ভারতীয় এলিটদেরকে চীনা হুঁশিয়ারি

ভারতীয় এলিটদেরকে চীনা হুঁশিয়ারি - ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি খবর প্রকাশিত হয়েছে যে তাইওয়ানের সাথে বাণিজ্য আলোচনা করার বিষয়টি বিবেচনা করছে ভারত। এতে আপত্তি জানিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লি জিয়ান মঙ্গলবার বলেছেন, তাইওয়ানের সাথে সরকারি প্রকৃতির যেকোনো ধরনের চুক্তি করা, তাইওয়ানের সাথে যেকোনো ধরনের সরকারি বিনিময়ের তীব্র বিরোধিতা করে চীন। চীনা পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসে লং জিনচুন এক প্রবন্ধে এই দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, বুধবার ভারতের ইকোনমিক টাইমসের খবর বলা হয়, তাইওয়ানের সাথে বাণিজ্যচুক্তি করার কোনো পরিকল্পনা ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশাসনের নেই। একই সূত্র ভারতীয় মিডিয়াটিকে জানায় যে তাইওয়ানের সাথে ভারত বাণিজ্য সংলাপ শুরু করতে পারে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা কল্পনাপ্রসূত ও ভিত্তিহীন।
তার মতে, তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা না করা ভারতের জন্য বুদ্ধিমত্তার বিষয়। ভারত যদি তাইওয়ানের সাথে বাণিজ্য আলোচনা করে তবে তা এক চীন নীতির পরিপন্থী হবে, সেইসাথে চীনের প্রতি ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতিরও লঙ্ঘন হবে।
লং জিনচুন বলেন, তাইওয়ান চায় যত বেশি সম্ভব দেশের সাথে সরকারি সম্পর্ক স্থাপন করতে যাতে তারা চীন মূল ভূখণ্ডের সাথে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে দরকষাকষিতে ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। কিন্তু তাইওয়ান তা চাইলেও পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও বাণিজ্যচুক্তি করতে চায় তাইওয়ান। কিন্তু তাতেও তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না।
বাণিজ্যসহ ভারত ও তাইওয়ানের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত। অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে ২০১৮ সালে দুই দেশ হালনাগাদ করা দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি করে। চীন কিন্তু অন্য দেখকে তাইওয়ানের সাথে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে বাধা দেয় না। বাণিজ্যচুক্তি যদি হতে হয়, তবে তা হতে পারে সরকারি এজেন্সিগুলোর সাথে নয়, জনসাধারণের প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে। কোনো দেশ সরকারি বাণিজ্যচুক্তি করলে তা আর কেবল পুরোপুরি বাণিজ্য ইস্যু হয়ে থাকে না।
তিনি বলেন, তাইওয়ানের সাথে ভারত সর্বোচ্চ যা পারে তা হতে পারে অনুমানমূলক পদক্ষেপ। এটা এমনকি তাইওয়ান কার্ড খেলার মতো পরিস্থিতিও নয়। আন্তঃতাইওয়ান প্রণালী সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু করার নেই।
এখন পর্যন্ত তাইওয়ানের ব্যাপারে ভারত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা এসেছে প্রধানত জনসাধারণ পর্যায় থেকে। ভারত সরকার সরকারি পর্যায়ে এক চীন নীতি লঙ্ঘন করেনি। তবে ব্যতিক্রম হলো তাইওয়ানে নতুন কূটনীতিককে নির্বাচন করা। চীনের সাথে সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তা করে ভারত।
চীনা ওই বিশ্লেষক বলেন, ভারতীয় এলিট, মিডিয়া ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাইওয়ান কার্ড খেলার মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথা বলছেন। তারা আসলে ভারতীয় সমাজে চীনবিরোধী ভাবাবেগকে ইন্ধন দেয়ার জন্য এ কাজ করছে। কিন্তু তারা ভারতের নিজস্ব কূটনৈতিক দুর্দশা দেখতে পাচ্ছে না।
তার মতে, তাইওয়ান প্রশ্নটি চীন-ভারত সম্পর্কে অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। সীমান্ত বিরোধ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বেশ সমস্যা সৃষ্টি করলেও দুই পক্ষ বৈরিতা আর না বাড়ার পক্ষে মত দিয়েছে।
কিন্তু ভারত যদি তাওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে সমর্থন করে, তবে চীন ও ভারত বৈরী হয়ে পড়বে। কারণ ভারতীয় পদক্ষেপের ফলে চীন পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বাধ্য হবে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলোকে সমর্থন দিতে। পারস্পরিক আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। একে অপরের দুর্বল স্থানগুলোতে আক্রমণ করবে। একে অপরের মূল স্বার্থে আঘাত হানবে।
লং জিনচুন বলেন, ভারত সরকারকে ক্ষতি মূল্যায়ন করা উচিত। তাইওয়ান কার্ড খেললে কী পরিণাম হতে পারে, তা হিসাব করা উচিত ভারতের। আশা করা হচ্ছে, ভারত সংযম প্রদর্শন করবে এবং চীনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার ব্যাপারে বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে।
সূত্র : এসএএম