হঠাৎ রেগে যান? বিপদ ঠেকাতে আপনাকে যা করতেই হবে

সুজাতা মুখোপাধ্যায় | Oct 18, 2020 05:49 pm
হঠাৎ রেগে যান? বিপদ ঠেকাতে আপনাকে যা করতেই হবে

হঠাৎ রেগে যান? বিপদ ঠেকাতে আপনাকে যা করতেই হবে - ছবি সংগৃহীত

 

কথায় কথায় রাগ হয় যাদের, তাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোনের রমরমা। এর প্রভাবে হৃদস্পন্দনের হার অর্থাৎ হার্ট রেট ও রক্তচাপ যেমন বাড়ে, বাড়ে প্রদাহের প্রবণতাও। সবে মিলে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে, কমে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। কোভিডের এই মরসুমে রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কমতি হলে ক্ষতি হতে পারে মারাত্মক।

বিপদ আছে আরো। মনোচিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাগ তথা যাবতীয় নেতিবাচক আবেগ, যেমন, অ্যাংজাইটি, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি যাদের বেশি তারা সচরাচর খুব একটা স্বাস্থ্যসচেতন নন বলেও বিপদ বাড়ে। রুটিন মেনে চলা, অসুখ–বিসুখে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া তাদের ধাতে থাকে না। বরং ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য নেশা করে, উল্টাপাল্টা খেয়ে ও শুয়ে–বসে জীবন কাটান। তার হাত ধরে প্রেশার–সুগার–কোলেস্টেরল ইত্যাদি বেড়ে প্রস্তুত হয় হৃদরোগের ক্ষেত্র। কোভিড হলে বাড়ে তার জটিলতা। কোভিডের আশঙ্কাও বাড়ে। তাই এখন আরো বেশি সংযত থাকতে হবে।’’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘মারাত্মক রাগ এমন একটি জিনিস, যা মানুষকে একা করে দেয়। তার হাত ধরে বাড়ে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা। কখনো প্রবল অবসাদ। শরীরের জন্য সবকটিই ক্ষতিকারক। অতএব যেকোনো মূল্যে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। যার পোশাকি নাম অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট।’’

অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট

• আপনার যে রাগ বেশি সেটা বুঝুন। এর জন্য আপনি ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়। যে ঘটনায় আপনি রেগে যান, তাতে অনেকেই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন।

• এ বার ঠিক করুন রাগ কমাবেন এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন।

• কোন কোন ঘটনায় রেগে যান তা বুঝে নিন। সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, চেষ্টা করুন। এর জন্য যদি একটু নত হতে হয় সেও ভাল।

• নত হতে হয়েছে বলে যদি খারাপ লাগে, ভেবে দেখুন এর বিনিময়ে আপনার শরীর, মানসিক শান্তি, সম্পর্ক সবই কিন্তু রক্ষা পেল।

• চেষ্টা করেও পরিস্থিতি এড়াতে না পারলে প্রতিজ্ঞা করুন, যাই ঘটুক আপনি শুধু শুনে বা দেখে যাবেন, রাগবেন না। এমন কথা বলবেন না যাতে পরিস্থিতি জটিল হয়।

• চেষ্টা বিফলে গেলে অস্থির হবেন না। অন্য আবেগের মতো রাগও খানিকক্ষণের মধ্যে কমতে শুরু করবে। ধৈর্য ধরুন। মুখ বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে সে জায়গা থেকে সরে হেঁটে আসুন কিছুক্ষণ, মাথায় পানি ঢালুন, ঘরের কাজ করুন, কারো সঙ্গে কথা বলে মাথা ঠান্ডা করে নিন।

• এ সব সম্ভব না হলে কাজে আসবে সুইচ অফ–সুইচ অন মেকানিজম এবং ভিজুয়াল ইমেজারি। এ হলো পরিস্থিতির মাঝখানে বসে গভীরভাবে অন্য পছন্দের কিছু ভাবা যাতে মন চলে যায় অন্য কোনো জগতে। চিকিৎসকের কাছে শিখে ঘরে প্র্যাকটিস করলে বিপদের সময় কাজে লাগবে।

• ডিপ বেলি ব্রিদিং, যোগাসন, মেডিটেশনে শরীর–মন ঠান্ডা থাকে। চট করে রাগ হয় না বা হলেও কমে যায়।

• অতিরিক্ত রাগে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি চিকিৎসা করালে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। নিজেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যার প্রথম ধাপ নিজের মনকে বুঝে নেওয়া।

যেমন–

(ক) আপনার কি চাহিদা খুব বেশি?

(খ) আপনার কি ইগো খুব বেশি? হতাশা বা দুঃখ এলে তা মানতে পারেন না? তাকে রাগ দিয়ে ঢেকে রাখেন?

(গ) জীবনে যা ঘটছে তাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না?

(ঘ) সমস্যা সমাধান করতে না পারলে রাগ হয়ে যায়?

এই চারটি প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে রাগের কারণ। চাহিদা বেশি হলে তা না মিটলে রাগ হবে। ইগো বেশি হলে চাহিদা না মেটায় যে হতাশা বা দুঃখ হয় তা প্রকাশ করতে বা স্বীকার করতে লজ্জা হয়। ফলে তা চাপা পড়ে রাগের আড়ালে। প্রতিটি বিষয়কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে হতাশা এবং দুঃখ পাওয়ার আশঙ্কা প্রতি পদে। হতাশা এবং দুঃখ জমতে জমতে হয় তা রাগ হিসেবে দেখা দেয়, নয়তো মানসিক অবসাদ আসে। সমস্যা সামনে, কী করব জানা নেই, এই অবস্থাতেও সঙ্গী হয় রাগ বা মানসিক অবসাদ। এই সমস্যার মধ্যে কোনটা আপনার আছে ভেবে দেখুন। খুঁজে পেলে ভাবনা–চিন্তা করে তাদের সামলাতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us