পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বিয়ে
স্ত্রীর সাথে জসীমউদ্দীন - ছবি সংগৃহীত
মৌলভী ইদ্রিস মিয়াকে জসীমউদ্দীন আটকে রাখলেন পুরো সকালটা। একেবারে পণবন্দি করে রাখা যাকে বলে, ঠিক তেমন করে! আগে মৌলভী সাহেব কথা দিবেন যে তাঁর নাতনির সঙ্গে কবির বিয়ে দেবেন, তার পর ছাড়া পাবেন।
ইদ্রিস মিয়া কবিকে পছন্দই করেন, মনে মনে স্থিরও করে ফেলেছেন, নাতনি মমতাজের সঙ্গে কবি জসীমউদ্দীনের বিয়ে দেবেন। বাদ সেঁধেছেন স্বয়ং মেয়ের মা আর বাবা। বৃদ্ধ মৌলভীর মেয়েজামাই তখন ফরিদপুর জেলা হাইস্কুলের মাস্টার। মেয়ে থাকে শ্বশুরমশাইয়ের কাছে। ওখানেই বড় হওয়া মমতাজের।
কিন্তু জসীমউদ্দীনের মতো পাত্রকে জামাই করা মোহসেনউদ্দিন এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন।
শ্বশুরমশাইকে সাতপৃষ্ঠার চিঠি লিখলেন তিনি— “আপনি কি পাগল হইয়া গেলেন! এই লোকটা (জসীম উদ্দীন) পাগল। চরে ঘুরে বেড়ায়। গান গেয়ে বেড়ায়। ভাবের গান, আধ্যাত্মিক গান, মুর্শিদি গান। গানের মজলিশে সারারাত কান্নাকাটি করে মাটিতে গড়াগড়ি খায়। এইরকম ছেলের সাথে বিয়া দেবেন? তার চাইতে নাতিনকে পদ্মায় ফালাইয়া দেন।”
জামাইয়ের এই চিঠি পেয়ে হতভম্ব মৌলভী ঠিক করলেন জসীম উদ্দীনের উপর নজরদারি শুরু করবেন। অভিযোগ সত্য কি না নিজে যাচাই করবেন।
জসীমউদ্দীন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার লেকচারার। থাকেন নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের উত্তর দিকে হলুদরঙা একতলা বাড়িতে। ছেলেটা কেমন দেখার জন্য খুব সকালে উঠে শুরু করলেন ওই এলাকায় যাতায়াত।
একদিন জসীম উদ্দীন দেখে ফেললেন তাঁকে। ঘরে ডেকে এনে চা–নাস্তা খাইয়ে অনেক যত্নটত্ন করলেন।
তারপর বললেন, “আমার কাছে নাতিন বিয়া দিবেন কিনা, কথা দিয়া যাইতে হইব। নইলে আইজকা আপনাকে ছাড়ুম না।” শেষ পর্যন্ত বিয়ের কথা দিয়ে কবির হাত থেকে ‘মুক্তি’ পেলেন বৃদ্ধ মৌলভী।
জসীমউদ্দীনের সঙ্গে মমতাজের বয়সের ফারাক বছর কুড়ির। বাবা–মায়ের আপত্তির এটাও একটা কারণ। কিন্তু জসীমউদ্দীন যে নাছোড়!
তাঁর ধনুকভাঙা পণ, মমতাজকেই শাদি করবেন তিনি। তাঁর চোখের রেখায়, বুকের লেখায় শুধুই মমতাজ।