মালদ্বীপে চীন-ভারতের লড়াই
মালদ্বীপে চীন-ভারতের লড়াই - ছবি সংগৃহীত
আইল্যান্ড প্যারাডাইজ’ মালদ্বীপ ২৬টি ছোট দৃষ্টিনন্দন দ্বীপের সমষ্টি। দ্বীপটি ২৯৮ বর্গকিলোমিটার মাত্র। আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন, গড়ে ১৫ লাখ পর্যটক ফি বছর আসে। শুধু আমেরিকা থেকে আসে ৩০ হাজারের মতো। এখানে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা একটি সামাজিক ব্যাধি, জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি হাজারে প্রতি বছর বিয়ে বিচ্ছেদের হার ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ!
এখন চীন অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে মালদ্বীপে প্রবেশ করেছে। ব্রিজ, বাঁধ ও নৌবন্দর বানাচ্ছে। বিরোধিতা সত্ত্বেও মালদ্বীপ ও চীন ‘ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করেছে যা সংসদেও পাস হয়েছিল। রাজধানী মালেতে বিমানবন্দরের কাজ চলছে, এক হাজার অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে গৃহায়ন সমস্যা সমাধানে। মনে করা হচ্ছে, চীন মালদ্বীপে নৌবাহিনীর ঘাঁটি বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। জিবুতির পর মালদ্বীপে চীন এ নৌবন্দর বানাতে চায়।
চীন ঢুকে যাওয়ার পর জাতিসঙ্ঘের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ‘আইনের শাসন’, ‘বাকস্বাধীনতা’ ও ‘গণতান্ত্রিক ধারা’ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে, এসব দু’বছর আগের রাজনৈতিক অবস্থা। হিউম্যান রাইটস প্রধান বলেছেন, মালদ্বীপ প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ ‘গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত’। জাতিসঙ্ঘের সেক্রেটারি জেনারেল জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। নাশিদ চান ভারত সেনাবাহিনীসহ একজন মুখপাত্র প্রেরণ করুক যাতে বিচারক ও রাজনৈতিক বন্দীরা মুক্তি পায়। এটি নভেম্বরের নির্বাচনের সময়ের কথা, নাশিদ যুক্তি দেখিয়েছিলেন- এতে অনেকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু চীনের সার্বিক সহায়তা পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে বলে ভারতের অভিযোগ। চীন বলেছিল, ভারত সেনাবাহিনী পাঠালে চীন বসে থাকবে না। যদি এমন হয় তবে বিরোধীরা নির্বাচনে আসতে পারবে না, ইয়ামিন সদলবলে আবার জিতে যাবেন।
দু’বছর আগের রাজনৈতিক দুর্যোগে ভারত হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছে। এখন মালদ্বীপের রাজনীতিতে ঘরে-বাইরে একাধিক পক্ষ কাজ করছে। সরকার, বিরোধী শক্তি, সুপ্রিম কোর্ট, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, চীন ও ভারত। ১৯৮৮ সালে ভারত ‘অপারেশন ক্যাকটাস’ পরিচালনা করে সেনাবাহিনীর ক্যু নস্যাৎ করে এবং মামুন আবদুল গাইয়ুমকে পুনঃক্ষমতায় বসায়। মামুন মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা। এ পার্টির সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো। গাইয়ুম বন্দী হওয়ার পর ভারতের কাছে এসওএস পাঠানো হয় সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য যা ভারত ৩০ বছর আগেও করেছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ভারত সেনা পাঠালে চীনও সামরিকভাবে এগিয়ে আসবে বলে চীন হুঙ্কার দিয়েছে, মালদ্বীপে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হবে এবং পরিস্থিতি সব পক্ষের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।
ভারত চায় মালদ্বীপে ভারতপন্থী সরকার থাকুক। গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারতের বড় ইচ্ছা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকুক।’ ভারত ভয় করছে চীন-মালদ্বীপ মেরুকরণকে। চিন্তা করছে নতুন কোনো পথ সৃষ্টির।
বিগত ইয়ামিন সরকারের অনুরোধে চীন মালদ্বীপের উত্তরে বন্দর নির্মাণ করছে। গত বছর উভয় দেশ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করেছে। এ স্বাক্ষরের ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় এফটিএ স্বাক্ষরকারী দ্বিতীয় দেশ হলো মালদ্বীপ। পাকিস্তান এর আগে চীনের সাথে এরকম চুক্তি করেছিল। এ চুক্তি ভারতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর মতো। গত বছরের প্রথম দিকে চীনের তিনটি যুদ্ধজাহাজ মালদ্বীপে এলে ভারত অসন্তোষ প্রকাশ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি স্থাপনে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক হওয়ায় ভারত মালদ্বীপের সাথে সামরিক বন্ধন স্থাপন করতে চায়। সৌদি আরবের সাথে পাকিস্তানে চির ধরা সম্পর্ক হওয়ায় এবং পাকিস্তান মালদ্বীপ সুসম্পর্ক থাকায় সেই কার্ডও ব্যবহার করা হয়েছে। জানা যায়, সম্প্রতি বিন সালমান অবকাশ যাপনে মালদ্বীপ ঘুরে এসেছেন।
ভারত মালদ্বীপে সামরিক উপস্থিতির বিনিময়ে দেশটিকে স্বল্প সুদে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ঋণ মালদ্বীপকে চীনের পাওনা পরিশোধে সহায়তা করবে। এশিয়ান রিভিউ জানায়, এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে এবং ২৭ ডিসেম্বর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহের ভারত সফরের আগেই বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। গত ১৭ নভেম্বর মালের নতুন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদ চারদিনের সফরে ভারত যান। তার সফর শেষে এ ঋণ আলোচনা নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের আমলে ভারতের সাথে মালদ্বীপের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। গত ফেব্রুয়ারিতে মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা জারি করা হলে ভারত ‘গভীর হতাশা’ প্রকাশ করে। ইয়ামিনের সময় দেশটির বেশ কিছু বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করে চীন। এতে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটিতে প্রভাব হারানোর আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ছিল নয়াদিল্লি। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতর সূত্র জানায়, মালদ্বীপের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ভারত প্রথম’ নীতির কথা পুনরুল্লেখ করেন।
মালে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটির নিরাপত্তা ও কৌশলগত উদ্বেগের ব্যাপারে স্পর্শকাতর বলেও নিশ্চয়তা দেন। এর বিনিময়ে মালদ্বীপের উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দেয় ভারত। মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, দেশটি চীনের কাছে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের মতো দেনা রয়েছে। এতে দেশটির কর রাজস্বের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পার্লামেন্টকে জানিয়েছিল যে, সাবেক সরকার কী অঙ্কের গ্যারান্টি দিয়েছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভারতীয় মিডিয়াকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযাত্রী অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আমির বলেন, চীনা তহবিলে কিছু প্রকল্প উচ্চমূল্যে বাস্তবায়ন করা হলেও সেগুলো পুনঃ আলোচনাযোগ্য নয়। আমির জানান, তার দেশ ভারতের কাছে ২০০ মিলিয়ন ডলারের মুদ্রা বিনিময় সুবিধা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তাছাড়া বাজেট সহায়তার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। সফররত মন্ত্রীরা ভারতের শিল্পপতিদের সাথে বৈঠকে বসেন এবং মালদ্বীপের স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো, পয়ঃনিষ্কাশন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
চীন এর মধ্যে পাকিস্তানের গোয়াধর বন্দরে অবকাঠামো নির্মাণ করেছে এবং ইরানের চাবাহারেও কাজ চলছে। এ দুটি বন্দর দিয়ে চীন সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। ফলে ভারত মহাসাগর, ওমান সাগর ও হরমুজ প্রণালীতে চীন আধিপত্য রক্ষা করতে সক্ষম হবে। চীন-ইরান অক্ষ ওই অঞ্চলে শক্ত অবস্থান তৈরি করায় উপসাগরীয় কিছু দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সমস্যায় পড়েছে। বাহরাইনে আমেরিকার রণতরী অবস্থান করছে এবং ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। কিন্তু চীনের হঠাৎ অগ্রাভিযানে আমেরিকা মালদ্বীপে ঘাঁটি করতে সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের পক্ষে একা মালদ্বীপকে সামলানো সম্ভব নয়, শ্রীলঙ্কাই এর বড় উদাহরণ।
মালদ্বীপ ও যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে গত ১০ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা চুক্তি, মূলত সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মালদ্বীপ অন্যদিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ, দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপে আমেরিকার বড় সামরিক বেস রয়েছে। সেটির নিরাপত্তার দিকে নজর দিতেও মালদ্বীপের অবস্থান কৌশলগত সাপোর্ট দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তার কথা ছাড়াও ভারত মহাসাগরের কথা বলা আছে। চুক্তির ফ্রেমওয়ার্কে বলা হয়েছে- এই চুক্তি ‘ডিফেন্স পার্টনারশিপ’ এবং ‘মেনটেইনিং পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি ইন দ্য ইনডিয়ান ওসান’ যার মূল উদ্দেশ্য ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় নিরাপত্তা, যা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের প্রয়োজন।
চুক্তিতে বলা হয়েছে- শান্তি ও সাগরে নিরাপত্তার জন্য এ সমঝোতা কাজ করবে। ভারত লক্ষ করেছে, বহুদিন ধরে মালদ্বীপ-চীন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে খুব কাছাকাছি এসেছে। আবদুল্লাহ ইয়ামিন চীনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার পর ২০১৪ সালে চীনের অনেক ঋণ গ্রহণ করেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট সলিহ ভারত-চীনের মধ্যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেও ভারতের প্রতি আগ্রহী। চীনের ঋণ থেকে মুক্ত হতে ভারত মালদ্বীপকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। তাছাড়া উন্নয়ন অবকাঠামোর জন্য ৫০০ মিলিয়ন দিচ্ছে। মালদ্বীপে চীনের ৩.২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়েছে। এমতাবস্থায় ভারত ৫.৬ মিলিয়ন গ্রান্ট দিচ্ছে। তাছাড়া ভারত মালদ্বীপকে দুটি হেলিকপ্টার দিয়েছিল, দুটি রাডার স্টেশন বানিয়েছে এবং আরো একটি নির্মাণের পথে, দুটি সাবমেরিনও দিয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ভারতের মেডিক্যাল টিম মালিতে কাজ করছে।
২০১৮ সালে ইয়ামিনের সময় ভারতের সাথে সম্পর্ক তলানীতে যায়। ভারতের অনেকেই তখন সরাসরি মালদ্বীপে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে সরকারকে প্ররোচিত করে। তবে এমন কিছুর উদাহরণও আছে যেমন- ১৯৮৮ সালে ভারত মালদ্বীপে স্পেশাল ফোর্স পাঠায় যাতে মামুন আবদুল গাইয়ুমের বিরুদ্ধে কোনো ক্যু না হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে তাকে জেলে ঢোকানো হয়েছিল। তবে চীন কোনো বাহিনী দিয়ে ইয়ামিনকে সহায়তা করেনি। চীন এ পথে অগ্রসর হলে ইয়ামিন ফের জয়লাভ করতে পারত। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠে। তখন মালদ্বীপ ‘ভারত আগে নীতি’ অবলম্বন করে। মোদি আবার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম মালদ্বীপ সফর করেন, রাডার সিস্টেম উদ্বোধন করেন, যেটি মূলত ভারতীয় নেভির প্রয়োজন মিটাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ার সাথেও ভারত মিলিটারি লজিস্টিক এগ্রিমেন্ট করতে চায়, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সাথেও। এর মধ্যে চেন্নাই ভ্লাডিভস্টক মেরিন রুট দ্রুত উন্নত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারত মহাসাগরে রাশিয়ার বড় ধরনের নৌবাহিনীর উপস্থিতিকে স্বাগত জানাবে? তা মনে হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গত ১০ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তিকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসিকে অর্থবহ করতে মালদ্বীপকে জরুরি ভিত্তিতে চায়। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি। মূল উদ্দেশ্য হলো- এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্যকে বাধা দেয়া। এ কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশীদার ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া যুক্ত। এ চার শক্তি কোয়াড নামেও পরিচিত।
ভারত ইতঃপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের ভারত মহাসাগরে কৌশলগত কর্তৃত্ব বাড়ানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। ভারত এখন চীনকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে প্রবেশ করেছে। বলা হচ্ছে ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’র জন্য কাজ করবে এ চুক্তি। এটি অনুসারে মালদ্বীপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় নিরাপত্তা বিষয়ক কাজ করবে। এতে ভারতীয় কোনো কর্তৃত্ব খর্ব হবে না, বরং ভারতীয় উদ্দেশ্যকে সহায়তা দেবে। এতদাঞ্চলে এ ঘটনা খুবই অর্থপূর্ণ। চীনের সাথে মালদ্বীপ এমন কোনো সামরিক চুক্তি করেনি; যদিও চীনের বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভ মহাপ্রকল্পে মালদ্বীপও রয়েছে। এ ধরনের সামরিক চুক্তিকে চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় আঘাত বলে ভারতীয় পত্রপত্রিকাগুলো মন্তব্য করছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্টেটমেন্ট অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেও সেরূপ চলতে চাননি। ২০১৭ সালে ইয়ামিন সরকার যখন চীনের নৌবহরকে মালদ্বীপে আনেন; তাতে ভারত জোর আপত্তি জানিয়েছিল। বর্তমানে সলিহ সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক খুবই ভালো। তা ছাড়া এ চুক্তি মালদ্বীপে ভারতের অবস্থানকে সংহত করবে। ইতঃপূর্বে চীনের সাথে ইয়ামিন সরকারের করা ‘জয়েন্ট ওসান অবজারভেশন স্টেশন’ চুক্তি সলিহ বাতিল করে দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে এই চুক্তি বড় এক স্বস্তির বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-মালদ্বীপ অক্ষ এখন কাজ করছে। চীন বিকল্প কী কৌশল অবলম্বন করে সেটি দেখার অপেক্ষায়।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার