প্রো-ইসরাইল, প্রো-আমেরিকা, প্রো-পিস প্ল্যান

প্রো-ইসরাইল, প্রো-আমেরিকা, প্রো-পিস প্ল্যান - ছবি সংগৃহীত
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘এফআইডিএফ’ (ফ্রেন্ডস অব ইসরাইল’স ডিফেন্স ফান্ড)-এর একটি ‘পাঁচ লাখ ডলার পার পারসন ডিনার অ্যান্ড গালা ইভেন্ট’। জো বাইডেন এই ডিনার পার্টি ও আনন্দ উৎসবে যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন ইসরাইলি-অ্যামেরিকান মিডিয়া মোগল হায়াম সাবান, যিনি ফর্বস ম্যাগাজিনের র্যাংকিংয়ে আমেরিকার ২৩২তম ধনী ব্যক্তিত্ব। এর আগে তিনি সমর্থন জানিয়েছিলেন বাইডেনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে। হায়াম সাবানের ঘনিষ্ঠতা আছে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সাথেও; তিনি সহযোগিতা করেছেন ট্রাম্পের তথাকথিত ‘আরব আমিরাত-ইসরাইল শান্তি পরিকল্পনা’ তৈরিতে। সাবান নিজেকে বর্ণনা করেন একজন ‘issue guy’ হিসেবে এবং বলেন : ‘মাই ইস্যু ইজ ইসরাইল’। দীর্ঘ দিনের ইসরাইল সমর্থক হায়াম সাবান বাইডেন সম্পর্কে বলেছেন : ‘ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র’ মৈত্রীর বন্ধন অটুট রাখতে বাইডেন হচ্ছেন ‘সঠিক প্রার্থী’। আর এই জোট বহু বছর ধরে ছিল অপরিবর্তনীয়। রেকর্ড থেকে দেখা যায়, এই জোট আমেরিকার স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি জো বাইডেন যথার্থই চিহ্নিত করেছেন তার বক্তব্যে, যখন বাইডেন বলেন- ‘যদি ইসরাইল না থাকত, তবে আমাদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে তেমন একটি দেশ আমাদের উদ্ভাবন করতে হতো।’
এসব কিছুর শেষ ফল হচ্ছে- তথাকথিত প্রো-ইসরাইল, প্রো-আমেরিকা, প্রো-পিস প্ল্যান ইত্যাদি, ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটে একটি অক্সিমোরোন তথা বাক্যালঙ্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ ইসরাইলের ‘ম্যানিফেস্ট ডেস্টিনি’ ডিক্লারেশনে দাবি করা হয়েছে : এদের নিজেদের সম্পূর্ণ ‘হলি ল্যান্ড’ কখনোই একই সাথে হতে পারে না প্রো-ইসরাইল, প্রো-আমেরিকান ও প্রো-প্যালেস্টাইন। অন্য কথায় বলা যায়- এটি এমন ব্যাপার যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, বিজয়, দখল ও চুরির ক্ষেত্রে ইসরাইলের নির্লজ্জ-প্রকাশ্য আগ্রাসন সমস্যার কোনো ‘কনসিলেশন’-এর (মীমাংসার) আগেই ‘রিকনসিলেশন’ (নতুন মীমাংসা) নিয়ে কথা বলা।
সব কিছু বাদ দিয়েও ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়েই নিজেদের অতীত কর্ম ও কথা দিয়ে আমাদের বুঝতে দেননি, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কোনটা ন্যায্য আর কোনটা অন্যায্য। বিশেষ করে কেউ যদি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও এর ডিএনসির অনুমোদিত, ডিএমআইপিএসির সম্প্রচারিত আধঘণ্টার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনটি দেখেন, তবে দেখা যাবে- এ বিজ্ঞাপনটি বিশেষত ডিজাইন করা হয়েছে ফ্লোরিডাসহ দেশটির অন্যান্য মুখ্য ব্যাটল গ্রাউন্ড স্টেটগুলোর কনজারভেটিভ প্রো-ইসরাইলি ভোটারদের টার্গেট করে। ডিএনসি এর আগে এসব ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ স্টেটে একই ধরনের রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ছেড়েছিল বিশেষত অধিকতর প্রগ্রেসিভ প্রো-প্যালেস্টাইন ভোটার টার্গেট করে। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, ভারসাম্যটা কোথায়?
যা-ই হোক, বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমেরিকার জনগণ দেখতে পাবে- দেশটিতে রিপাবলিকানদের চেয়ে উন্নততর গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা। এই মূল্যবোধ আর গণতন্ত্রের চর্চা সীমাবদ্ধ থাকবে না শুধু আমেরিকার কালো ও বাদামি জনগণের মধ্যেই, তা সম্প্রসারিত হবে স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রেও- এমনটি আশা করা যেতে পারে। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে বলা দরকার- ট্রাম্প বা বাইডেন, যিনিই প্রেসিডেন্ট হন, দুনিয়ার মানুষ চায়, তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমেরিকা ও বাকি দুনিয়ায় যাবতীয় অমানবিকতা, যুদ্ধবিগ্রহ আর বিবাদ-কলহের অবসান ঘটবে : আমেরিকাসহ বাকি দুনিয়ায় শান্তির সুবাতাস অবিরাম বয়ে চলুক, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হোক, পৃথিবী থেকে বর্ণবাদসহ যাবতীয় অমানবিকতা, আর অন্যায়-জুলুমের অবসান হোক।