হাঁপানির ৪ উপসর্গ
হাঁপানি - ছবি সংগৃহীত
অ্যাজমা বা হাঁপানি আসলে শ্বাসনালির অসুখ, যদি কোন কারণে শ্বাসনালি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনার উদ্দীপ্ত হয়। তখন বাতাস চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি হয়, ফলে শ্বাস নিতে বা ফেলতে কষ্ট হয়।
সারা বিশ্বে ৫-১০ বা প্রায় ২৩.৪ মিলিয়ন মানুষ যার মধ্যে প্রায় ৭ মিলিয়ন শিশু হাঁপানিতে আক্রান্ত। সাধারণত শীতকালে এর আধিক্য থাকলেও অন্য ঋতুতে হয় না, তা নয়।
কেন হয়?
এটুপি : জেনেটিক কারণে যাদের অ্যালার্জি হয়।
জেনেটিক : বংশে মা-বাবা, দাদা-দাদি বা অন্য কারো হাঁপানি থাকলে হতে পারে।
কখন বাড়ে?
অ্যালার্জেন : ঘরবাড়ির ধুলা, ময়লা, মাইটেপোড়া, ফুলের রেণু, পাখির পালক, জীব-জন্তুর পশম, ছত্রাক ইত্যাদি অ্যালার্জিজনিত পদার্থ থেকে হাঁপানি হতে পারে।
ঠাণ্ডা পদার্থ : ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম বা অন্যান্য ঠাণ্ডা পদার্থও হতে পারে হাঁপানি।
বুকের সংক্রমণ : ভাইরাস, বিটা ব্লকার।
অন্যান্য : শারীরিক পরিশ্রম, কিছু ঔষধ যেমন অ্যাজিরিন, ব্যথানাশক।
অ্যাজমাতে কেন এই শ্বাসকষ্ট?
আমাদের ২-৫ মি.লি. ব্যাসবিশিষ্ট শ্বাসনালি চারদিকে মাংসপেশি পরিবেষ্টিত ও ক্ষুদ্র শ্বাসনালি দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় খুব সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। যদি কখনো কোনো উত্তেজনাকর জিনিস শরীরে প্রবেশ করে তখন শ্বাসনালির মাংসপেশি সঙ্কুুচিত হয়। ফলে শ্বাসনালির গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় আঠালো মিউকাস জাতীয় পদার্থ আর ইনফেকশনের কারণে শ্বাসনালি এত সরু হয় যে, বাতাস বায়ুথলিতে পৌঁছায় না। তখন শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। এটা খুব মারাত্মক, বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে।
প্রকারভেদ :
ক্লিনিক্যাল প্রকারভেদ
ষ ইন্টারমিটেন্ট বা মাঝে মাঝে
ষ মৃদু পারসিসটেন্ট (অবিরোম) ষ মডারেট (পরিমিত) পারসিসটেন্ট ষ সিভিয়ার (তীব্র) পারসিসটেন্ট
অ্যাজমা (বাহ্যিকভাবে)
ষ অ্যালার্জিক অ্যাজমা ষ অ্যালার্জি ছাড়া অ্যাজমা ষ বয়স্কদের অ্যাজমা ষ বেশি ওজনের অ্যাজমা
স্পেশাল ধরনের :
ষ ব্যায়ামের কারণে অ্যাজমা
ষ কাফ ভেরিয়্যান্ট অ্যাজমা
ষ অ্যাসপিরিনের কারণে
ষ পেশাগত কারণে
উপসর্গ :
১. শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট
২. বুকের ভিতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই শব্দ
৩. দম বন্ধ ভাব
৪. ঘন ঘন কাশি
পরীক্ষা-নিরীক্ষা :
ষ স্পাইরোমেট্রি (শ্বাসের পরীক্ষা) ষ রক্ত পরীক্ষা বিশেষত রক্তে ইওসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কিনা ষ রক্তের আইজিই ষ স্ক্রিন প্রিক টেস্ট ষ বুকের এক্সরে
অ্যাজমা চিকিৎসা :
অ্যালার্জেন পরিহার : হাঁপানির হাত থেকে সুস্থের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, যে জিনিসে অ্যালার্জি তা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন।
প্রদাহ নিরাময় : স্টেরয়েড যেমন লোমেথাসন, বুডিসনহিড, গ্লুটিকাসন ইত্যাদি। এই ওষুধগুলো সব সময় ব্যবহার করতে হয়। অ্যাজমা চিকিৎসার এগুলো হচ্ছে মূল ওষুধ।
শ্বাসনালির সঙ্কোচন বন্ধে : যেমন সালবিউটামল, টারবিউটালিন এগুলো তাড়াতাড়ি শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মুক্তি দেয়। কিন্তু এগুলো শুধু যখন শ্বাসকষ্ট, কাশি বা বুকে চাপ হলে ব্যবহার করতে হবে।
লিউকোট্রাইন নিয়ন্ত্রক, মন্টিলুকাস্ট ব্যবহার।
শিশুদের হাঁপানি : শিশু হাঁপানির আক্রান্ত হলে তাকে সাধারণত ওষুধ ইনহেলার বা স্প্রের মাধ্যমে দেয়া হয়। একজন ছোট শিশুর থেকে বিশেষ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা হয়।
গর্ভাবস্থায় হাঁপানি : গর্ভাবস্থায় হাঁপানি হলে উচ্চরক্তচাপ, প্রিটাম লেবার, প্রিএকলামাসিয়া এবং শিশুর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তাই মা ও সন্তানের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য অ্যাজমা তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলা প্রয়োজন।
করোনা ও হাঁপানি : হাঁপানি বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাস সংক্রমণ। এক্ষেত্রে হাঁপানি রোগীদের কন্ট্রোল না থাকলে করোনার কারণে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এজন্য হাঁপানি রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করে রোগটি নিরাময়ে রাখতে হবে।
সবশেষে, আগে ধারণা ছিল, অ্যাজমা হলেই মৃত্যু। কিন্তু বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এ চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। একটু সাবধানে নিয়ম মেনে চলাচলই সুস্থ সুন্দরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন একজন অ্যাজমা রোগী।
লেখক : কনসালটেন্ট, বক্ষব্যাধি বিভাগ, শেখ ফজিলাতুন মুজিব মেমোরিয়াল কে পি জে স্পেশালাইজ হসপিটাল