ভারতের বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুললেন ইমরান খান
ভারতের বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খুললেন ইমরান খান - ছবি : সংগৃহীত
শুধু ভারতে উৎপাদিত বাসমতি চাল খাঁটি বলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে (ইইউ) নয়াদিল্লীর দাবির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান। ইইউ ভারতের দাবি মেনে নিলে পাকিস্তানের বাসমতি চাল রফতানি বাজার গুরুতর হুমকির মুখে পড়বে এবং গত তিন বছর ধরে একক বাজার হিসেবে তারা যে প্রবেশ সুবিধা পেয়ে আসছিলো তা হারাবে।
বাসমতি চালের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই)-এর জন্য ২০১৮ সালে ভারত ইইউ-তে আবেদন করে। লম্বা দানার সুগন্ধী এই চালটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুবই জনপ্রিয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এ চাল ইইউ-তে রফতানি করা হয়। নিজস্ব মূল্যায়নের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর ইইউ’র অফিসিয়াল জার্নালে এই আবেদনের কথা প্রকাশিত হয়।
এতে কারো আপত্তি আছে কিনা তা জানাতে বলে ইইউ। ইউরোপে পাকিস্তানও বাসমতি চাল রফতানি করে। গত ৫ অক্টোবর তারা ঘোষণা করে যে ভারতের দাবির বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান কমিশনে (ইসি) আপত্তি জানাতে যাচ্ছে তারা। ইইউ’র আইন অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই আপত্তি জানাতে হবে। এরপর পাকিস্তান আরো দুই মাস সময় পাবে তাদের আপত্তির সপক্ষে প্রমাণ উত্থাপনের জন্য।
জিআই হলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানে উৎপাদিত পণ্যের মান, সুনাম ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাতন্ত্র্যসূচক চিহ্ন। কোন পণ্যের জিআই ট্যাগ এতে একটি প্রিমিয়াম যুক্ত করে, যা পণ্যটি বাজারে উচ্চতর মূল্যে বিক্রি হতে সাহায্য করে। এর সুবিদিত উদাহরণ হলো সুইস-মেড ঘড়ি, পেরুর চুলুকানাস সিরামিক ও থাই সিল্ক।
বিশ্বের বাসমতি বাজারের ৬৫% ভারতের দখলে। বাকিটা পাকিস্তানের। কিন্তু গত তিন বছরে ইইউ’র বাজারে পাকিস্তানের রফতানি ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কারণ ২০১৮ সালে এই বাণিজ্য ব্লক কৃষিপণ্যে ব্যবহৃত কীটনাশকের অনুমোদিত মাত্রা হ্রাস করে। ফলে ভারত বার বার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়।
ফলে, ইইউতে পাকিস্তানের চাল রফতানি প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়ায়। বলতে গেলে ভারতের বাসমতি চালকে ইইউ থেকে বিদায় করে দেয়া পাকিস্তানের বাসমতি।
২০১৯ ও ২০২০ সালের এ পর্যন্ত চাল রফতানি থেকে পাকিস্তান আয় করে ২.২ বিলিয়ন ডলার, এর ৩৬% বাসমতি থেকে। প্রিমিয়াম বাসমতির জন্য এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে এ রকম একটন চাল বিক্রি হয় ৯২৫ ডলার মূল্যে। অন্য চালের দাম প্রতি টন ৪৭৮ ডলার। পাকিস্তানের পরিসংখ্যান ব্যুরো এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারত জিআই আবেদন করায় পাকিস্তানের নীতিনির্ধারক ও চাল উৎপাদকরা রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে এখন আগে স্থানীয় জিআই নিবন্ধন আইন তৈরি করতে হবে। এরপর যে অঞ্চলে বাসমতি চাষ হয় তা চিহ্নিত করতে হবে। দ্বিতীয় বিষয়টি প্রাদেশিক রাজনীতিতে ভারাক্রান্ত। এসব করতে পারলেই তারা কেবল ইসি-তে ভারতের দাবির বিরুদ্ধে কার্যকর চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারবে।
ইউরোপের বাজারে পাকিস্তানি বাসমতির ২০% রফতানি হলেও ভারত যদি জিআই ট্যাগ পেয়ে যায় সেটা পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে। তখন বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা বাসমতি বলতে পাকিস্তানের বদলে ভারতকেই চিনবে।
বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় ব্রাসেলসে জিআই নিয়ে আসন্ন লড়াই সম্পর্কে ভারত বা পাকিস্তানের কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলছে না।
তবে বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত পাকিস্তানের একটি সূত্র পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে নিক্কেইকে বলে, ‘আমরা দৌড়ের উপর আছি।’
তিনি বলেন, পাকিস্তানকে আটকে দিয়ে ভারত তার হারানো বাসমতি বাজার উদ্ধারে মরিয়া। ইউরোপ যদি ভারতের জিআই দাবি মেনে নেয় তাহলে তারা সারা দুনিয়ায় একই কৌশল প্রয়োগ করবে।
‘তাই আমাদেরকে অবশ্যই ইসি-তে গিয়ে তাদের অপচেষ্টা ঠেকাতে হবে। তা নাহলে তারা পরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যাবে, সেখানে ১৬৪টি দেশ তাদের পক্ষে কথা বলবে।’
ডব্লিউটিও’র সঙ্গে যুক্ত খাদ্য ও কৃষি বিশেষজ্ঞ সৈয়দ ওয়াজিদ পীরজাদা বলেন, ইইউ-তে ভারত যদি জিআই অধিকার পেয়ে যায় তাহলে সে অন্যান্য বাজারেও সেই সুবিধা পাবে। কারণ তখন আইনি নজির থাকবে।
পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে পাকিস্তানের আপত্তি ইইউ গ্রহণ করবে কারণ তারা আগে থেকেই ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানকে বাসমতি উৎপাদক হিসেবে চেনে। পাকিস্তান থেকে বাসমতি চাল আমদানির বিধান রয়েছে ইইউ’র আইনে।
পার্লামেন্টে উত্থাপনের ১০ বছর পর চলতি বছরের মার্চে পাকিস্তান স্থানীয় জিআই বিল পাস করে। এরপর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কর্মকর্তারা স্থানীয় জিআই রেজিস্ট্রি তৈরি করতে পারেননি, যা ইসি’র কাছে পেশ করে দেখাতে হবে যে পাকিস্তানে বাসমতি জিআই-প্রটেকটেড।
অন্যদিকে ভারত ১৯৯৯ সালে জিআই আইন পাস করে এবং ২০০৩ সালে তা কার্যকর হয়।
পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো, ভারত বাসমতির জিআই পেয়ে গেলে পাকিস্তান যে শুধু বাজার হারাবে তা নয়, তখন পাকিস্তানি বাসমতি ভারতীয় মোড়কে আবদ্ধ হয়ে ভারতীয় বাসমতি হিসেবে বিশ্ববাজারে বিক্রি হবে।
সূত্র : নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ