চীন-ভারতকে সামলানোর উপায় ভাবছে নেপাল

কমল নাথ ভট্টাচার্য | Oct 20, 2020 07:43 am
কে পি ওলি

কে পি ওলি - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মধ্য নেপাল নতুন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করছে, যাতে পরিবর্তিত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ প্রতিফলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি টাস্কফোর্স নতুন একটি নথি চূড়ান্ত করেছে। মন্ত্রিসভা শিগগিরই তা অনুমোদন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তা প্রকাশ করা হবে কিনা তা নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। গত বছর নতুন নীতি প্রণয়নের সময় টাস্ক ফোর্স সেমিনার ও আলোচনার মধ্য দিয়ে পরামর্শ কামনা করা হয়।

এক সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গায়ওয়ালি বলেন, তার মন্ত্রণালয় জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতার মতো বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে নেপারেল পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক দলিল প্রস্তুত করছে।
তিনি বআরো বলেন, নতুন নীতি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ও সেইসাথে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশও প্রতিফলিত করবে। ২০১৫ সালের নতুন সংবিধানে আমাদের জাতীয় স্বার্থ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর আলোকেই নতুন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে।

নেপাল এমন এক সময়ে নতুন পররাষ্ট্রনীতি কৌশল নির্ধারণ করছে, যখন তারা পরাশক্তিগুলোর ক্রমবর্ধমান ও প্রতিযোগিতামুলক স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হিমশিম খাচ্ছে। এশিয়ান জায়ান্ট ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বিধান করতে হিমশিম খাওয়া এই দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাচ্ছে।
উভয় দেশের প্রতি নেপালের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থান আমাদের জন্য একটি সুযোগ। নতুন পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য হবে আমাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা।
নেপালের ২০১৫ সালের সংবিধানে দেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। ওই সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় অখণ্ডতা, জাতীয়তা, মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। নেপালি জনগণের অধিকার, সীমান্ত নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধি হলো নেপালের জাতীয় স্বার্থের মূল বিষয়।
এই সংবিধানে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতাগুলো সাম্য ও পারস্পরিক স্বার্থের আলোকে পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

ভারতের সাথে সীমান্ত ইস্যুতে নেপালের সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ১৯৫০ সালের শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি সংশোধন করতেও চাপ দিচ্ছে নেপাল। ২০১৬ সালে এই লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ইমিনেন্ট পারসন্স গ্রুপ (ইপিজি)। এই গ্রুপ ২০১৮ সালে তাদের রিপোর্ট প্রস্তুত করলেও ভারত এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করেনি।
অতি সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উন্নতি হলেও তা পর্যাপ্ত হয়নি।
দুই পক্ষই সম্পর্কে উন্নতি চায়। অবশ্য সীমান্ত সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে ভারত ও নেপাল সম্পর্কের উন্নতি চায়।
কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) সরকারের বিরুদ্ধে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে কোনো দেশের সাথেই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সম্পর্ক উন্নয়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) নেপাল যোগ দিয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু এখনো তারা বিআরআইয়ের আওতায় সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নির্বাচন করেনি।
তাছাড়া বিআরআই কিভাবে বাস্তবায়ন করবে, সে ব্যাপারেও দুই দেশ একমতে আসতে পারেনি। তাছাড়া চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিপিংয়ের গত অক্টোবরে নেপাল সফরের সময় সই হওয়া চুক্তিগুলোও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অবশ্য গত চার বছরে নেপাল ও চীনের মধ্যে বেশ কিছু কৌশলগত চুক্তি হয়েছৈ। একইভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপালে চীনা রাজনৈতিক প্রভাব বেড়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের (এমসিসি) আওতায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে।

ওলির সরকার পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চাচ্ছে। তবে তা চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রকে সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু সফল হয়, তা দেখার বিষয় রয়ে গেছে। বিশেষ করে চীন-ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে তা কী হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
নেপালের পরাশক্তির লড়াইয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ইতিহাস আছে। অবশ্য এর মানে এই নয় যে দেশটি এর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে।

সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us