সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম : ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু শিশুর

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় | Oct 26, 2020 02:04 pm
সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম

সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম - ছবি সংগৃহীত

 

কোভিড ভাইরাস আটকে দেয়া নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের লড়াই চলছে, কিছু উপায় জানা গেলেও বেশির ভাগটাই এখনো অজানা। একথা ঠিক যে কয়েক বছরে চিকিৎসা বিজ্ঞান ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেছে। হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেলেও আধুনিক মেডিক্যাল সায়েন্স তা মেরামত করে এমনকি বদলে দিয়েও মানুষকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। তবে কিছু কিছু অসুখের ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা এখনো দিশা পাননি। সেরকমই এক সমস্যা 'সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম' (এসআইডিএস)। এর অর্থ কোনো কারণ ছাড়াই এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ঘুমের মধ্যে আচমকা মৃত্যু।

শীতের দেশে এই ঘটনা বেশি দেখা যায়। কিছু নিয়ম মেনে চললে ঘুমের মধ্যে সদ্যোজাতদের আচমকা শেষ নিঃশ্বাস ফেলা আটকে দেয়া যেতে পারে। তাই সচেতন হতে হবে প্রত্যেক সদ্য মা ও তাদের পরিবারকে। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে অক্টোবর মাসে ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম অ্যাওয়ারনেস মান্থ’ পালন করা হচ্ছে। অবশ্য আমাদের দেশে ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিসসহ নানা কারণে এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের বাঁচানো মুশকিল হয়। তাই এই বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় না, জানালেন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধিকর্তা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ।

বাচ্চার জন্মের দুই মাস বয়স থেকে চার মাস বয়সের মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। কখনো আবার জন্মের কয়েকদিনের মধ্যেও এই ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দেশে হাসপাতালে আচমকা সদ্যোজাতের মৃত্যু হলে সকলেই হাসপাতাল বা চিকিৎসককে দোষারোপ করেন। তবে সুস্থ শিশুর আচমকা মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কিছুই করার থাকে না।

এক বছর বয়সের কম বয়সী বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে কোনো কারণ ছাড়া মৃত্যু হলে এবং ময়নাতদন্ত করেও কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পেলে তখনই তাকে ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম’ বা এসআইডিএস বলা হয়, এমনই ব্যাখ্যা করলেন অপূর্ব ঘোষ। এসআইডিএস-এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে জোরদার গবেষণা চললেও এখনো সদ্যোজাতের হৃদযন্ত্র আচমকা থেমে যাওয়ার কারণটি অজ্ঞাত।

শীতের সময় এই ঘটনার ঝুঁকি বেশি, শীত আসছে তাই হবু মা ও সদ্য মা এবং তার পরিবারের এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও কিছু কিছু কারণকে সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোমের জন্য দায়ী করা যেতে পারে, বললেন অপূর্ব বাবু।

যে সব শিশু অত্যন্ত কম ওজন নিয়ে জন্মায় তাদের এই সমস্যার ঝুঁকি স্বাভাবিক ওজনের শিশুদের থেকে তুলনামূলক ভাবে বেশি।

• গর্ভাবস্থায় যে সব মা ধূমপানের নেশা চালিয়ে যান, কিংবা হবু মায়ের সামনে বাবা অথবা অন্যরা সিগারেট-বিড়ি খান, সেই সব শিশুদের এসআইডিএস-এর ঝুঁকি অনেক বেশি।

• নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশু ভূমিষ্ঠ হলে আচমকা হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

• ছেলেদের ঝুঁকি মেয়েদের তুলনায় বেশি।

• ২০ বছরের কম বয়সে সন্তানের জন্ম দিলেও ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম’-এর সম্ভাবনা বাড়ে।

• একটি শিশুর যদি এ রকম আচমকা মৃত্যু হয়, পরবর্তী সন্তানের মৃত্যুর ঝুঁকি ১০ গুণ বেশি।

• গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো শারীরিক জটিলতা থাকলে তাদেরও ঝুঁকি বেশি।

• বাচ্চাদের উপুড় করে ঘুম পাড়ালে আচমকা শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু হওয়ার ঘটনা দেখা যায়।

• অত্যন্ত নরম বিছানায় বাচ্চাকে ঘুম পাড়ালেও এই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

• বাবা-মা বাচ্চাকে পাশে নিয়ে ঘুমোলে এসআইডিএস-এর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ইউরোপ-আমেরিকায় বাচ্চাকে আলাদা বেবি কটে ঘুম পাড়ানো বাধ্যতামূলক। রাতে উঠে মা বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে আবার কটে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন।

• বাচ্চার গায়ে কম্বল বা অন্য চাপা দিয়ে রাখলেও এই আশঙ্কার ঝুঁকি থাকে।

•পাহাড়ি অঞ্চল বা খুব বেশি ঠান্ডা পড়লে বাচ্চার ঘরে রুম হিটার বা কাঠ কয়লা জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখার চেষ্টা করলেও শ্বাসকষ্ট থেকে আচমকা মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

• পেটে চাপ দিয়ে উপুড় করে ঘুম পাড়ালে বাচ্চার আচমকা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

• অনেকে বাচ্চার গলায় হার বা কালো সুতাতে মাদুলি পরিয়ে রাখেন। এর থেকে গলায় প্যাঁচ লেগে শিশুর শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এই ভয়ানক ঘটনার হাত থেকে মুক্তি পেতে কার গুলোকে দূরে সরিয়ে রাখার পরামর্শ দিলেন অপূর্ব বাবু।

• প্রত্যেক বাবা মায়ের কৃত্রিমভাবে শ্বাস দেয়ার ব্যাপারটা হাতে কলমে শিখে রাখা উচিত। বাচ্চার কোনো রকম সমস্যা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সিপিআর দিয়ে তারপর নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

• উপুড় করিয়ে ঘুম পাড়াবেন না, সোজা করে শুইয়ে রাখতে হবে।

• ঘরে তো বটেই ঘরের আশেপাশেও কেউ যেন ধূমপান না করে খেয়াল রাখা দরকার।

• ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে বাচ্চাকে সুতির ফুলপ্যান্ট ও ফুলহাতা জামা পরিয়ে রাখতে হবে, কম্বল জাতীয় ভারি জিনিস ব্যবহার না করাই ভালো।

• শিশুকে পরিচ্ছন্ন রাখুন, অপরিচ্ছন্নতা থেকেও শিশুর নানান সংকটজনক অসুখের ঝুঁকি থাকে। বাচ্চাদের ভালো রাখার জন্য পরিচ্ছন্নতা জরুরি। নিজেরা ভালো থাকুন, সদ্যোজাতের সঠিক যত্ন নিন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us