নওয়াজ শরিফ যেভাবে মার্কিন ফাঁদে পা দেন
নওয়াজ ও ক্লিনটন - ছবি সংগৃহীত
১৯৯১-এর পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা দুনিয়ার একক নেতা হয়ে যায়। এতে আমেরিকান থিংকট্যাংকগুলো তাদের রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চেপে ধরে যে, দুনিয়ার একলাই নেতা এখন আমেরিকা বলে এইবার তৃতীয় বিশ্বে আমেরিকাকে সামরিক শাসন জারি বা সমর্থন করা তখন থেকে বন্ধ করে দিতে হবে। ক্লিনটন (প্রেসিডেন্ট ১৯৯৩-২০০১) সে সময়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন। আর এখান থেকেই চক্রে পড়ে পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ মূলত প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে ভারতের ফাঁদে আটকা পড়েন। ক্লিনটন যেখানে স্বীকার করে নিয়েই শুরু করছেন যে, আমেরিকার ইচ্ছা ও কারণে এত দিন ‘সামরিক শাসন’ এশিয়া চলেছে সেখানে ভারত, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীই পাকিস্তানের সামরিক শাসনের মূল কারণ ও সমস্যা বলে পারসু করতে থাকে। এতে ক্লিনটন ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে গেলেও নওয়াজ শরিফ ভারতের লাইনে সামরিক বাহিনীর ওপর রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ এসেছে বলে প্রচার করতে থাকেন। একই সময় ভারত-পাকিস্তান কারগিল যুদ্ধ সীমিত হয়ে শেষ হয়েছিল। এবার নওয়াজ এই যুদ্ধের জন্য ভারতের সহযোগী হয়ে প্ররোচনা করতে থাকেন যে, জেনারেল মোশাররফের কারণে কারগিল যুদ্ধ হয়েছে আর এই দাবি করে তাকে সরাতে এক পরিকল্পনা করেন নওয়াজ।
শ্রীলঙ্কা থেকে জেনারেল মোশাররফ দেশে রওনা হতে চাইছিলেন। কিন্তু তাকে বহনকারী সেই বাণিজ্যিক প্যাসেঞ্জার বিমান পাকিস্তানের কোথাও নামতে দিয়ে এই ফাঁকে নওয়াজ আর্মি চিফ পরিবর্তন করে দেন। কিন্তু এতে আর্মির মধ্যে নওয়াজবিরোধী ক্ষোভ জেগে ওঠাতে আধা ঘণ্টার মধ্যে পালটা ক্ষমতা দখল ও বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তেল ফুরানোর পাঁচ মিনিট আগেই মোশাররফের বিমান আবার পাকিস্তানের রাজধানীতেই অবতরণে সক্ষম হয়। মোশাররফ ক্ষমতাসীন আর নওয়াজ বন্দী হন। এটাই ১৯৯৯ সালের অমেরিকার অনিচ্ছায় পাকিস্তানের সামরিক ক্ষমতা দখল। তাই আমেরিকা মোশাররফের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। এভাবেই চলতে থাকে। পরে ২০০১ সালের ‘নাইন-ইলেভেন’ হামলার দিন নিরুপায় আমেরিকা এই স্বীকৃতি দিয়েছে বলে জানায়। নওয়াজের আসলে স্বার্থ ছিল, ভারতীয়দের সাথে ব্যবসা করা।
নওয়াজ মূল ইত্তেফাক গ্রুপের মালিক ও ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা বলতে ভারতীয় পণ্য পাকিস্তানে এনে বিক্রি করে কমিশন খাওয়া। যেমন বাংলাদেশের মতো পাকিস্তানেও একই আইনে ভারতীয় সিনেমা আমদানি নিষিদ্ধ ছিল। নওয়াজ এটা প্রথম খুলে দিয়েছিলেন। আর ভারতীয় সিনেমা প্রডিউসার মালিকেরা নগদ খদ্দের পেয়েছিলেন। আসলে এমন ব্যবসাপাতির বিরুদ্ধে আর্মিই নওয়াজের ক্ষমতার জন্য প্রধান বাধা বলে অনুভব করাতেই পুরা ব্যাপারটা আর রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে থাকেনি। নওয়াজ গংয়ের পেটি ব্যবসায়িক স্বার্থ মুখ্য করে হাজির করাতে ভারতের তাঁবেদারিটাই মুখ্য হয়ে উঠেছিল যা পাকিস্তানে সে সময় রাজনীতিবিদ (ব্যবসায়ী) বনাম আর্মি এই নামে হাজির হয়েছিল। তবু পাকিস্তান আর্মি আমেরিকার ইচ্ছা মেনে সেই থেকে আর কখনো ক্ষমতা দখল করতে যায়নি। আর না করেও রাজনীতিতে যতটুকু প্রভাব রাখা যায় সে চেষ্টা করে অবশ্য। বলাই বাহুল্য, নওয়াজদের মতো রাজনীতিবিদ থাকলে এই সমস্যার কোনো দিন কোনো সমাধান নেই।