আফগানিস্তানে চীনের স্বার্থ
চীনা প্রেসিডেন্ট শি - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানে শান্তির জন্য আলোচনায় মধ্যস্ততাকারী হিসেবে চীনকে স্বাগত জানানো হবে এবং এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রাখা যায় না। কথাটি বলেছিলেন তথাকথিত ‘তালেবানের পিতা’ মাওলানা সামিউল হক, ২০১৮ সালে। কাতারে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে অবশেষে আলোচনা শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বরে। তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার অনেক পরে তা শুরু হয়েছে। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই শান্তিপ্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করছে প্রবলভাবে। কিন্তু আলোচনার টেবিলে চীনকে নিয়ে আসার ধারণাটি কখনো প্রকটভাবে আসেনি।
আফগানিস্তানের সঙ্ঘাত নিরসনের প্রতি চীন কখনো প্রবল আগ্রহ দেখায়নি। অবশ্য বেইজিং অনেকটাই লো প্রফাইল রক্ষা করে চলেছে, অবশ্য তারা আফগান সরকার, তালেবান ও পাকিস্তানের মতো পক্ষগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে গেছে। তবে এখন তারা মধ্যস্ততা করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।
আফগানিস্তানের ৪০ বছরের সঙ্ঘাত বন্ধ করার জন্য চীনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহারের সময় এসেছে।
আফগানিস্তানের সঙ্ঘাতের মূল কারণের প্রতি চীন আগ্রহ দেখিয়েছে সামান্যই। তবে তারপরও দেশটির জন্য চীনের দুটি কৌশলগত লক্ষ্য রয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ে তালেবান ইতোপূর্বে আফগান বিদ্রোহে উইঘুর মুসলিমদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছিল। ফলে চীন তাদের সম্ভাব্য সীমান্ত অতিক্রম করে জিনজিয়াং প্রদেশে হুমকি ও প্রভাব সৃষ্টি নিয়ে শঙ্কায় ছিল। চীন তিনটি হুমকি দূর করার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী : চরমপন্থা, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। এখন এই অঞ্চলে মার্কিন সম্পৃক্ততা হ্রাস পাওয়ায় এসব হুমকি চীনের জন্য বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উইঘুর জনসাধারণের বিরুদ্ধে চীন সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলো আসলে চরমপন্থা দমনেরই অংশ। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ২০ লাখ লোককে পুনঃশিক্ষা ক্যাম্পে আটকে রাখা, নারীদের বন্ধ্যাকরণ ও ব্যাপকভিত্তিক নজরদারি করা। তবে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ও সমন্বয় সাধন করা হলে চীনের পক্ষে অনেক সহজে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নের আরো বড় উদ্যোগও রয়েছে।আর তা বাস্তবায়নের জন্য আফগানিস্তানে সহিংসতা হ্রাস প্রয়োজন।
চীনের সাথে আফগানিস্তানের সীমান্ত মাত্র ৭৬ কিলোমিটার হলেও এটি চীনের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশাল বাজার সম্প্রসারণ ও সরবরাহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আফগানিস্তানের মাধ্যমে চীনের পক্ষে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি), মধ্য এশিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের মাধ্যমে সংযোগের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে চীন।
ফলে আফগানিস্তানে সঙ্ঘাত হ্রাস করা চীনের জন্য নানাভাবে কল্যাণকর। বর্তমানে চীন হলো আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। মেস আয়নাক কপার খনিতে তারা ৪.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
মিডিয়ার খবরে প্রকাশ, আফগানিস্তান শান্তি চুক্তির ‘গ্যারান্টর’ হিসেবে পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে প্রস্তুত চীন।চীনের স্টেট কাউন্সিলে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শি ইয়িনহং বলেন, যতক্ষণ সুযোগ থাকবে, চীন গোপনীয়ভাবে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে থাকবে। চীন সব পক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করারও দাবি করে থাকে। শান্তিপ্রক্রিয়ায় সব পক্ষের কাছেই চীনের সম্ভাব্য অবদান গ্রহণযোগ্য হবে।
সূত্র : দি ইন্টারপ্রেটার