যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বৈঠক : যা ভাবছে চীন
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বৈঠক : যা ভাবছে চীন - ছবি সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এবং চীনের সাথে ভারতের অব্যাহত সীমান্ত সঙ্ঘাতের একটি স্পর্শকাতর সময়ের কথা উল্লেখ করে চীনা পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, নয়া দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে মঙ্গলবারের তৃতীয় ২+২ মন্ত্রিপর্যায়ের সংলাপটি স্থায়ীভাবে কল্যাণকর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা না হয়ে দেশ দুটির নিজস্ব সুবিধার লাভের একটি সুযোগে পরিণত হতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন চাচ্ছে, এটিকে পুনর্নির্বাচনপ্রক্রিয়ার একটি উদ্দীপনা হিসেবে ব্যবহার করতে, আর ভারত চাচ্ছে, চীনের বিরুদ্ধে তার পেশী প্রদর্শন হিসেবে এটিকে দেখাতে। কিন্তু দুই দেশের কেউই এটাকে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার কাজে ব্যবহার করতে চাইছে না, যা নিয়ে বিদেশী মিডিয়াগুলো তুমুল আলোচনা করছে।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা যদিও বৈঠকটি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট ফর জিও-স্প্যাটিয়াল কো-অপারেশন (বিইসিএ)-এর মতো চুক্তি হবে বলেও ধারণা করছেন। কিন্তু চীনা পর্যবেক্ষকেরা উল্লেখ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারত তার সামরিক সহযোগিতা হালনাগাদ করলেও তারা চীনের মোকাবেলা করার মতো অবস্থায় আসতে পারবে না। তাছাড়া ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি সবসময়ই মনে মনে নিজস্ব স্বার্থ লালন করে। ফলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র হানিমুন কতক্ষণ টিকবে, সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাচ্ছে না।
সন্দেহজনক সময়
তৃতীয় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ২+২ মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ মঙ্গলবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেইও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার ২৬-২৭ অক্টোবর সংলাপে অংশ নেবেন। ভারতীয় পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর অংশ নেবেন।
রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দাবি, সংলাপের সময় ভারত বিইসিএ চুক্তিতে সই করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই বৈঠকটি হওয়াকে ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতর অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে জানিয়েছে। তবে চীনারা তা মানতে নারাজ।
সিংহুয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেঙ গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, মার্কিন নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকতে এ ধরনের সফরে প্রমাণ করে ট্রাম্প প্রশাসন এই বৈঠকটিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে।বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে গুরুত্ব দেয়ার কথাও তিনি বলেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প এটাকে তার সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অর্জন মনে করেন।
সফরের আগ দিয়ে ওয়াশিংটনে মিডিয়ার সামনে পম্পেইও বলেন, তিনি নিশ্চিত, এই সভায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সৃষ্ট হুমকি ভণ্ডুল করার জন্য মুক্ত দেশগুলো কিভাবে কাজ করতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হবে।
ভারতীয়রা মনে করে, জুন থেকে চীন সীমান্তে উত্তেজনার ফলে ভারতীয় অহংবোধে মারাত্মক আঘাত হেনেছে। এই অবস্থায় বিইসিও চুক্তি ভারতকে মার্কিন অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ছবি ও টেলিকম ইন্টারসেপশন ও অন্যান্য সুবিধা দেবে।
ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক ওয়াং সে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈঠকে ভারতের জন্য ইন্টারনেট সিকিউরিটি ও মহামারিবিরোধী সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।জুনে ভারত টিকটকসহ ৬০টির মতো চীনা মোবাইল অ্যাপস নিষিদ্ধ করে।পরে যুক্তরাষ্ট্রও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ওয়াং ভবিষ্যদ্বাণী করেন, দীর্ঘ মেয়াদে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক গভীর হবে, বিশেষ করে সামরিক খাতে। কিন্তু তা জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে ধরনের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক রয়েছে,তেমন হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে তার বৈশ্বিক কৌশল বাস্তবায়ন করতে, ভারতকে শক্তিশালী করা তার লক্ষ্য নয়।
অনেক আলোচনা, সারাংস সামান্য
ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিইসিএ চুক্তিতে সইও করে, কিন্তু তবুও তা চীনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে চীনা বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান রয়েছেন।
চীনা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেক দিক থেকেই চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকেই ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নত হলেও তা ভারতকে চীনের পর্যায়ে উন্নীত করতে পারেনি।
সিনহুয়া বিশেষজ্ঞ বলেন, সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার মাধ্যমে ভারতের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র গত বছর এফ-২১ জঙ্গি বিমান বিক্রি করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই বিমান এফ-১৬-এর মতো দেখা যাওয়ায় ভারত কিনতে রাজি হয়নি।
তাছাড়া ভারত কখনো তার জোট নিরপেক্ষ থাকার মূলনীতি থেকেও সরে আসবে না। এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কিনছে।এই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়টের চেয়ে বেশি কার্যকর।
কিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়র পর দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক ও গুরুত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। ফলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার হানিমুন কত দিন বহাল থাকবে, তা একটি প্রশ্নই রয়ে যাচ্ছে।
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস