সালামে শান্তিকামনা
সালামে শান্তিকামনা - ছবি সংগৃহীত
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমাদেরকে কেউ দোয়া করে তাহলে তোমরাও তাদের জন্য দোয়া করো; তার চেয়ে উত্তম দোয়া বা তার মতোই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী’ (সূরা নিসা : ৮৬)। সূরা নূরের ২৭ নং আয়াতেও সালামের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলাম শান্তি, কল্যাণ, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির ধর্ম। আর এসবের বিপরীতটাই হলো অশান্তিবাদ। দেখা হলেই একে অন্যকে সালামের মাধ্যমে শান্তির বাণী শোনায় এবং দেখা শেষেও একজন অন্যজনের জন্য ‘আল্লাহ হাফেজ’ অর্থ ‘আল্লাহ আপনাকে নিরাপদে রাখুন’ বলে দোয়া করে থাকে। আদি পিতা হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টির পর ফেরেশতাদের সাথে প্রথম সাক্ষাতেই সালাম বিনিময় হয়েছিল।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না ঈমান আনবে; আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না যে পর্যন্ত না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি এমন একটি বিষয়ের কথা তোমাদেরকে বলব না যখন তা আমল করবে যাতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করো’ (সহিস মুসলিম : ৫৪)। জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ সা: উত্তর করেছিলেন, ‘ইসলামের সর্বোত্তম কাজ হলো সালাম বিনিময় করা। রাসূলুল্লাহ সা: সালামের ব্যাপক প্রচলন করেন এ বলে যে, যদি কারো সাথে একবার দেখা হওয়ার পর একটি গাছ, পাথর বা দেয়ালের আড়াল হওয়ার পর একই ব্যক্তির সাথে আবার দেখা হয় তবুও যেন তাকে পুনরায় সালাম দেয়া হয়।’ সাহাবিগণ তাই করতেন। যে সালাম দিতে কৃপণতা করে তাকে রাসূলুল্লাহ সা: সর্বাধিক কৃপণ বলে সমালোচনা করেছেন।
সালাম একধারে একটি ইবাদত, ইসলামী সংস্কৃতি, উত্তম শিষ্টাচার এবং সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা রয়েছে এ সালামের। তাই ইসলামে নিজ বা অন্যের ঘরে প্রবেশ, সাক্ষাতে, টেলিফোন, সংবাদে, বিপদে-আপদে, আনন্দ-খুশিতে এককথায় ইসলামের সর্বাধিক প্রচলিত পরিভাষা হলো সালাম। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যবহৃত বা চালুকৃত রসম বা নিয়ম নয়। সালামের ফজিলত, বরকত, সালাম না দিলে ক্ষতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অর্থাৎ সালাম নিয়ে হাদিসের বহুল প্রচলিত সঙ্কলন গ্রন্থ ‘মিশকাতুল মাসাবিহ’তে শতাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
যেখানে দেখা যাচ্ছে, অশুদ্ধ পদ্ধতির সালাম যা আমাদের দেশে প্রচলিত যেমন ‘স্লামালাইকুম’ বা ‘স্লামাইকুম’ ইত্যাদি উচ্চারণ সঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে অশুদ্ধ উচ্চারণে এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। একবার এক ইহুদি রাসূলুল্লাহ সা:-কে ‘আসসালামু আলাইকুম’ অর্থ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’-এর পরিবর্তে ‘আসসামু আলাইকুম’ অর্থ ‘আপনার মৃত্যু হোক’ বলে অভিশাপ করেছিল। তৎক্ষণাৎ আয়েশা রা: প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সাম’ অর্থাৎ তোমারও মৃত্যু হোক বলে অভিশাপ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা: এ রকম অশুদ্ধ সালাম দানকারীর জবাবে শিখিয়ে দিলেন, ‘ওয়া আলাইকুম’ অর্থাৎ ‘আর তোমারও হোক’। তাই যারা ‘স্লামালাইকুম’ বা ‘স্লাম কুম’ ইত্যাদি যার সঠিক কোনো অর্থ নেই বা থাকলেও বিষয়টি সালামের বিকৃতি উপস্থাপন যা মন্দ বৈ কিছু নয়। এমন সালামদাতার উত্তরে রাসূলের শেখানো পদ্ধতিতে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলাই সুন্নত।
আর সব বিপদ-আপদে শুধু মানুষ নয়, মহাবিশ্বের সব কিছুর হিফাজতের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। মহান আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম রয়েছে ‘হাফিজু’ তথা নিরাপত্তা দানকারী। কে আছে এমন যে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চায় না। আর একজন মুসলমান অপর মুসলমানের জন্য নিরাপত্তা কামনা করবে এটা সুন্নত বা ওয়াজিব পর্যায়ের আমল। কারণ রাসূলুল্লাহ সা: শিখিয়েছেন, একজন মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার থাকে তার একটি হলো- দেখা হলে সালাম দেবে আর অন্য একটি হলো সে উপস্থিত থাকুক বা অনুপস্থিত থাকুক তার জন্য কল্যাণ কামনা করবে। অপর হাদিসে এসেছে একজন মুসলিম নিজের জন্য যা ভালো মনে করবে অন্যের জন্যও তাই ভালো মনে করবে। এগুলো ইসলামের বুনিয়াদি শিষ্টাচার। কোনো দলের দলীয় স্লোগান নয়। শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করা, প্রচার করা বা চর্চা করাকে জঙ্গিবাদ আখ্যা দেয়া আলোকে অন্ধকার বলে সম্বোধন করা বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচায়ক। এমন বিকলাঙ্গ জ্ঞানের অধিকারীকে সম্মানজনক চেয়ার দেয়া, তার কথা প্রচারের সুযোগ করে দেয়াসহ যেকোনোভাবে সহযোগিতা করা ইসলামের শিষ্টাচারের বিরোধিতার শামিল। অশান্তি সৃষ্টি, সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি বিঘ্নিত করার পাশাপাশি সর্বোপরি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামান্তর। একজন মুসলিম হিসেবে এমন জঘন্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করা ঈমানি দায়িত্ব।
সালাম যেহেতু একটি ইবাদত তা শুদ্ধভাবেই করতে হবে। অশুদ্ধভাবে কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। তাই প্রত্যেক মুসলমান আজ থেকে অতীতের ভুল উচ্চারণ ঠিক করে নিয়ে সালামের পূর্ণাঙ্গ সওয়াবের অধিকারী হবেন, আল্লাহ সে তাওফিক সবাইকে দান করুন।
আমিন।