কোন কোন দেশে অস্ত্র বিক্রি করবে ইরান?
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র - ছবি সংগৃহীত
ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সতর্ক করে দিয়ে ইরানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব দেশ বা ব্যক্তি এখন থেকে ইরানের সাথে অস্ত্র কেনাবেচা করবে সেসব দেশ ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এদিকে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বলেছেন, যেসব দেশ বহিঃশক্তির আগ্রাসন থেকে আত্মরক্ষা করতে ইচ্ছুক সেসব দেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করবে তেহরান। তিনি আরো বলেন, আমেরিকার অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার দেশগুলো চাইলে ইরান তাদের কাছে অস্ত্র রফতানি করবে। এরই মধ্যে বহু দেশ ইরানি অস্ত্র কেনার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং তারা কিছু দেশের সাথে আলাপ-আলোচনাও করেছেন বলে জানান হাতামি। তিনি বলেন, অস্ত্র বিক্রি এবং সুনির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র কেনার সব প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করেছে। হাতামি যেসব কথা বলেছেন তাতে আমেরিকার প্রতি চ্যালেঞ্জটা কিন্তু মোটেই অস্পষ্ট বা প্রচ্ছন্ন নয়। মধ্যপ্রাচ্যে মুক্তিকামী দেশগুলোর মধ্যে এক নম্বরে থাকবে ফিলিস্তিন, সেটা বলা বাহুল্য। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনে ইরানের সামরিক উপস্থিতি কোনো গোপন বিষয় নয়। চ্যালেঞ্জটা এখন আরো বড় আকারে হবে, তাতে সন্দেহ করার কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ইরানি অস্ত্র রফতানির বিরুদ্ধে যা-ই করতে যাবে সেটিই অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ এর পেছনে আর জাতিসঙ্ঘের অনুমোদন জড়িয়ে থাকবে না।
অস্ত্র শিল্পে ইরান বড় সাফল্য অর্জন করেছে এবং অন্যতম প্রধান অস্ত্র রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ইরান তার প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্রের শতকরা ৯০ ভাগ দেশেই উৎপাদন করেন থাকে। ইরানি সেনাবাহিনীর নৌ ইউনিটের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল হোসেইন খানজাদি বলেছেন, ইরানের নৌবাহিনী শক্তি ও সামর্থ্যে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অন্য কারো কাছ থেকে অস্ত্র কেনার আর প্রয়োজন নেই।
খানজাদি আরো বলেন, আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, নিষেধাজ্ঞা থাকা বা না থাকাটা আমাদের কাছে গুরুত্ব বহন করে না। কারণ আমরা গোলাবারুদ, টর্পেডো ও অত্যাধুনিক নৌযানসহ সব কিছু নিজেরাই তৈরি করেছি।’ ইরানের এসব বক্তব্য যে নিছক কথার কথা নয় তা স্বীকার করেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।
তবে সামনে ইরানের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে ট্রাম্পের দিক থেকে, যদি তিনি আগামী ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার জয়ী হন। ট্রাম্পের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ ব্রায়েন দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের ইরান নীতি কেমন হবে সেটি স্পষ্ট করেছেন। কোনো রাখঢাক না করেই তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হলে ইরানের বিরুদ্ধে এত বেশি কঠোর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে যাতে তেহরান শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি উপড়ে ফেলবে। ও’ ব্রায়েন বলেন, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে সীমিত পরিসরে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে হয়তো আলোচনা হতে পারে।
এসব কথাবার্তা থেকে ইরান বিষয়ে ওয়াশিংটনের মূল টার্গেট হওয়াটা স্পষ্ট হয়ে যায়। তারা চান, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি থেকে ইরানকে পুরোপুরি বিরত রাখতে, যাতে দেশটি শিল্প, চিকিৎসা, কৃষিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে না পারে। অর্থাৎ ইরানকে পঙ্গু করে রাখাই যুক্তরাষ্ট্রের মূল টার্গেট।
যে জাতি ফরাসি বিপ্লবের চেয়েও বৃহত্তর বিপ্লব ঘটিয়ে বিশ্বের বুকে নিজেদের স্বাধীনচেতা অস্তিত্বের প্রবল ঘোষণা ছড়িয়ে দিয়েছে, সেই ইরানিরা ট্রাম্পের কূটচালে স্বেচ্ছাপঙ্গুত্ব বরণ করে নেবে এমন ভাবনাই আসলে মানসিক পঙ্গুত্বের পরিচায়ক বললে খুব একটা ভুল হবে না মনে হয়।