ইন্দো-প্যাসিফিক জোট ও মার্কিন স্বপ্ন
ট্রাম্প ও ওবামা - ছবি সংগৃহীত
ইন্দো-প্যাসিফিক জোট গড়া আসলে একটা ফেইল্ড প্রজেক্ট, ২০১৬ সালেই ওবামার হাতে ‘এশিয়া পিভোট’ নামের এই প্রকল্পটা ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু এখন প্রথম আলোকে গল্পটা দিয়েছে এরকম- স্টিফেন বিগান বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরে আমাদের নিরাপত্তার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আর এটা আমি অস্বীকারও করতে চাই না। আমাদের নিরাপত্তাজনিত কিছু উদ্বেগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক দেশেরও উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ কারো কথা উল্লেখ করব না। যেমন হিমালয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গালওয়ান উপত্যকায় চ্যালেঞ্জ আছে। সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে জাপান সাগরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাইওয়ানে উত্তেজনা রয়েছে। হংকংয়ে ক্রমবর্ধমান দমন পীড়ন চলছে। তিব্বতের শিনজয়ানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ার জনগণের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে। এসব উত্তেজনা আর চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশকে সতর্ক করে তুলেছে।’
এখানে প্রথম বাক্যে ‘আমাদের’ লেখা, এই আমাদের বলতে কারা? কারণ, ওবামার সেই কালে এশিয়া-প্যাসিফিকের কোনো দেশই আমেরিকার নৌকায় ওঠেনি। তাতে অনেক দেশই আছে যারা হয়তো চীনের ওপর অসন্তুষ্ট, ক্ষুব্ধও এবং অনেক কিছুই। কিন্তু তা বলে আমেরিকার যুদ্ধ জোটে তারা কেউ উঠেইনি। তাহলে এটা আমেরিকার ‘আমাদের নিরাপত্তা’ চ্যালেঞ্জ হলো কেমনে? আমাদের মানে, তাহলে আমেরিকা একাই! এই মিথ্যাটা বলার দরকার কী? একালে কোয়াডের তিন দেশ ছাড়া আর কেউ তো আমেরিকার সাথে জোট করেনি? কাজেই এটা তো এবারো ফেল করবে না, এমন নতুন কিছু তো ঘটেনি। আর ভারত? সে যতটুকু যা করছে এর কারণ ভিন্ন। ভারত তা কেবল দেশের লোক আর মিডিয়ার মনোবল যেন চাঙ্গা থাকে সেজন্য করেছে।
এ মাসের ছয় তারিখে জাপানে যে কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়ে গেল এটা তো আসলে ভারতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত আগেভাগেই মাফ চেয়ে হোস্ট হতে অপারগতা জানায়। কারণ ভারতের অবস্থান হলো- একপা আগে দুইপা পিছে, এমন টলমলে। তাই একবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর প্রকাশ্যেই বলে ফেলেন যে, ভারত কোনো সামরিক বা নিরাপত্তা জোটে যাবে না। কারণ ভারত জোট-নিরপক্ষে সেই সোভিয়েত কোল্ড ওয়ারের আমল থেকে। এই নীতিতেই ভারত এখনো থাকবে। তার মানে হলো, যতটুকু অন্য দেশে গিয়ে কোয়াডের মিটিং-এ ভারত যোগ দিয়েছে সেটা লোক দেখানোর জন্য। আর খুব সম্ভবত প্রধানত চীনের চাপের মুখে নিজ পাবলিক ও মিডিয়ার মনোবল ঠিক রাখতে। তাই এবার একবার যদি ভারত কোয়াডের হোস্ট হয়ে যেত তবে যে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোকাস ভারতের তৈরি হত তাতে ভারত আর কোয়াডের সিরিয়াস ও সক্রিয় কেউ নয় বা সে জোট-নিরপেক্ষ- এটা এরপর দাবি করা খুবই কঠিন হয়ে যেত।
এতে হয়ত পাবলিকলি অনেক কিছুই ভারতকে মুখে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলতে হতো যা করতে ভারত প্রস্তুত নয়। এই বিড়ম্বনা ও সম্ভাব্য ‘বেইজ্জতি’ থেকে বাঁচতে বা এড়াতে সে আয়োজক হওয়া এড়িয়ে যায়।