যুক্তরাষ্ট্রে করোনার এ হাল কেন?

সৈয়দ আবদাল আহমদ | Oct 19, 2020 06:19 pm
যুক্তরাষ্ট্রে করোনার এ হাল কেন?

যুক্তরাষ্ট্রে করোনার এ হাল কেন? - ছবি সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ২০ জানুয়ারি। এখন রোগী ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ১৮ হাজারের বেশি। মহামারী মোকাবেলার প্রস্তুতির জন্য দীর্ঘ সময় পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্পদের ঘাটতি নেই। আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসা অবকাঠামো, সাথে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। তার পরও এ পরিস্থিতি কেন?
এর কারণ ট্রাম্প প্রশাসন মুখে মুখে মানুষকে আশ্বস্ত করলেও রোগ পরীক্ষা করা, লোকজনকে কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা, আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) নেয়া, মাস্ক পরানো, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে যথেষ্ট পদক্ষেপ করেনি। এতে ভুল বার্তা পেয়েছে মানুষ। জানতে পারেনি মহামারীর প্রকৃত অবস্থা কী? ফলে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। চলাফেরা মেলামেশায় সতর্ক হয়নি।
চীনে জানুয়ারির শেষে যখন করোনা বাড়ছিল তখনই ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সেনটার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। মার্কিনিদের চীন ভ্রমণেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প পাত্তা দেননি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো হোয়াইট হাউজ তথা ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পায়নি, দিকনির্দেশনা বা উৎসাহ পায়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ট্রাম্প নিজে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে তিন দিন থেকেছেন। হাসপাতালে থাকতেই এক দিন গাড়ি নিয়ে শোডাউনে বেরিয়ে পড়েন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে হোয়াইট হাউজে এসে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে মাস্ক ছুড়ে ফেলে দেন। হোয়াইট হাউজে দুই হাজার সমর্থককে ডেকে এনে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেন। অথচ তখনো তিনি করোনামুক্ত নন। এই খামখেয়ালিপনা, এই গাফিলতির খেসারত ট্রাম্পকে হয়তো দিতে হতে পারে নির্বাচনে।

ট্রাম্প-বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার ও বাস্তব পরিস্থিতি

ট্রাম্প ও বাইডেন দু’জনই নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। সাংবাদিকরা বলেছেন, করোনা মহামারীর কারণে এবার দেশের কোথাও নির্বাচনী উত্তেজনা নেই, তবে দ্ইু প্রার্থী কথার খই ফোটাচ্ছেন। উভয়ের দৃষ্টি এখন আট অঙ্গরাজ্যে। অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিন। এসব অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করছে জয়-পরাজয়। এই আট অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। বাইডেনের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে স্থানীয় টিভি ও সংবাদপত্র। ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা রাজ্যে হিস্পানিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়ার স্লট পাচ্ছে না ট্রাম্পের লোকেরা। এই আটটি অঙ্গরাজ্য চিহ্নিত হয়েছে ভোটের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে। অর্থাৎ যারা একেক নির্বাচনে একেক প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন বলে এগুলো ‘সুইং স্টেট’। এসব রাজ্যের জরিপে বাইডেন এগিয়ে আছেন। ডেমোক্র্যাটরা এবার নির্বাচনী প্রচারের জন্য যে বিপুল চাঁদা তুলেছে, তাও নতুন রেকর্ড। অর্থাৎ ভোটের আগের সপ্তাহ পর্যন্ত প্রচারণার বন্যা বইয়ে দিতে পারেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী ভোটারদের মধ্যে জনমত জরিপেও পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। প্রবীণ শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে তিনি। আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে যারা হিস্পানিক তাদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কম। ফলে ট্রাম্পের প্রচারশিবিরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য এমন এগিয়ে থাকার পরও বলা যাবে না বাইডেন নিশ্চিত জয়ের পথে। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়াটাই বড় কথা। রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারপারসন অ্যান্ড্রু হিট বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রান্তিক সমর্থকরা ঠিকই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাকে ভোট দেবেন। এবার ডাকযোগে ভোটের সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

ইতোমধ্যে এক কোটিরও বেশি ভোটার ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন। এ ভোট নিয়ে ট্রাম্পের আপত্তি আছে। এ ভোটে বাইডেন জিতে গেলে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ট্রাম্প তা কোর্টে নিয়ে যেতে পারেন বলে হুমকি দিয়েও রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এবার মোট ভোটারের ৬০ শতাংশ ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৬০ শতাংশ দেশজুড়ে কিভাবে তাদের ভোট ভাগ করবেন। কারণ নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় ইলেকটোরাল ভোটে, পপুলার ভোটে নয়; যা হিলারি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা অনুপাতে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। এই ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট হচ্ছে ৫৩৮টি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট জিততে হবে। যে রাজ্য যত জনবহুল, সেখানে ইলেকটোরাল ভোট তত বেশি। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ভোট ৬৩, টেক্সাসে ৩৬। অন্য দিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে মাত্র তিনটি ইলেকটোরাল ভোট। কোনো রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাররা যে প্রার্থীকে দেবেন, সে স্টেটের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট তার। এভাবে যত বেশি রাজ্যে জয় আসবে, সে প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোটে বিজয়ী হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার যে আওয়াজ উঠেছে তা মোকাবেলায় তিনি শেষ মুহূর্তে করোনাভাইরাস টিকা বাজারে আনার ঘোষণা দেয়ার ট্রাম্পকার্ড খেলতে পারেন। অন্তত ২ নভেম্বরের মধ্যেও যাতে টিকা বাজারে আনা যায় সে চেষ্টা হোয়াইট হাউজ করে যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নারাজ। যেনতেনভাবে তারা বাজারে টিকা আনার বিপক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ। ট্রাম্প নিজেও অভিবাসী পরিবারের সদস্য। অথচ তার অবস্থান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। এটাও এবারের নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারে। সব মিলে সবার কৌতূহল ৩ নভেম্বরের দিনটির দিকে। হাতি ও গাধা প্রতীকের লড়াইয়ে কে বিজয়ী হয়, ট্রাম্প না বাইডেন?

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us