ভারত যুদ্ধকে বিদেশের মাটিতে নিয়ে যাবে : দোভাল

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Oct 27, 2020 07:57 am
অজিত দোভাল

অজিত দোভাল - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারত এখন থেকে কেবল তার নিজের ভূখণ্ডে লড়াই করবে না, সেইসাথে নিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচিত উৎসকে দমন করতে বিদেশের মাটিতেও যুদ্ধ করবে। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) চীনের সাথে সামরিক উত্তেজনার মধ্যে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভালের এমন মন্তব্য অনেকের কাছেই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন অনেকেই।

ঋষিকেশে পরমত নিকেতন আশ্রমে বক্তৃতাকালে দোভাল বলেন, ভারত কখনো অন্যের ওপর প্রথমে আক্রমণ না করলেও নতুন কৌশলগত চিন্তাভাবনায় বলা হচ্ছে যে নিরাপত্তা হুমকি অঙ্কুরেই ধ্বংস করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করা দরকার। তিনি বলেন, আপনি যেখানে চান, আমরা কেবল সেখানেই যুদ্ধ করব না। যেখানে হুমকির উৎস, ভারত সেখানেই যুদ্ধকে নিয়ে যাবে।‘ তিনি তার ভাষায় ‘নতুন ভারত’ ডকট্রিনের সারমর্ম হিসেবে এ মন্তব্য করেন।

অবশ্য সরকারি সূত্র জোর দিয়ে বলেছে যে দোভাল সভ্যতাগত প্রেক্ষাপটেই মন্তব্যটি করেছেন, তার মন্তব্যটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে কারো প্রতিই লক্ষ্য করে করা হয়নি।

দোভাল বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণের জন্য আমরা কখনো আগ্রাসী হইনি। আমরা অবশ্যই আমাদের মাটিতে লড়াই করার পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও লড়াই করব। তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং পরমত আধ্যাত্মিকতার স্বার্থেই করব।

তিনি বলেন, আমাদেরটি সভ্যতাগত অবস্থা। এটি কোনো ধর্ম, ভাষা বা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে নয়। এটি দেখা যায় না, এটি এই প্রকৃতির ভিত্তি হলো এর সংস্কৃতি।

চীনের ভূমি দখল নিয়ে আরএসএসপ্রধান মোহন ভগতের কথা বলার এক দিন পর দোভালের এই মন্তব্য অনেককেই ভাবতে বাধ্য করেছে যে নিরাপত্তা হুমকি অঙ্কুরেই ধ্বংস করার জন্য ভারত সরকার এই ডকট্রিন আগাম ব্যবহার করবে কিনা।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কোরিয়া যুদ্ধের বাষির্কী উপলক্ষ্যে দেয়া জাতীয়তাবাদী বার্তাতেও একই ধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, আমরা কখনো বসে থেকে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থের ক্ষতিসাধন করতে দেব না। আমরা কখনো মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে আক্রমণ চালাতে বা ভাগ করতে কোনো শক্তিকেই সুযোগ দেব না।এ ধরনের মারাত্মক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে চীনা জনগণ নিশ্চিতভাবেই এর মাথায় আঘাত করবে।

তার এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান বা ভারতকে লক্ষ্য করে বলা হয়ে থাকতে পারে। বর্তমানে এই তিনটি দেশই চীনের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি সৃষ্টি করছে।

হানাদারদের পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চীন : প্রেসিডেন্ট শি
প্রেসিডেন্ট শি তার তীব্র জাতীয়তাবাদী বক্তৃতায় বলেন, চীনা জনগণ নতজানু হবে না, তা যত বড় চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন। তিনি সরাসরি কোনো নাম না বললেও মন্তব্যটি ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করেই করা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট শি বলেন, চীনা সামরিক বাহিনী হানাদারকের পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি দেশকে ভাগ করার যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আমেরিকান বাহিনীর বিরুদ্ধে কোরিয়ান যুদ্ধে চীনের অংশগ্রহণের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এই বক্তৃতা করেন শি।

শুক্রবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দি পিপল থেকে করা বক্তৃতায় শি ১৯৫০-১৯৫৩ সময়কালে মার্কিন আগ্রাসন প্রতিরোধ ও কোরিয়াকে সহায়তা করার যুদ্ধকে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে চীনের সামরিক শক্তির প্রদর্শন হিসেবেও অভিহিত করেন। তিনি দেশের প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার কাজ দ্রুত করারও আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, ওই যুদ্ধই ছিল চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীর মধ্যে একমাত্র সামরিক সঙ্ঘাত।

তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদী হানাদারেরা নতুন চীনের দ্বারপ্রান্তে গুলি করেছে। চীনা জনগণ মনে করে, আপনাকে এমন ভাষা প্রয়োগ করতে হবে, যা হানাদারেরা বোঝে। আর তা হলো যুদ্ধকে যুদ্ধ দিয়ে মোকাবেলা করা, শক্তি দিয়ে আক্রমণ বন্ধ করা, বিজয়ের মাধ্যমে শান্তি ও শ্রদ্ধা অর্জন করা। চীনা জনগণ কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করবে না। তবে আমরা ঝামেলাকে ভয় পাই না। আমাদের সামনে যত চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, আমাদের পা কাঁপবে না, আমাদের পিঠ বাঁকাবে না।

শি জোর দিয়ে বলেন, যেকোনো দেশ, যেকোনো সেনাবাহিনী, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে তাদের পদক্ষেপ গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, বিশ্বমানের সমারিক বাহিনী নির্মাণের জন্য চীনকে তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে হবে। আর তা নিশ্চিত করার জন্য সামরিক বাহিনীর ওপর ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব বজায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে, কোনো ধরনের একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ, চরম স্বার্থসিদ্ধিমূলক মতাদর্শ কোনোভাবেই কাজ করে না। সব ধরনের ব্ল্যাকমেইলিং, প্রতিবন্ধতা, চরম চাপ প্রদানে কোনো কাজ হয় না।
তিনি বলেন, কেবল নিজের স্বার্থ পূরণ করে, সম্প্রীতির কোনো বালাই নেই ও ভীতি প্রদর্শন করে- এমন কোনো পদক্ষেপই কাজ করে না। তা কেবল কাজই করে না, তাই নয়, এটির গতি বন্ধ হয়ে যাবে।

সূত্র : জিভিএস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us