স্তন ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ কী?

ডা. মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক ফয়সল | Oct 24, 2020 07:00 am
স্তন ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ কী?

স্তন ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ কী? - ছবি : সংগৃহীত

 

স্তন ক্যান্সার এক নীরব ঘাতক। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও দিন দিন এ মরণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে। তাই সচেতনতা, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সে অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ খুবই জরুরি।

স্তন ক্যান্সারের উপসর্গগুলোর মধ্যে ব্যথাহীন চাকা (Lump) অন্যতম লক্ষণ। এছাড়া স্তনের বোঁটা (নিপল) দিয়ে রক্ত পড়া, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া, বগলের নিচে চাকা, স্তনের আকার পরিবর্তন ও স্তনের বোঁটা ভেতরের দিকে ডেবে যাওয়া স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্ণয় খুবই জরুরি। দীর্ঘ প্রজনন কাল, নিঃসন্তান নারী ও যে মা স্তন দুগ্ধ পান করান না,তাদের ঝুঁকি বেশি। পরিবারের ১ম ডিগ্রির আত্মীয়- মা,খালা,বোন, নানী কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে জন্মনিরোধক পিল ও হরমোন প্রতিস্হাপণ পদ্ধতি গ্রহণ করলেও ঝুঁকি বাড়ে।

আতঙ্ক ও লজ্জা নয়, সচেতনতাই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার। ৩৫ বছরের পর নিয়মিত (বছরে অন্তত একবার) স্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারা স্তন পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যকীয়। নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তনের যেকোনো সমস্যা সনাক্ত করা সম্ভব। স্তনে যেকোনো চাকা (lump) অনুভূত হলে,স্তনের আকার, বোঁটার কোনো বিকৃতি, বগলের নিচে চাকা পরিলক্ষিত হলে দ্রুত সার্জনের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

যত দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যাবে, ততো স্তন ক্যান্সার সার্জারিতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণে রোগের ইতিহাস জানা খুবই জরুরি।বিশেষজ্ঞ সার্জন দ্বারা স্তন পরীক্ষা করা (Clinical Breast Examination ), রেডিওলোজিকাল পরীক্ষা- স্তন ও বগলের আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি এবং হিস্টোলজিক্যাল পরীক্ষার- FNAC,TRUCUT BIOPSY মাধ্যমে আমরা সহজেই রোগ নির্ণয় করতে পারি।

স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার মধ্যে সার্জারি (অপারেশন) অন্যতম।প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা গেলে বর্তমানে সম্পূর্ণ স্তন না ফেলে (ব্রেস্ট কনজার্ভিং সার্জারি) চিকিৎসা সম্ভব।এছাড়াও ক্যান্সারযুক্ত স্তন সম্পূর্ণ কেটে ফেলে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে শূন্যস্হান প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। অপারেশন-পরবর্তী চিকিৎসার মধ্যে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি উল্লেখযোগ্য।

অপারেশন-পরবর্তী ফলোআপ বিভিন্ন ধাপে সারা জীবন করতে হবে।
পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, আধুনিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে স্তন ক্যান্সারকে জয় করতে হবে। স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাসে এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক : এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এফ.সি.পি.এস (সার্জারি)
আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি)
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্পেশালাইজড ব্রেস্ট (স্তন) সার্জারি বিশেষজ্ঞ

কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে জানুন

ডা: আ ন ম মঈনুল ইসলাম

কোলোরেকটাল ক্যান্সার বলতে বৃহদান্ত্র থেকে মলদ্বার পর্যন্ত অংশের ক্যান্সারকে বুঝায়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে প্রতি ২১ জন পুরুষের মধ্যে একজন এই ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন এবং ক্যান্সারে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ এটি। উন্নত বিশ্বে কোলোরেকটাল ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি হলেও বাংলাদেশেও এই ক্যান্সার দিন দিন বাড়ছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ লক্ষণ থাকায় এই রোগ প্রাথমিক অবস্থায় সহসা ধরা পড়ে না।

ঝুঁকিতে যারা
বেশি বয়স, তবে কম বয়সেও হতে পারে
যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে
উচ্চ প্রাণিজ প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ
আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া
ধূমপান ও মদ্যপান
শারীরিক শ্রম কম করা

যাদের কোলনে আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রন্স ডিজিজ অথবা পলিপ আছে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই ঘাটতি এ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে

লক্ষণ
মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, যেমন : পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য, বারবার বা অসম্পূর্ণ পায়খানা, পায়খানা পেন্সিলের মতো চিকন হওয়া।
পায়খানার সাথে বা মলদ্বার থেকে রক্ত পড়া এবং রক্তশূন্যতা
পেটে ব্যথা
পেট ফেঁপে থাকা
অবসাদ বা ক্লান্তি
পেটে চাকা সৃষ্টি হওয়া
ওজন কমে যাওয়া

রোগ নির্ণয়
ওপরের লক্ষণ থাকলে একজন সার্জনের পরামর্শ মতো প্রয়োজন অনুযায়ী মলদ্বার পরীক্ষা; আল্টাসনোগ্রাম, কোলোনোসকপি ও বায়োপসি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই, পিইটি-সিটি, রক্তের সিইএ এবং অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে অপারেশনের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। রোগের অবস্থা ভেদে সার্জারির আগে বা পরে কেমোথেরাপি, যুগপৎ কেমো-রেডিওথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ইত্যাদি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারির পর কেমোথেরাপি লাগবে কি না, তা নির্ভর করে রোগের স্টেজ বা অবস্থার ওপর। অপারেশনের পর কেটে আনা সম্পূর্ণ অংশের হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিরোধ
রোগের ঝুঁকি কমানের জন্য খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরি। প্রাণিজ প্রোটিন কমানো, আঁশযুক্ত শাক সবজি ও ফলমূল বেশি খাওয়া প্রয়োজন। ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দিতে হবে। শারীরিক শ্রম বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে ব্যায়াম করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্তকরণের জন্য উপরিউক্ত লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির নির্দেশনা হলো- বয়স ৫০ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো এফওবিটি এবং কোলোনোসকপি বা অন্যান্য স্ক্রিনিং পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পলিপ থাকলে বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আরো আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। দাবি করা হয় যে, এসপিরিন জাতীয় ওষুধ কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার চিকিৎসা) বিভাগ, শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us