকি জেলাটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বৌদ্ধরা।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস