ভয়াবহ কঠিন অবস্থায় ইমরান খান
ইমরান খান - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত দুই মাস ধরে অব্যাহতভাবে বলছেন যে গত দুই মাস ধরে দেশ বেশি বেশি প্রবাসী আয় পাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব কথা হলো, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো অনেক দূরে। কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার সাথে সংশ্লিষ্ট ভীতি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে থাকা বিদ্যমান বাধাগুলোর সাথে যোগ হচ্ছে।
বিরোধী দলগুলোর জোট পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) বর্তমান সরকারর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে থাকা বাধা ও কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের চ্যালেঞ্চের চেয়ে এই আন্দোলনের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে।
পিটিআই ও বিরোধী দলগুলোর, বিশেষ করে পাকিস্তান মুসলিম লি-এন (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি), সাথে তিক্ত সম্পর্ক হলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জোরাল জাতীয় কৌশল গ্রহণ করতে না পারার অন্যতম কারণ।
পাকিস্তান প্রথম ঢেউয়ে টিকে থাকা এবং এমনকি সমতল রেখা অর্জন করলেও দ্বিতীয় ঢেউ ও তা এড়ানো বা প্রতিরোধ করার জন্য এটি এখন আগের চেয়েও বেশি দরকার।
বর্তমানে পিপিপির শাসনে থাকা সিন্ধু ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ হিসেবে স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, ‘স্মার্ট’ ও ‘মাইক্রো স্মার্ট লকডাউন’ আরোপ করেছে। জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাব দ্বিতীয় ঢেউয়ের দিকে যাচ্ছে।
গত রোববার পাঞ্জাবে ২০৩ জন পজেটিভ হয়েছে। ১৫ আগস্টের পর এটিই বৃহত্তম সংখ্যা। ওই দিন ২১০ জন শনাক্ত হয়েছিল।
কিছু প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাঞ্জাব সরকার ইতোমধ্যেই আরেক দফা প্রদেশভিত্তিক লকডাউনে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই রুগ্ন হয়ে পড়া অর্থনীতির জন্য এটি কোনোভাবেই ভালো পদক্ষেপ নয়।
গত মাসে যখন মনে হচ্ছিল, পাকিস্তান প্রথম ঢেউয়ে জয়ী হতে যাচ্ছে, তখন এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, পাকিস্তানর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ ভাগ।
এই মূল্যায়ন ইতোমধ্যেই বদলে যেতে শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, ২০২০-এ আইএমএফ বলেছে, পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে ১ ভাগ, গড় মুদ্রাস্ফীতি হবে ৮.৮ ভাগ, বেকারত্ব ০.৬ ভাগ বেড়ে হবে ৫.১ ভাগ। অথচ চলতি বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২.১ ভাগ, মুদ্রাস্ফীতি ৬.৫ ভাগ।
অর্থনীতি পুরোপুরি খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হওয়ায় এই পরিবর্তন হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব অনুভূত হতে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য সরকার কয়েকটি দেশে লকডাউন আরোপ করতে শুরু করেছে। লন্ডন পর্যন্ত কোভিড হুমকির টায়ার ২ পর্যায়ে রয়েছে। ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন ব্যাপকসংখ্যক রুগী দেখছে। এসব দেশ একইসাথে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও ভাইরাসটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে একইসাথে।
আর পাকিস্তানের জন্য অতিরিক্ত একটি বাধা হলো ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের চেয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বেশি অর্থের প্রয়োজন। অর্থনীতিতে কেবল টাকা সরবরাহ করাই ভালো কিছু নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক, মার্কিন সরকারের কাছ থেকে পাকিস্তান প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ডলার পেলেও অর্থনীতির অবস্থা খুবই শোচনীয় পর্যায়ে ছিল।
এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ পাকিস্তানে কোভিড-১৯-এর প্রভাব হ্রাস পাবে। সংস্থা আইএমএফ এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির আওতায় কাঠামোগত সংস্কারের কথাও বলেছে।
কিন্তু আইএমএফের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ইমরান খান সরকারের জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। কারণ তাতে কর যৌক্তিককরণ, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কথা রয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করলে আইএমএফ তাদের পরবর্তী অর্থ ছাড় দেবে না।
এসএএম সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে, অর্থনীতি যখন হিমশিম অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি আন্দোলনে থাকা বিরোধী দলগুলো রাজপথে আগুন উস্কে দেয়ার সুযোগ পাবে। সরকার নিশ্চিতভাবেই তা হতে দিতে চায় না। পিটিআই-নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এর ফলে আসলেই ‘পানিতে কুমির, ডাঙায় বাঘ’ অবস্থায় পড়ে গেছে।
সূত্র : এসএএম