৫ ডিভিশন করে সৈন্য মোতায়েন চীন-ভারতের
৫ ডিভিশন করে সৈন্য মোতায়েন চীন-ভারতের - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় মিডিয়া ১৬ অক্টোবর জানিয়েছে, নয়া দিল্লি ও বেইজিং লাদাখ থেকে পূর্ণাঙ্গ সামরিক প্রত্রাহারের জন্য আলাদা আলাদা প্রস্তাব বিনিময় করেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাব বিনিময়কে দুই পক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় সামরিক বাহিনী ও চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি চলতি বছরের মে মাস থেকে দুই দেশের মধ্যকার অচিহ্নিত সীমান্ত লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, উভয় পক্ষ নিজ নিজ এলাকায় ৫ ডিভিশন করে সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছৈ। সেইসাথে বিমান, ট্যাঙ্কসহ ভারী অস্ত্রও তারা মোতায়েন করেছে।
ভারতের গোপন স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে (এই বাহিনী জাতিগত তিব্বতিদের নিয় গঠিত) সাথে নিয়ে আগস্ট মাসের শেষ দিকে ভারত এলএসির বেশ কয়েকটি চূড়া দখল করে নিয়েছে। এর সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নজরদারি সক্ষমতা দেশটিকে প্রায়োগিক সুবিধা দিচ্ছে। খুবই সম্ভব যে ভারত এসব চূড়া থেকে প্রত্যাহারের বিনিময়ে চীনা বাহিনীকে তাদের এপ্রিলের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকবে।
এখন পর্যন্ত দুই দেশের সামরিক কমান্ডার ও মন্ত্রী পর্যায়ের যেসব আলোচনা হয়েছে, তাতে করে লাদাখ সঙ্কটের সমাধান হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ১৫ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আলোচনা চলছে। আমাদের ও চীনাদের মধ্যে গোপন কিছু হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রকাশ্যে বলার মতো তেমন কিছু নেই। তার এই মন্তব্য আশাবাদের সৃষ্টি করে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে, ৫ মাসেরও বেশি সময় আগে শুরু হওয়া লাদাখ অচলাবস্থার কারণ সম্পর্কে তার অবস্থান পরিষ্কার করে চীন। ১৩ অক্টোবর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান উল্লেখ করেন, বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ নিহিত রয়েছে সীমান্তে ভারতের অবকাঠামা নির্মাণ জোরদার করা এবং সামরিক মোতায়েন বৃদ্ধি করা। এর এক দিন আগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লাদাখ, অরুনাচল ও এলএসির বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি নতুন সেতু উদ্বোধন করেন। ভারতের এলএসি অবকাঠামো কার্যক্রম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ঝাও এ মন্তব্য করেন।
ঝাও আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেন, যা ভারতের দৃষ্টিতে বেশ সমস্যাপূর্ণ মনে হতে পারে। তা হলো, ভারতীয় পক্ষ অবৈধভাবে যে লাদাখ ইউনিয়ন টেরিটরি প্রতিষ্ঠা করেছে, চীন তাকে স্বীকৃতি দেয় না। গত বছরের আগস্ট মাসে জম্মু ও কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে একে দুটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পরিবর্তন করার পর থেকে চীন জোর দিয়ে বলছে যে তারা এই পুনঃবিন্যাসকে স্বীকার করে না। ভারত বরাবর বলে আসছে যে তাদের এই সিদ্ধান্তের ফলে এলএসিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। ভারত ও চীন উভয়েই পূর্ব লাদাখের আকসাই চীন দাবি করে। এলাকাটি অবশ্য চীনে দখলে রয়েছে।
চীনের দৃষ্টিতে বর্তমান উত্তেজনার মূলে যদি এলএসির কাছাকাছি এলাকায় ভারতের অবকাঠামো কার্যক্রম হয়ে থাকলেও তারা কিন্তু দাবি করছে না যে ভারত এলএসি অতিক্রম করেছে। বাস্তবতা হলো, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত সীমান্ত কানেকটিভিটির ওপর জোর দিয়েছে। মোদির সাবেক বৈদেশিক গোয়েন্দাপ্রধান, (১৮ জুন থেকে তিনি ভারতের ভূ-অবস্থানগত গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান) জুনে উল্লেখ করেছেন, এলএসিজুড়ে বর্ধিত কৌশলগত অবকাঠামো নির্মাণ চীনকে ভয়াবহ রকমের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।
সরকারি সূত্র একটি ভারতীয় মিডিয়াকে বলেছে, রাস্তা নির্মাণ কার্যক্রমের ফলেই মে মাসের প্রথম দিকে ভারত-চীন সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করে। আরেকটি সূত্র জানায়, দারবুক-শিয়ক-দৌলত বেগ অলি (ডিএসডিবিও) সব আবহাওয়ায় চলাচল উপযোগী ২৫৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কারণেই চীন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এই রাস্তাটি লাদাখের রাজধানী লেহকে এলএসসির খুব কাছে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ডিবিও এয়ারস্ট্রিপের সাথে সংযুক্ত করেছে।
অবশ্য লক্ষণীয় ব্যবধান থাকলেও চীনও কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় কানেকটিভিটির ওপর জোর দিয়েছে। বর্তমান সঙ্কট নিরসন হলেও ভারত তার উন্নততর কানেকটিভিটি নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখলে অনিবার্যভাবেই চীনের সাথে আরো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবে।
সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট