মিয়ানমারকে সাবমেরিন উপহার : ভারতের নতুন চাল

ইউচি নিত্তা এবং কিরন শর্মা | Oct 24, 2020 07:18 am
মিয়ানমার সাবমেরিন

মিয়ানমার সাবমেরিন - ছবি : সংগৃহীত

 

দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় নিতে ভারত তার একটি সোভিয়েত আমলের কিলো-ক্লাস সাবমেরিন মিয়ানমারকে উপহার দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক নয়াদিল্লীর উদ্যোগকে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন, আইএনএস সিন্ধুবীর ১৯৮৮ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীতে কমিশন করা হয়। এটা ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কেনা পুরনো সাবমেরিন, যাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয। ৩,০০০ টনি সাবমেরিনটি সর্বোচ্চ ৩০০ মিটার গভীরে নামতে পারে এবং গতি ১৮ নট। মিয়ানমার নৌবাহিনীর এটাই প্রথম সাবমেরিন।

সাবমেরিন উপহার দেয়া প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেন, ‘সামুদ্রিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের বহুমুখি ও জোরালো লেনদেনের অংশ।’

মিয়ানমার নৌবাহিনী সিন্ধুবীরের নতুন নামকরণ করেছে ইউএমএস মিনইয়ে থিনখাথু। দেশটির ঐতিহাসীক বীরের নামে এ নামকরণ। গত সপ্তাহে ফ্লিট এক্সারসাইজে এটি প্রদর্শিত হয়।

এ উপলক্ষে মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং তার ওয়েবসাইটে এক বার্তায় বলেন, আধুনিক নৌবাহিনী গড়তে আমাদেরকে সাবমেরিন সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। অনেক যুগ ধরে আমরা সাবমেরিন সংগ্রহের চেষ্টা করে আসছি।

গত ৪-৫ অক্টোবর ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে ও পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা মিয়ানমার সফর করেন। তার পরপরই দেশটিকে সাবমেরিন সরবরাহের কথা ঘোষণা করে নয়াদিল্লী। সফরকালে দুই পক্ষ তাদের কানেকটিভিটি প্রকল্পগুলোতে অংশীদারিত্ব জোরদারে সম্মত হয়। দুই পক্ষ তাদের তিন বাহিনী- সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো বিস্তৃত করবে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত রয়েছে। দেশ দুটির মধ্যে ৭২৫ কিলোমিটার সামুদ্রিক সীমাও রয়েছে। মিয়ানমারকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে দেখে নয়াদিল্লী। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমন্বয় গড়ে তুলতে ভারত ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি গ্রহণ করেছে।

মিয়ানমার হলো ১০-জাতি আসিয়ানের অংশ। এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলায় আসিয়ানের বৃহত্তর ভূমিকা কামনা করে ভারত।

নয়াদিল্লীভিত্তিক ইন্সটিটিউট অব চায়নিজ স্টাডিজের এসোসিয়েট ফেলো শামশাদ আহমদ খান বলেন, ‘মিয়ানমারকে সাবমেরিন দেয়ার ভারতীয় সিদ্ধান্ত চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা ভারসাম্য তৈরির জন্য বেশ হিসাবি চাল বলে মনে হচ্ছে। মিয়ানমারকে সাবমেরিন দিয়ে স্পষ্টত পূর্ব প্রতিবেশির সঙ্গে নৌ সহযোগিতা জোরদার করতে চাচ্ছে।

খান বলেন, হিমালয় অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে সীমান্তে অচলাবস্থার মধ্যে নয়াদিল্লীর এই উদ্যোগে মনে হচ্ছে চীনা নৌবাহিনীর আধিপত্য মোকাবেলায় ভারত আরো প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশীদার জোগাড় করতে চাচ্ছে।

প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত বিশ্লেষক এন সি বিপিন্দ্র বলেন, মিয়ানমার একই ধরনের সাবমেরিন রাশিয়া থেকে কেনার পরিকল্পনা করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি সরবরাহ করা হবে।

মিয়ানমার অবশ্য রাশিয়ার সঙ্গে এ ধরনের চুক্তির কথা স্বীকার করেনি।

মজার বিষয় হলো প্রতিবেশী বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দুটি মিং-ক্লাস ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন সংগ্রহের পর মিয়ানমার সাবমেরিন কেনায় উৎসাহিত হয়েছে।

বিপিন্দ্র বলেন, চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে কক্সবাজারে সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনাও করেছে।

এদিকে মিয়ানমারকে তার সব সামরিক সরঞ্জাম চীনের কাছ থেকে কেনায় আগ্রহী মনে হচ্ছে না। এতে চীন উদ্বিগ্ন হতে পারে।

মিয়ানমারের গভীর সমুদ্র বন্দর কিয়াকফিউসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে চীন। চায়না-মিয়ানমার ইকনমিক করিডোর চীনের ইউনান প্রদেশকে সড়ক ও রেলপথে কিয়াকফিউ’র সঙ্গে যুক্ত করবে। এসব প্রকল্পের উপর তিক্ষ্ণ নজর রাখছে ভারত ও জাপান। এই বন্দরকে চীন সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে বলে দেশগুলোর আশঙ্কা।

সূত্র : এসএএম/নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us