প্লাজমা থেরাপি কোনো কাজেরই নয়?
প্লাজমা থেরাপি কোনো কাজেরই নয়? - ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাসে যখন আক্রান্ত হয়েছে বিশ্ব ওই সময় ভ্যাকসিন তো দূরের কথা, কোনো ওষুধও বাজারে নেই যা প্রতিষেধকের কাজ করবে। ভ্যাকসিন কবে নাগাদ বাজারে আসবে, তা এখনো জানা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সঙ্কটপূর্ণ করোনা রোগীদের জন্য প্লাজমা থেরাপিকেই বেছে নেয়া হয়েছিল। বেশ সাড়া পড়ে গিয়েছিল এই পদ্ধতি নিয়ে। দেশে দেশে প্রয়োগ চলে এই চিকিৎসা পদ্ধতির। উন্নত অনেক দেশেই এর পক্ষে কথা শোনা যেতে থাকে। এ নিয়ে যে ট্রায়াল হয় তার নাম ছিল- অ্যাক্রোনিম প্ল্যাসিড (acronym PLACID)।
প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসাপদ্ধতির পুরো নাম কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপি। দেখা যায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকর হচ্ছে না এই পদ্ধতি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) পরে এই থেরাপিকে নির্দেশিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাবও করেছিল। সম্প্রতি যে সমীক্ষার ফল প্রকাশ্যে এসেছে তা নিয়েই ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
প্লাজমা থেরাপি কী?
প্লাজমা হলো রক্তের তরল অংশ। কনভালসেন্ট প্লাজমা হলো যে সব রোগীরা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন তাদের রক্ত থেকে নেয়া রক্তরস। এরপর সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি বের করে তা রোগীর দেহে দেয়া হয়। কোভিড-১৯ চিকিৎসাতেও এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা হচ্ছে দেহে রোগ প্রতিরোধ কাঠামোকে সুস্থ করতে। এই পদ্ধতিকে সংক্ষেপে ‘সি পি থেরাপি’-ও বলে।
কেন বিতর্ক তৈরি হলো?
আইসিএমআর-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে এই প্লাজমা থেরাপি দিয়ে কোভিড -১৯ প্রতিরোধ কিংবা মৃত্যুহার বৃদ্ধিকে হ্রাস করা যাচ্ছে না। একাধিক কেন্দ্রে এই প্লাসিড পরীক্ষাটি করা হয়। তার ফলাফলই ২২ অক্টোবর প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে।
এই ট্রায়াল থেকে কী জানা গেছে?
কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করে কোভিড-১৯ রোগীদের শ্বাসকষ্ট এবং শারীরিক দুর্বলতা সাময়িকভাবে কাটলেও মৃত্যু হার কিন্তু কমেনি। জানা গেছে যে ২৩৯ জন পূর্ণবয়স্ক করোনারোগী নিয়ে এই সমীক্ষাটি করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, তামিলনাড়ুর গবেষকরা। তারা এই ২৩৯ জন রোগীর মধ্যে ২২৯ জনের শরীরে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’বার সুস্থ রোগীর রক্ত প্রয়োগ করেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল মেলেনি। এই ২২৯ জনের মধ্যে ৪১ জন অর্থাৎ ১৯ শতাংশ রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক। প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরে প্রথম সাত দিনে রোগীর স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ‘শেষ ভালো’ হচ্ছে না।
কোনো কোনো দেশে এই প্লাজমা থেরাপি হয়েছে?
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত চীনে সঙ্কটপূর্ণ মোট ১০৩ জন রোগীদের দেহে ট্রায়াল চলে। নেদারল্যান্ডসেও চলে ConCOVID ট্রায়াল প্রায় ৮৬ জনের দেহে। কিন্তু কোনো পরীক্ষার ফলই আশানুরূপ হয়নি।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস