ইসরাইলকে যেভাবে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র
বেন গুরিয়ান - ছবি সংগৃহীত
ইহুদি নেতা, জিউইশ অ্যাজেন্সির প্রধান বেন গুরিয়ান ১৯৪৮ সালের ১৪ মে আরব ভূখণ্ডে কৃত্রিম ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান সেদিনেই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলেন। সেদিন থেকে শুরু হলো আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের ইসরাইলের ফিলিস্তিনবিরোধী বৈধ-অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ও কৌশলী সমর্থন দান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে একই ধরনের স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন সমর্থন প্রতিটি মার্কিন প্রশাসন ও আমেরিকান প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে পেয়ে আসছে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের বর্ণবাদী নীতি। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শাসকরা যে ধরনের বর্ণবাদী আচরণ অবলম্বন করতেন, সেখানকার আদিবাসী কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর, ফিলিস্তিনে ইসরাইলিদের বর্ণবাদের তীব্রতা আরো শতগুণ বেশি। আজকের ‘বিডিএস’ নামের আন্দোলন যেভাবে নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্ণবাদের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছে, এ ধরনের পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের কবর রচনা করে গেছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানত আমেরিকার প্রতিটি প্রেসিডেন্ট ও তার প্রশাসনের কম-বেশি ফিলিস্তিনবিরোধী ভূমিকার কারণেই ইসরাইল নামের কৃত্রিম রাষ্ট্রটি আজ দম্ভভরে অস্তিত্বশীল, অন্য দিকে দশকের পর দশক ধরে ইসরাইল দখল করে রেখেছে জাতিসঙ্ঘের ১৯৩টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩৯টি দেশের স্বীকৃতি পাওয়া ফিলিস্তিন নামের দেশটিকে। সেখানে ধারাবাহিক গণহত্যা চলছে ফিলিস্তিনি জাতিনিধনের লক্ষ্য নিয়ে। অথচ এ দেশটিতে বরাবর সক্রিয় সহযোগিতা করে চলেছে আমেরিকার প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের প্রশাসন। আমেরিকার জনগণের করের অর্থ থেকে আমেরিকান ভোটারদের অজান্তেই প্রতি বছর ৩৮ বিলিয়ন ডলার দেয়া হচ্ছে ইসরাইলের মানবতাবিরোধী সরকারকে।
এমন কোনো রেকর্ডপত্রও নেই, যা থেকে সাধারণ মানুষ জানতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্র বর্ণবাদী ইসরাইলের পেছনে প্রতি বছর খরচ করছে। ইসরাইল এসব অর্থ ব্যয় করছে ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব বজায় রাখা ও ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে নতুন নতুন অবৈধ ইহুদি বসতি গড়ে তোলার পেছনে এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর কাজে। বিগত সাত দশক ধরে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে, তা পেয়েছে ওই রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট দলীয় রাজনীতিকদের কাছ থেকেই; যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন বা করছেন আমেরিকান ভোটারদের। তাই ডেমোক্র্যাট বলি আর রিপাবলিকানই বলি, উভয়ই সমভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও ব্যাপকভাবে আমেরিকান সমাজের ভেতরের ‘ইহুদি ফিফথ কলাম’। বিষয়টি বোঝার জন্য পড়ে দেখা যেতে পারে গুগল আর্টিকল : ‘ইসরাইল অ্যান্ড ইটস সাপোর্টারস আর অ্যা ফিফথ কলাম ইন অ্যামেরিকান পলিটিক্স’।
এই ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ‘ন্যাশনাল কমিটি’ (ডিএনসি) ও ‘ডেমোক্র্যাটিক মেজোরিটি ফর ইসরাইলস পিএসি’ (ডিএমআইপিএসি) এখন জো বাইডেনের পক্ষে ভোট চাইছে। তারা ভোটারদের বলছেন- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান পার্টির তৈরি করা ‘মিডল ইস্ট পিস প্ল্যান’ নামের পরিকল্পনা আসলে একটি মেকি পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে আরো কলহের ও সন্ত্রাসের জন্ম দেবে। নির্বাচিত হলে জো বাইডেন ও তার ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আরো উল্লেখযোগ্য ভিন্ন পদক্ষেপ নেবে, যেখানে তারা হবে ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্ব নিরসনে এবং প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ায় এক ‘অনেস্ট ব্রোকার’।