কঠিন পরীক্ষায় সু চি
সু চি - ছবি সংগৃহীত
মিয়ানমারেরর ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচন ৮ নভেম্বর হওয়ার কথা। গত নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালে। তাতে আং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছিল।
২০১০ ও ২০১৫ সালের দুটি সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তেমন ব্যাপকভিত্তিক মনোযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে সামান্যই। তা সত্ত্বেও এই নির্বাচন মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি পরীক্ষা। এটি যথাযথভাবে শাসন করার এনএলডির সক্ষমতারও একটি গুরুত্বপূর্ণ লিটমাস টেস্ট।
এনএলডি ক্ষমতায় এসে ঘোষণা করেছিল যে তারা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করবে : জাতীয় সমন্বয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাংবিধানিক পরিবর্তন। জাতীয় সমন্বয় সাধন কাজে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে সামান্যই। বেশির ভাগ লোকের কাছেই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সাংবিধানিক সংশোধন সন্তোষজনক হচ্ছে না। জাতিগত রাজনৈতিক দলগুলো ও এনএলডির মধ্যে লড়াই আরো তীব্র হয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে এনএলডি সরকার মূলত স্থিতিশীলতা রক্ষা করে চলেছে, অবশ্য উন্নয়ন গতি মন্থর। এনএলডি সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে বিচক্ষণ মনোভাব গ্রহণ করেছে। তারা সাংবিধানিক বিধিনিষেধ, বিশেষ করে আং সান সু চির জন্য বিশেষভাবে তৈরী স্টেট কাউন্সিলের পদটি এড়িয়ে যাচ্ছে। এটি এনএলডির সত্যিকারের পরিচালনা স্টাইলকে প্রতিফলিত করছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মিয়ানমারে সুন্দর ব্যবস্থা থাকলেও তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্জন করতে পারেনি। উ থিন সিন সরকারের তুলনায় এনএলডি সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ও বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে কমেছে। কিয়াটের দাম বেশ পড়ে গেছে, জনগণের জীবিকার উন্নয়ন সীমিত হয়েছে। এর ফলে এনএলডি সরকারের প্রতি মিয়ানমারের গণপ্রত্যাশা হ্রাস পেয়েছে, ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনের অনেক ভোট ব্যাপকভাবে বিভক্ত হতে পারে। অনেক ভোট অন্য দলে পর্যন্ত ছুটে যেতে পারে।
এনএলডি সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম হওয়ার কারণ হলো মিয়ানমারে বারবার হওয়া জাতিগত ও সামরিক সঙ্ঘাত। এসব সঙ্ঘাত সাবেক স্থিতিশীল উন্নয়ন পরিবেশ নস্যাৎ করে দেয়। অধিকন্তু, ঘরোয়া রাজনৈতিক বহুত্ববাদ, পরিবেশগত চরমপন্থার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে, দেশটির প্রতিযোগিতামূলকতা ক্ষয়ে গেছে।
কূটনৈতিকভাবে (বিশেষ করে ২০১৮ সাল থেকে) পাশ্চাত্য দেশগুলোর সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক অব্যাহতভাবে উত্তেজনাপ্রবণ দেখা যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ রাখাইন রাজ্যের উদ্বাস্তু সমস্যা ও সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো।অকার্যকর সাড়া দেয়ার জন্য এনএলডিকে অভিযুক্ত করছে পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলো। সু চি আগে যেসব পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন, সেগুলো একের পর এক বাতিল করা হয়, দেশটির সিনিয়র সামিরক কর্মকর্তা ও কয়েকজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার ওপর অবরোধ আরোপ করা হয়, রাখাইন রাজ্যের ঘটনার জন্য মিয়ানামারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উত্থাপিত হয়।
মানবাধিকার ইস্যুতে পাশ্চাত্যের দেশগুলো নাছোড়বান্দা মনোভাব প্রদর্শন করলেও এনএলডি চাপকে ভয় পানি, বরং দেশের মূল স্বার্থ রক্ষায় সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করার নীতিতে অটল থেকেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সু চি দি হেগে এনএলডি সরকারকে রক্ষার জন্য আদালতে হাজির হন।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক হ্রাসের ফলে সৃষ্ট চাপ হ্রাস করতে এনএলডি সরকার চীন, ভারত, জাপান ও অন্যান্য এশিয়ান প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা জোরদার করেছে। বিভিন্ন প্রকল্পে তারা সাহায্য, সহযোগিতা পেতে সক্ষম হয়েছে, বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে এনএলডি সরকার চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতা করে সক্রিয়ভাবে। মিয়ানমারে মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সর্বাত্মক সহায়তা করে চীন। রোগটি নিয়ন্ত্রণে এনএলডির প্রয়াসের ফলে তারা ভোট পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, ২০১৫ সালে অনেক সুবিধা নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিল এনএলডি এবং ব্যাপকভাবে জয়ী হয়েছিল। লোকজন আশা করেছিল, সরকার দারিদ্র্য ও গৃহযুদ্ধের সঙ্কট থেকে তাদেরকে মু্ক্ত করতে পারবে। ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসতে থাকায় এনএলডি ক্ষমতায় থাকার সময় মনে হচ্ছে ফুরিয়ে আসছে। এখন আগামী গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব পরীক্ষায় এনএলডি পাস করে কিনা তা দেখার বিষয়।
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস