‘র’ প্রধানের আকস্মিক কাঠমাণ্ডু সফর : পেছনের সমীকরণ
অনিল গিরি - ছবি সংগৃহীত
গত সপ্তাহে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি যখন মন্ত্রিসভায় ছোটখাটো রদবদল করেন, তখন যে বিষয়টি বিশেষ করে নজরে এসেছে, সেটি হলো প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইশ্বর পোখারেলকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া।
ওলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিজের কাছে রেখেছেন। অন্যদিকে পোখারেলকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস ‘দেখাশোনার’ জন্য ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন।
গুঞ্জন রয়েছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে পোখারেলের কিছু বিবৃতিতে খুশি ছিলেন না নেপাল সেনাবাহিনী প্রধান। পোখারেল ভারতীয় সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্যের কারণে তার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন। ভারতের সেনাপ্রধান বলেছিলেন যে, চীনের ইঙ্গিতে নেপাল ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।
তাছাড়া ওলি কিছু মন্ত্রীদের নিয়োগ দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা নিয়ে ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। দলের আরেক চেয়ার পুষ্প কামাল দহল অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ‘একতরফাভাবে’ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই সব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই ভারতের গোয়েন্দা প্রধান হঠাৎ করেই কাঠমাণ্ডু সফরে যান। তার এই সফর নিয়ে নেপালের বিশ্লেষক, একাডেমিক ও গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
ভারতের রিসার্চ অ্যাণ্ড অ্যানালিসিস উইং (র) এর প্রধান সমান্ত কুমার গোয়েল কাঠমাণ্ডুতে ২৪ ঘন্টারও কম সময় অবস্থান করেন। এর মধ্যেই তিনি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সাথে বৈঠক করেন।
ওলির মিডিয়া উপদেষ্টা সুর্য থাপা এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন যে, গোয়েল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন”।
থাপা বৈঠকের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন। তবে ওলি আর গোয়েলের বৈঠকের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি সেখানে ছিল না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সিনিয়র এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকের গোয়েলের সাথে দুজন কর্মকর্তা থাকলেও ওলি সেখানে একাই ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের বৈঠক রাত সাড়ে নয়টার শেষ হওয়ার পরপরই ওলি-গোয়েলের বৈঠক হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী দহল এবং মাধব কুমার নেপাল বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছেন যে তাদের সাথে গোয়েলের কোন বৈঠক হয়নি।
যেহেতু নয়াদিল্লী বা কাঠমাণ্ডু কোন পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি, সে কারণে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের হঠাৎ এই সফর নিয়ে ব্যাপক রহস্য তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষক এবং ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা অবশ্য বলেছেন যে, দুই দেশের পরিকল্পনা অনুসারেই গোয়েলের এই সংক্ষিপ্ত সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত বিজয়া কান্ত লাল কার্না পোস্টকে বলেন, “আমরা জানি যে, নেপাল আর ভারতের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, সে কারণে গোয়েলের সফরের উদ্দেশ্য হতে পারে দুই দেশের সম্পর্কের অচলাবস্থার নিরসন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আবার নিজের ধারায় ফিরিয়ে আনা। আমি মনে করি দুই পক্ষই শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক চায় এবং গোয়েলের সফর সেটার সূচনা হতে পারে”।
তবে ওলির প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় এটা অবশ্য গোয়েলের প্রথম নেপাল সফর নয়। গত বছর জুলাই মাসেও নেপালের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে কাঠমাণ্ডু এসেছিলেন গোয়েল।
তখনও ওলির সাথে দেখা করেছিলেন গোয়েল।
তবে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, দ্বিপাক্ষিক সংলাপ পুনরায় শুরুর জন্য একজন গোয়েন্দা প্রধানকে কেন কাঠমাণ্ডু পাঠাবে নয়াদিল্লী।
সাবেক ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিম রাওয়াল গোয়েলের সফরের সময় এবং যেভাবে গোয়েল প্রধানমন্ত্রী ওলির সাথে বৈঠক করেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে তারা গোয়েলের সফরের ব্যাপারে অবগত নয়। যদিও ভারতীয় বিমান বাহিনীর যে বিমানে গোয়েল কাঠমান্ডু এসেছেন, সেটার অনুমোদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই হয়েছে। মহামারীর কারণে নেপাল আর ভারতের মধ্যে সাধারণ ফ্লাইট এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে। ভারত ফ্লাইট চালুর জন্য অনুরোধ জানালেও ওলি প্রশাসন এখনও বিষয়টিতে জবাব দেয়নি।
ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও ওলি আর গোয়েল নেপাল আর ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা করেছেন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নই এই সফরের উদ্দেশ্য”।
সাবেক রাষ্ট্রদূত কারনা বলেন ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে নেপালের নেতাদের এ ধরণের বৈঠক নতুন কোন বিষয় নয়। দীর্ঘদিন ধরে এটা চলে আসছে এবং এটা একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি পোস্টকে বলেন, “একটি জিনিস অবশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে – সেটা হলো ওলির জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে”।
সূত্র : কাঠমাণ্ডু পোস্ট