যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ খায়নি শ্রীলঙ্কা!
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ খায়নি শ্রীলঙ্কা! - ছবি : সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনেশ গুনবর্ধনে বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর সাথে বৈঠকে বসে তীব্র বিদ্বেষপূর্ণ চীনবিরোধী বক্তব্য গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
চীনের পক্ষ নিয়ে তারা বলেন যে মার্কিন এই কর্মকর্তা যেভাবে বলছেন, সেভাবে দেশটি শ্রীলঙ্কাকে ঋণের ফাঁদে ফেলবে না। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বরং বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ করেন।
কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে প্রকাশিত এক বিশেষ বার্তায় বলা হয়, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, যে পরিস্থিতিরই উদ্ভব হোক না কেন, বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য তিনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার সাথে আপস করতে প্রস্তুত নন।
তিনি পম্পেইওকে অবগত করেন যে ২০০৯ সালের যুদ্ধ অবসানের পর থেকে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন সহায়তা করে যাচ্ছে।
রাজাপাকসা উল্লেখ করেন, শ্রীলঙ্কায় উন্নয়নে চীনা ভূমিকার কারণে দ্বীপদেশটি ঋণের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, তার দেশের দরকার ঋণ নয়, বিনিয়োগ। তিনি বলেন, কৃষিখাতকে আধুনিকায়ন করার জন্য তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ কৃষি উন্নয়নের মতো পরিবেশ শ্রীলঙ্কায় আছে।
গোতাবায়া বলেন, আমাদের কৃষি খাত আধুনিকায়ন হওয়া উচিত। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে আমরা আপনাদের সহায়তা চাই।
তিনি এ ব্যাপারে লঙ্কায় মার্কিন বিনিয়োগের আশ্বাস লাভ করেন পম্পেইওর কাছ থেকে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন শ্রীলঙ্কার সাথে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে উল্লেখ করে পম্পেইও বলেন, শ্রীলঙ্কার উন্নয়নকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দেবে। তিনি আরো বলেন, সতর্কভাবে প্রণীত পরিকল্পনার আলোকে শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত উন্নয়নে সহায়তা করতেও প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।
তবে শ্রীলঙ্কার সাধারণ নির্বাচনের আগে উত্থাপিত ব্যাপক বিতর্কের বিষয়ক মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ কোরপোশেন কমপ্যাক্ট (এমসিসি) নিয়ে সম্ভবত কোনো আলোচনা হয়নি। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার নিয়োগ করা একটি বিশেষ প্যানেল বর্তমান আকারে থাকা চুক্তিটি না করার পরামর্শ দেয়ার পর শ্রীলঙ্কা এমসিসির ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভিজুয়াল মিডিয়া রুপবাহিনীর সাথে দেয়া এক সাক্ষাতকারে পম্পেইও বলেন, এমসিসি চুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক শ্রীলঙ্কা সরকার।
শ্রীলঙ্কার কাছে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় যে অতি বিতর্কিত দাবিটি জানাচ্ছে, তা হলো স্টাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্টে (সোফা) সই। এটাই আলোচনা হয়নি।
শ্রীলঙ্কায় পম্পেইওর প্রধান মিশন ছিল সম্ভবত চীনকে কোণঠাসা করা। শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুনবর্ধনের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে পম্পেইও চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে নির্মম শোষক হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি, খারাপ চুক্তি, সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, আইনের শাসন না থাকার মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি নির্মম শোষকের মতো কাজ করছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ভিন্নভাবে আসছে। আমরা বন্ধু হিসেবে, অংশীদার হিসেবে এসেছি।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিনেশ গুনবর্ধনে সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেন যে শ্রীলঙ্কা একটি সার্বভৌম, মুক্ত ও স্বাধীন দেশ হিসেবে তার নিরপেক্ষতা, নির্জোট ও বন্ধুপ্রতীম পররাষ্ট্রনীতি অব্যাহত রাখবে।
তিনি আরো বলেন, সদ্য অনুষ্ঠিত যে সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার দল শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি) বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে, তাতে কেন্দ্রীভূত সরকার, সার্বভৌমত্ব, ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা, জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ম্যান্ডেট লাভ করেছে জনগণের কাছ থেকে। এতে আমাদের সব বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরিষ্কার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে যোগ দেয়ার।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা তার কৌশলগত অবস্থানের কারণে সৃষ্ট সুযোগ ও দায়দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন। আমরা আমাদে সাগর ও আকাশপথে চলাচলের স্বাধীতনা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, সব দেশের উচিত হবে জাতিসঙ্ঘ কনভেনশনসহ (ইউএনসিএলওএস) আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইউএনসিএলওএস অনুমোদন করেনি, তবে সে অব্যাহতভাবে চীনকে অভিযুক্ত করে যাচ্ছে ‘নিয়মভিত্তিক শাসন’ লঙ্ঘনের অভিযোগে।
সূত্র : এসএএম