মিয়ানমারের সাবমেরিন কোনো কাজের নয়!
মিয়ানমারের সাবমেরিন কোনো কাজের নয়! - ছবি : সংগৃহীত
ভারত সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারকে একটি সাবমেরিন দিয়েছে। তবে ভারতীয় ও পাশ্চাত্যের অনেক মিডিয়ায় এই ঘটনাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিরোধ করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে কল্পনা করছে। তবে চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি অতিরঞ্জিত ব্যাখ্যা ও প্ররোচনা। আর তা করা হচ্ছে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে চীনের সম্পর্ককে ক্ষতি করার জন্য।
সাবমেরিনটির নাম রাখা হয়েছে মিয়ানমারের এক ঐতিহাসিক বীরের নামে : ইউএমএস মিনয়ে থেইনখুথু । মিয়ানমার নৌবাহিনী এই সাবমেরিন দিয়ে মধ্য অক্টোবরে মহড়া চালিয়েছে। এটি ৩০০ মিটার গভীরে অপারেট করতে পারে বলে ভোয়া রোববার জানিয়েছে।
মিয়ানমার যে বহর তৈরী করতে চায়, এটি হবে তার প্রথম জাহাজ। মিয়ানমার তার নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেই এটি ব্যবহার করবে বলে মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে।
মিয়ানমার তার অবসরে পাঠানো ও সেকেলে সাবমেরিনটির বিদায় চেয়েছিল আর সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের একটি সাবমেরিনের দরকার ছিল। দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ প্রয়োজন পূরণ করেছে বলে বেইজিংভিত্তিক সামরিক বিশেষজ্ঞ লি জিই সোমবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির সাথে চীনকে জড়ানো অতিরঞ্জন।
তিনি বলেন, খুবই পুরনো হওয়ায় এই সাবমেরিন চীনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে পারবে সামান্যই। তবে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ বিনিময় রাখা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে অর্থনীতি ও সামরিক বিক্রির মাধ্যমে চীরে বিরুদ্ধে উস্কে দিতে সম্পর্ক বাড়ানোর ভারতের উদ্দেশ্য উড়িয়ে দেয়া যায় না।
চীনা বিশ্লেষকেরা ফাঁদে পা না দিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
পাকিস্তান ও চীনের যৌথভাবে নির্মিত মাল্টিরোল হালকা জঙ্গিবিমান এফসি-১ জিয়ালঙের প্রথম বিদেশী ক্রেতা মিয়ানমার বলে জানা গেছে। মিয়ানমার ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিস প্রদর্শনীর সময় ১৬টি এফসি-১ জিয়াওলঙ কেনার চুক্তি করে।
মিয়ানমারকে ওইসব বিমানের ছয়টি ইতোমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে।
দেশটি ট্যাঙ্ক, রকেট ও রাইফেলসহ চীনের তৈরী অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে তার সামরিক বাহিনীকে সাজিয়েছে।
মিডিয়ার খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের কাছে ভারত যে সাবমেরিনটি বিক্রি করেছে, সেটি ডিজেল-ইলেক্ট্রিক অ্যাটাক্ট সাবমেরিন। এটি স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মাণ করেছিল।
ভারত ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে সাবমেরিনটি ক্রয় করেছিল। এর নাম তারা রেখেছিল সুধাবীর। ২০১৭ সালে সাবমেরিনটি অবসরে যায়, তারপর ভাইজাগে হিন্দুস্থান শিপিয়ার্ডে সেটি সংস্কার করা হয়।
ভারত বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সংস্কার করা এই সাবমেরিনটি ২০৩০ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে। তবে চীনা বিশ্লেষকেরা সাবমেরিনটির কার্যক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। কারণ ভারতীয় সেনাবাহিনীতেই এটি ৩০ বছরের বেশি সময় কাজ করেছে। ফলে সাবমেরিনটির জীবন প্রায় ফুরিয়ে গেছে। সংস্কারে কেবর ঝকঝকে করা হয়েছে, কিন্তু এর সিস্টেম ও ফ্যাসিলিটিগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে।
অবশ্য তা সত্ত্বেও সাবমেরিনটি মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বড় ঘটনা। এটি ভবিষ্যতে মিয়ানমার সৈন্যদের সাবমেরিনের জন্য প্রস্তুত করতে পারবে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার পঞ্চম দেশ হিসেবে মিয়ানমার সাবমেরিন সংগ্রহ করেছে। এর আগে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম সাবমেরিন সংগ্রহ করেছে।
সূত্র ; গ্লোবাল টাইমস