বাবা-শ্বশুর এমপি, শাশুড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান, নিজে ওয়ার্ড কাউন্সিলর : যেভাবে চলতেন ইরফান সেলিম
ইরফান সেলিম - ছবি : সংগৃহীত
বাপ সংসদ সদস্য, শ্বশুরও সংসদ সদস্য, শাশুড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান, নিজে ওয়ার্ড কাউন্সিলর। যে কারণে তার দাপটই আলাদা। ক্ষমতা ও দাপটে বাবা হাজী সেলিমকেও ছাড়িয়েছেন এরফান সেলিম। যখন তখন মানুষের সাথে বেয়াদবি, মানুষকে অপমান অপদস্থ আর মারধর করা অনেক আগে থেকেই তার অভ্যাস। স্থানীয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। অপরের বাড়ি দখল আর চাঁদাবাজির অভিযোগ না থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার রয়েছে বিশাল নিয়ন্ত্রণ। বাইরে চলতে গেলে তার লাগে নিরাপত্তা রক্ষী, যাদের সবাই অস্ত্রধারী। এর মধ্যে বৈধ আর অবৈধ অস্ত্র দু’টিই রয়েছে।
বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে অনেকটা কোণঠাসা হাজী সেলিম একসময় প্রায়ই আলোচনার শীর্ষে উঠে আসতেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন, কী ক্ষমতার বাইরে তাকে নিয়ে আলোচনা হতোই। বলতে গেলে অনেক দিনই সেই আলোচনা ছিল না। গত রোববার সন্ধ্যায় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর করে আবারো আলোচনায় উঠে এলো হাজী সেলিমের পরিবার। আলোচনায় না থাকলেও পরিবারটি যে একেবারেই নিশ্চুপ বসেছিল তেমনটি নয়। গতকাল সোমবার ২৬, দেবীদাসঘাট লেনের হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্যরা সেই প্রমাণই পেলেন। বাসা থেকে উদ্ধার হলো অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, মদ-বিয়ার, ওয়াকিটকি এবং হ্যান্ডকাফ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আশপাশের সব কিছু মনিটরিং করতে হাজী সেলিমের বাসায় গড়ে তোলা হয়েছিল আধুনিক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিসহ অত্যাধুনিক কন্ট্রোল রুম। এতে ছিল আধুনিক ভিপিএস (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার), ৩৮টি ওয়াকিটকি এবং ড্রোনসহ বিভিন্ন ডিভাইস। রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিভিআইপি) নিরাপত্তায় নিয়োজিত এলিট বাহিনীর কাছে যেসব সরঞ্জাম থাকে, সে রকম সরঞ্জাম পাওয়া গেছে ওই বাসায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় এই কন্ট্রোল রুম ব্যবহার করা হতো বলে র্যাবের ধারণা। হাজী সেলিমের আট তলা ভবনের তিন ও চার তলা থেকে এসব সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এরফান সেলিমের বাবা হাজী সেলিম একজন সংসদ সদস্য। তার শ্বশুর একরাম চৌধুরী নোয়াখালী সদরের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি জেলা আওয়ামী লীগেরও সেক্রেটারি। আর শাশুড়ি হলেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান। উকিল শ্বশুরও আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। আর নিজে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এসব কারণে তার ক্ষমতাই আলাদা। ইতঃপূর্বেও অনেক মানুষকে তিনি মারধর করেছেন বলে অভিযোগ আছে। তিনি একরাম চৌধুরীর মেজ মেয়ে তাসরিন জেরিন চৌধুরীর স্বামী। হাজী সেলিমেরও মেজ ছেলে তিনি।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি কাউন্সিলর পদে জেতেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হাজী সেলিমের ভাগ্নে হাজী মোহাম্মদ হাসান পিল্লু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে জানা যায়। দৃশ্যত তিনি বাবা হাজী সেলিমের ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছেন বলে জানা যায়। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে অনেকের সাথেই তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।