ভারত-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি : কী করবে পাকিস্তান?

নাজমা মিনহাস | Oct 29, 2020 04:51 pm
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি : কী করবে পাকিস্তান?

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি : কী করবে পাকিস্তান? - ছবি সংগৃহীত

 

মার্কিন নির্বাচনের দিনকয়েক আগে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটে গেছে। এটি এই অঞ্চলের কৌশলগত স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলবে।২৭ অক্টোবর ২+২ ডায়ালগে বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ) সই হয়েছে।ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এট চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চুক্তি।

এই চুক্তিটি করতে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ভারতই মূলত দেরি করেছে। কারণ এতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন হারানোর শঙ্কা রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত এই মর্যাদা ধরে রেখেছিল। কিন্তু অবশেষে বিইসিএ সই হয়েছে। মনে হচ্ছে, চীনের সাথে লাদাখে অস্বস্তিতে থাকার প্রেক্ষাপটে মোদি সরকার চাপের মুখে তা মেনে নিতে রাজি হয়েছে।
চুক্তিটি মূলত একটি যোগাযোগ চুক্তি। এটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অগোপনীয় ও নিয়ন্ত্রিত জিওস্পাটিয়াল পণ্য, টোপোগ্রাফিক্যাল, নটিক্যাল, অ্যারোনটিক্যাল তথ্য, পণ্য ও পরিষেবা বিনিময়ের ব্যবস্থা করবে।
বিইসিএর আওতায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র স্থানিক তথ্য বিনিময় করতে পারবে, দুই দেশের সামরিক বাহিনী পরস্পরকে সহায়তা করতে পারবে। এর ফলে তাদের মধ্যকার প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব জোরদার হবে।
পাকিস্তানের জন্য বিইসিএর মানে কী হবে?

বিইসিএ দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলবে। আর তাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। আর পাকিস্তানেই এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। এ কারণেই পাকিস্তান এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর চুক্তির ফলে কৌশলগত অস্থিতিশীলতার কথা উল্লেখ করেছে। কারণ এই চুক্তর ফলে ভারত এমন কিছু তথ্য পাবে যা ক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোন টার্গেট করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিইসিএর ফলে ভারতের সামরিক বাহিনী স্বয়ংক্রিয় হার্ডওয়্যার সিস্টেম ও অস্ত্রের ক্ষেত্রে বেশ নির্ভুল অবস্থানে যেতে পারে। বিশেষ করে ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ক্ষেত্রে তারা এই তথ্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারবে।তাছাড়া এই চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এমকিউ-৯বি-এর মতো সশস্ত্র ড্রোন সংগ্রহ করতে পারবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টপ-সিক্রেট স্যাটেলাইট ও সেন্সর ডাটা লাভ করে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র ও সৈন্য বিন্যাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
বিইসিএর ফলে ভারতে সরবরাহ করা যেকোনো জঙ্গি বিমানকে যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বশেষ নেভিগেশনাল প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারবে। এর ফলে চীনের সাথে ভারতের সামরিক ব্যবধান হ্রাস পাবে, এই অঞ্চলে ভারতের সামরিক শক্তি আরো জোরদার হবে।

একইসাথে চীনের প্রতি ভারত আরো বেশি নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তবে পাকিস্তানের প্রতি হুমকিই হবে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। সামরিক ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিতে পাকিস্তানের চেয়ে ভারত আরো এগিয়ে যাবে, যুদ্ধের সক্ষমতাও বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র বিইসিএর আওতায় তার সবচেয়ে আধুনিক সামরিক সম্ভার ও গোয়েন্দা স্যাটেলাইট তথ্য লাভ করবে ভারত। এর ফলে পাকিস্তানে আরো নিখুঁতভঅবে হামলা চালানোর সক্ষমতা লাভ করবে ভারত। বিইসিএ চীনকে টার্গেট করে করা হলেও এর প্রত্যক্ষ ফল ভুগবে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের হাতে বিকল্প আছে সামান্যই। অবশ্য পাকিস্তানের কৌশলগত বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তান যেহেতু এখনো অ-ন্যাটোভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মর্যাদা পাচ্ছে, কাজেই তারও এমন চুক্তি করার দাবি জানানো উচিত। আর এভাবেই দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্র তাতে রাজি না হলে পাকিস্তান বলতে পারবে, মার্কিনিরা সাম্য বিধানকারী নয়, বৈষম্য প্রদর্শনকারী দেশ।
তাছাড়া পাকিস্তান আরেকটি কাজ করতে পারে। তা হলো যুক্তরাষ্ট্র যাতে পাকিস্তানবিষয়ক তথ্য প্রদান না করে। অবশ্য এ ধরনের শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের রাজি হওয়া অনেক দূরের ব্যাপার। আর যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করলে পাকিস্তানের হাতে তখন গোয়েন্দা ও স্থানিক তথ্যের জন্য চীন ও রাশিয়ার কাছে যাওয়া না ছাড়া আর কোনো গত্যান্তর থাকবে না।

পাকিস্তান বর্তমানে চীনা সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য বা রাডার স্যাটেলাইট তথ্য পাচ্ছে না। এখন চীনের সাথে এ ধরনের চুক্তি করলে তা পাকিস্তানের জন্য বেশ কল্যাণকর হতে পারে।

আগের চুক্তিগুলো
সামরিক সহযোগিতা করার জন্য ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ইতোপূর্বে চারটি মৌলিক চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমটি ছিল জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ)। এই চুক্তির ফলে দুই দেশ সামরিক গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে পারে। উভয় দেশ একে অপরের গোপন তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পারবে। চুক্তিটি সই হয়েীছল ২০০২ সালের ১৭ জানুয়ারি।
দ্বিতীয় চুক্তিটি হলো লজিস্টিকস এক্সচেঞ্চ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ)। এই চুক্তির ফলে দুই দেশ একে অন্যের দেশে তাদের ঘাঁটিগুলো মেরামত ও সরবরাহের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। এই চুক্তি মূলত চারটি বিষয় কভার করে : পোর্ট কল, যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ ও মানবিক ও ত্রাণ সহায়তা।
তৃতীয় চুক্তিটি হলো কমিউনিকেশন্স কম্পাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (সিওএমসিএএসএ)। এট হলো সিএএসএমওএ-এর ভারতীয় সংস্করণ। এই চুক্তির ফলে দুই দেশ আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তথ্য বিনিময় করতে পারে। এর মেয়াদ ১০ বছর।

ভারতের জন্য দু’ধারি তরবারি
বিইসিএ ভারতের সামরিক সক্ষমতা বাড়াবে। তবে এই চুক্তির ফলে ভবিষ্যতের সামরিক চুক্তির জন্য ভারতে আগেই সামরিক বিমান পাঠিয়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে ভারতের জন্য রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া এই চুক্তির ফলে ভারতের প্রতিরক্ষাব্রবস্থার ওপর নানাভাবে নজরদারি করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ভারতের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। আরে মজার ব্যপার হলো, ভারত-পাকিস্তান বা ভারত-চীন সামরিক সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে আসার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক প্রবীন স্বনি বিষয়টি বেশ ভালোভাবে প্রকাশ করেছেন। দি ওয়্যারে তিনি বলেন, বিইসিএ চুক্তি সইয়ের ফলে ভারত সম্ভবত তার তিন বাহিনীর- সেনা, বিমান ও নৌ-ডিজিটাল করা সামরিক সক্ষমতা বন্ধক দিয়ে দিয়েছে।এটাই আসল কথা।

সূত্র : গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us