মার্কিন নির্বাচনকে টার্গেট ৩ দেশের হ্যাকারদের
মার্কিন নির্বাচনকে টার্গেট ৩ দেশের হ্যাকারদের - ছবি : সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পে ‘না’। জো বাইডেনে ‘হ্যাঁ’। নভেম্বর নির্বাচনে আপাতত এটাই চীনা হ্যাকারদের ‘অঘোষিত’ নীতি। ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থান নিয়েছে ইরানের হ্যাকাররা। রাশিয়া আবার জোর দিচ্ছে বাইডেন বিরোধী প্রচারে। নেট ময়দানে নেমে পড়েছে একাধিক গোষ্ঠী। রীতিমতো নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে হ্যাকাররা। নিত্যনতুন বেশকিছু পেজ থেকে শুরু হয়েছে ভুয়া প্রচার। গোটা বিষয়টিকে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পক্ষে ‘বড় বিপদ’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ন্যাশনাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের ডিরেক্টর উইলিয়াম ইভানিনা।
গত বৃহস্পতিবার এক সাইবার সিকিউরিটি সংস্থার আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘ভুয়ো প্রচারের মাধ্যমে কীভাবে প্রভাব খাটানো হয়, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে চট করে বোঝা অসম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুয়ো খবর ছড়ানো হয়। তা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
বিষয়টি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একাধিক পেজ। ভুয়া পোস্টও সরানোর কাজ চলছে। সংস্থার দাবি, এই নেটওয়ার্কের হ্যাকাররা ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করে নিজেদের পরিচয় ও লোকেশন গোপন রাখছে। ফেসবুকে থাকা এমন ১৫৫টি অ্যাকাউন্ট এখন বন্ধ। সাসপেন্ড করা হয়েছে ছ’টি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও। ফেসবুকের সাইবার সিকিউরিটি পলিসির প্রধান ন্যাথানিয়েল গ্লেইসার জানিয়েছেন, চীনের যে সমস্ত অ্যাকাউন্ট মার্কিন রাজনীতি নিয়ে পোস্ট করেছে, সেগুলো ভোটে বিদেশি হস্তক্ষেপ তকমা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
উইলিয়াম ইভানিনা জানিয়েছেন, মার্কিন ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে হ্যাকার গোষ্ঠীগুলো। দ্বিতীয়বার নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউস ট্রাম্প শাসনে থাকুক— না-পছন্দ চীনের। চায় না ইরানও। রাশিয়া আবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের বিপক্ষে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে কাজ করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এবারও তাকেই চাইছে মস্কো। ইতিমধ্যে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার কাজ শুরু করেছে রাশিয়ান হ্যাকাররা। ট্রাম্প অবশ্য ভোটারদের সামনে নিজেকে রাশিয়া-বিরোধী প্রমাণে ব্যস্ত। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, এই নির্বাচনে যে মানুষটিকে রাশিয়া জয়ী দেখতে চায় না, তাঁর নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প।’ পাশাপাশি, চীন নিয়ে বিডেনকে একহাত নেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। বলেন, ‘আমি হারলে চীন খুশি হবে। জো বিডেন জিতলে আমেরিকায় কর্তৃত্ব ফলাবে বেইজিং।’ ডেমোক্র্যাট বাইডেনকে রাজনীতির সবচেয়ে খারাপ প্রার্থী বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। শুক্রবার জর্জিয়ার এক সভায় কটাক্ষের সুরে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাইডেন জিতলে আমাকে হয়তো দেশও ছাড়তে হতে পারে।’
বিদেশি হ্যাকারদের হস্তক্ষেপ নিয়ে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান পারস্পরিক সমালোচনা চলছেই। তার মধ্যে সাইবার হানা রুখতে একাধিক সরকারি সংস্থাকে মাঠে নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যালায়েন্স ফর সিকিওরিং ডেমোক্রেসির ইলেকশন ইন্টিগ্রিটি সদস্য ডেভিড লেভিন। ফরেন প্রেস সেন্টার আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য, ভুয়া খবর ছড়িয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে রাশিয়া, চীন। এনিয়ে সচেতনতার কাজ চলছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থায় হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
আফ্রিকান আমেরিকানদের ভোটবিমুখ করতে সক্রিয় বাড়িয়েছে মস্কো। তা আটকানোর জন্য কাজ করছে এজেন্সিগুলো। ট্রাম্প অনুগামী পরিচয়ে বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গের ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে ট্যুইটার। ভুয়া খবর ছড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে ৩১টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে, জানিয়েছেন ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড্যারেন লিনভিল।
সূত্র : বর্তমান